বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কর-জিডিপির এই হার শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পুরো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যেই সর্বনিম্ন।
মঙ্গলবার সিপিডি আয়োজিত ‘কর্পোরেট কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সংস্কার : এনবিআরের জন্য একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি জানান, এ তথ্য নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) এক প্রতিবেদন থেকে।
মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, “ওইসিডির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। কর-জিডিপির এই হার শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পুরো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যেই সর্বনিম্ন। এমনকি আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত আফগানিস্তানেরও নিচে।”
প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “ভারতের কর-জিডিপি অনুপাত ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ১২ দশমিক ৭ শতাংশ, নেপালের ২১ দশমিক ৫ শতাংশ।”
কর-জিডিপির এমন দুর্বল অবস্থায় বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণ (অর্থাৎ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসা) ঘটলে দেশের আর্থিক যোগান সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হলে বৈদেশিক ঋণ আমাদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। অর্থাৎ কর আহরণ বাড়ানো ছাড়া কোনও বিকল্প নেই।”
গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মোট রাজস্ব আহরণ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা কম।
গত অর্থ বছরের রাজস্ব আহরণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থ বছর ২০২৩-২৪ এ আহরণ হয়েছিল ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।
অনুষ্ঠানে রাজস্ব আহরণবান্ধব পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ তুলে ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন।
ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখন থেকে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আর নিরীক্ষা পরিচালনা করা হবে না। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বা অটোমেশন চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত ভ্যাট নিরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ব্যবসায়ীরা যেন কোনোভাবেই মনে না করেন, অহেতুক হয়রানি করার জন্য এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কাজ চলছে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আমরা একটি একক ভ্যাট হার নির্ধারণ করতে চাই। কিন্তু এতে ব্যবসায়ীরাই বাধা হয়ে দাঁড়ান। এখন ভ্যাট দিতে কারও কাছে যেতে হয় না, এক ক্লিকেই নিজের সিস্টেম থেকে ভ্যাট দেওয়া যায়।”
করছাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কর্মসংস্থান বাড়াতে দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আমরা করছাড় দিয়ে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। কিন্তু দেখা যায়, আট বছরের জন্য করছাড়ের কথা হলেও ৪০ বছর পর্যন্ত সেই ছাড় চলতে থাকে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা আছে, সেটা স্বীকার করেই আমাদের এগোতে হবে।”