Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন এক্সএফজি কতটা উদ্বেগের

mask-to-protect-coronavirus
[publishpress_authors_box]

তিন দিন আগে যখন সরকারের পক্ষ থেকে কোভিড নিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হলো, তখনই উদ্বেগ ছড়ায়। এরপর আইসিসিডিডিআর,বি যখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি সংক্রমণের খবর জানাল, তাতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে অনেকের মনে- তবে কি মহামারি আবার ফিরছে?

২০১৯ সালে চীনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরের বছরই মহামারি বাঁধিয়ে দেয়। এ্ই মহামারি বিশ্ববাসীকে অভূতপূর্ব এক সঙ্কেটের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। এই পর্যন্ত ৭০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই মহামারি; আক্রান্ত করেছে ৭০ কোটির বেশি মানুষকে।

টিকাসহ প্রতিরোধের লড়াইয়ে দুই বছর আগে মহামারির তীব্রতা স্তিমিত হয়ে এলেও সম্প্রতি করোনাভাইরাসের নতুন কিছু ধরন দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে।

এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) থেকে তথ্য আসে, এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন একজন। কিন্তু মে মাসের শেষ সপ্তাহে এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে।

আইসিডিডিআর,বির গবেষকরা বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন শনাক্তের কথাও জানান। তার নাম এক্সএফজি। এর পাশাপাশি এক্সএফসি ধরনটি শনাক্তের কথাও জানায়। দুটোই করোনাভাইরাসের শক্তিশালী ধরন অমিক্রনের জেএন-১ ভ্যারিয়েন্টের উপধরন।

এরপর গত ৬ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক সতর্কবার্তায় বলে, “কোভিড ১৯ সংক্রমণ হারের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সকলকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

বাংলাদেশে নতুন ধরনের পাশাপাশি ভারতেও এনবি.১.৮.১ নামে একটি নতুন ধরনের বিস্তার দেখা যাচ্ছে। ডব্লিউএইচও বলছে, এনবি.১.৮.১ ধরন এখন ক্রমেই ছড়াচ্ছে। এর সংক্রমণের হারও বেশি।

তবে করোনাভাইরাসের আগের ধরনগুলোর চেয়ে নতুন এই ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি নয় বলে ডব্লিউএইচও আশ্বস্ত করলেও মানুষের উদ্বেগ কাটছে না।

কোভিড-১৯ কতটা ছড়াচ্ছে

নতুন ধরনগুলোর সংক্রমণের হার দেখে গবেষকরা কোভিড আবার তীব্র হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। গত কয়েক সপ্তাহে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ভালো সংখ্যক কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এনবি.১.৮.১, এলফ.৭ এর পর এক্সএফজির সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

নতুন ধরনগুলো কতটা সংক্রামক

প্রাথমিক তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, নতুন ধরনগুলো আগের ধরনগুলোর চেয়ে বেশি সংক্রামক। এনবি.১.৮.১, এলফ.৭ এর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা দেখা যাচ্ছে। তবে এক্সএফজির বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা সবে শুরু হয়েছে। তবে নতুন ধরনগুলো পরিস্থিতি যে জটিল করে তুলতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে মোটামুটি একমত গবেষকরা।  

কতটা উদ্বেগের

দেখা যাচ্ছে, রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সংক্রমণই এখনও মৃদু থাকছে এবং হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি। এটা ইঙ্গিত করে যে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে, যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন, কিন্তু নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন নেই।

গবেষকরা বলছেন, সংক্রমণ বাড়লেই যে সবাই গুরুতর অসুস্থ হবে, তা মনে করার কারণ নেই। নতুন ধরনগুলো সহজে ছড়িয়ে পড়ছে ঠিক, তবে গুরুতর অসুস্থতা এখনও সৃষ্টি করছে না।

তবে স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তি, বয়স্ক ও শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকিতে থাকে বলে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিমেষজ্ঞরা।

উপসর্গ কী

নতুন ধরনগুলোর ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীদের স্বরভঙ্গ বা কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন গবেষকরা। আগে স্বাদ ও গন্ধ টের না পাওয়াটা ছিল প্রধান উপসর্গ। এবারের রোগীরা শুষ্ক বা অস্বস্তিকর কাশির সঙ্গে গলা ব্যথা এবং স্বরভঙ্গের কথা বলছেন। ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা স্বরভঙ্গের উপসর্গযুক্ত রোগী বেশি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

বর্ষা মৌসুমে ফ্লুর মতো শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতাও সাধারণ রোগ হয়ে দাঁড়ায় বলে কোভিড সংক্রমণকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা স্বরভঙ্গ, ডায়রিয়া বা ক্লান্তি দেখা দিলে পরীক্ষা পরামর্শ দিচ্ছেন।

টিকা কতটা কার্যকর

কোভিড মহামারি ঠেকানোর লড়াইয়ে বড় হাতিয়ার টিকা। বেশ কয়েকটি টিকা আবিষ্কৃত হওয়ার পর বিশ্বের মানুষের বড় অংশই টিকা নিয়েছে। গবেষকরা বলছেন, ওমিক্রন ধরন মোকাবেলাকে লক্ষ্য ধরে যে টিকাগুলো রয়েছে, সেগুলো নতুন ধরন মোকাবেলায় কার্যকর হতে পারে। তাই চিকিৎসকরা সবাইকে টিকায় সুরক্ষিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন।

কী করা উচিৎ

ভয় না পেয়ে কোভিড বিধি মেনে চলার ওপরই জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন জনসমাগস্থল এড়িয়ে চলতে, গেলেও মাস্ক ব্যবহার করতে। টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বরভঙ্গ, শুষ্ক কাশি, হালকা জ্বর, ডায়রিয়া বা গলায় অস্বস্তি হলে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা; আক্রান্ত বক্তির অক্সিজেনের মাত্রার দিকে নজর রাখতে বলেছেন তারা।

তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত