Beta
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ভারতে পড়াশোনা করা ‍সুশীলা হচ্ছেন নেপালের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান

নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি।
নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি।
[publishpress_authors_box]

কে পি শর্মা অলির পদত্যাগের পর অস্থির নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে চাইছে বিক্ষোভরত তরুণ প্রজন্ম।

নেপালের প্রধান বিচারপতি পদে প্রথম নারী সুশীলার পড়াশোনার সূত্রে ভারতের সঙ্গে রয়েছে গভীর সংযোগ। তিনি পড়াশোনা করেছেন উত্তর প্রদেশের বারানসি হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এদিকে নেপালের মাওবাদী কমিউনিস্ট নেতা, দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল প্রচণ্ড জেন জিদের বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছেন। বিক্ষোভ দমনে ওলি সরকারের বলপ্রয়োগ ও সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।

নেপালি কমিউনিস্ট পার্টির (সংযুক্ত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) নেতৃত্বাধীন সরকার গত বৃহস্পতিবার ফেইসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া বন্ধ করে দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তরুণরা।

তাদের এই বিক্ষোভ জেন জি বিক্ষোভ নামে পরিচিতি পায়। বিক্ষোভ দমনে সরকার কঠোর হলে সোমবার কাঠমান্ডুতে ব্যাপক সহিংসতায় ১৯ জন নিহত হয়।

সরকার কারফিউ জারি করে সেনা নামালেও বিক্ষোভ চলতে থাকে। মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন, মন্ত্রী-রাজনীতিকদের বাড়িতে আগুন দেওয়া শুরু করলে ওলি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। জনরোষ থেকে বাঁচাতে হেলিকপ্টারে করে ওলিসহ মন্ত্রীদের রাজধানী থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়

এরপর সেনাবাহিনী কর্তৃত্ব নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও নেপাল এখনও শান্ত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল এবং জেন জির প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসছেন।

কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, বিক্ষোভকারী জেন জিদের প্রতিনিধিরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে সুশীলা কার্কিকে মনোনীত করেছেন।

একজন প্রতিনিধি বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য তাদের একমাত্র পছন্দ সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি।

জেন জি প্রতিনিধিরা প্রথমে সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগডেলের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তারপর প্রেসিডেন্টের দপ্তরে হবে চূড়ান্ত আলোচনা।

আলোচনায় জেন জিদের পছন্দই স্বীকৃতি পাবে বলে দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন।

কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহও সরকার প্রধান হিসাবে কার্কিকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

নেপালে জেন জিদের এই বিক্ষোভ পতন ঘটিয়েছে সরকারের।

সুশীলা কার্কির জন্ম ১৯৫২ সালের ৭ জুন নেপালের বিরাটনগরে। নেপালে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারতের বারানসিতে যান।

১৯৭৫ সালে বারানসি হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন সুশীলা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং জনপ্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা এই সময়ে তিন বছর তিনি বারানসি হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকতেন।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই নেপালি কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য দুর্গা প্রসাদ সুবেদীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে এবং পরে তাকে বিয়ে করেন সুশীলা।

বিএইচইউ’র সতীর্থরা সুশীলাকে একজন শান্ত ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থী হিসাবে মনে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির তখনকার ছাত্র সংসদের সভাপতি অনিল শ্রীবাস্তব বলেন, “সুশীলা হোস্টেল থেকে বিভাগে যেতেন এবং বিভাগ থেকে হোস্টেলে ফিরতেন। লাইব্রেরি ছাড়া অন্য কোথাও তাকে খুব কমই দেখা যেত। তিনি রাজনৈতিক কার্যক্রমেও অংশ নিতেন না।”

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে সুশীলা কার্কি নিজের বারানসি জীবনের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, “আমার মনে আছে শিক্ষকদের কথা, বন্ধুদের কথা, যাদের অনেকে এখন বেঁচে নেই। মনে আছে গঙ্গা নদীর কথা, গঙ্গার পাশে হোস্টেলে গরমের সময় আমরা ছাদে ঘুমাতাম।”

বিএইচইউতে পিএইচডি করার, শিক্ষকতা করার সুযোগ পেয়েও করা হয়নি সুশীলার।

তিনি বলেন, “হয়ত আমার ললাট লিখন ছিল ভিন্ন। আমি মনে করি, আমি একজন বিচারক হওয়ার জন্যই জন্ম নিয়েছিলাম এবং সেই কারণেই আমি সেখানে আমার পিএইচডি শেষ করতে পারিনি।”

নেপালে সুশীলা কার্কি দুর্নীতি এবং বিচার বিভাগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঠেকাতে নির্ভীক অবস্থানের জন্য পরিচিত।

২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনের সময় মাওবাদী দল এবং নেপালি কংগ্রেস তাকে অভিশংসনে পার্লামেন্টে প্রস্তাব এনেছিল। কিন্তু জনগণের তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশের পর সেই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হয়।

২০১৭ সালে বিচারাঙ্গন থেকে অবসরে যান সুশীলা। অবসরে লেখালেখিতে সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তার দুটি বই এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমটি আত্মবৈনিক গ্রন্থ ‘নাইয়া’, দ্বিতীয়টি উপন্যাস ‘কারা’।

তথ্যসূত্র : কাঠমাণ্ডু পোস্ট, নিউজ এইটিন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত