যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ক্ষমতার প্রশ্নে এক অদ্ভুত মোড়ে এসে দাঁড়ান বৃহস্পতিবার। এত ক্ষমতা থাকার পরেও একটা বিল পাস করাতে তাকে টানা ২০ ঘণ্টা লড়াই করতে হয়েছে রিপাবলিকান নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে। শেষমেষ তিনি তার বহু কাঙ্ক্ষিত ‘বিগ বিউটিফুল’ বিলটি পাস করাতে পেরেছেন।
বিলটি পাস করানো মোটেও সহজ ছিল না ট্রাম্পের জন্য। পুরো প্রক্রিয়ায় রিপাবলিকানদের সমর্থন আদায়ে বহুবার তাকে ফোনে কথা বলতে হয়েছে। তার বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ বিলটির প্রতি সমর্থন আদায়ে কখনও হুমকি, কখনও আশ্বাস দিতে হয়েছে তাকে।
হুমকি, ধমকি ও আশ্বাসেও কাজ হচ্ছিল না। অনেক চেষ্টার পরেও বিলের পক্ষে হাউস অব কংগ্রেসে ধীর গতির ভোট প্রক্রিয়ার দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে ট্রাম্প কিছুটা বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। রাত ১২টার দিকে বিলের ভোট কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল।
তখন ট্রাম্প সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, “রিপাবলিকানরা কী জন্য অপেক্ষা করছে??? কী প্রমাণ করতে চাইছো??? মাগাতে খুশি না, আর এতে তোমরা ভোট হারাচ্ছো!!!”
মূলত ওই পোস্ট দেওয়ার পরেই ধীরে ধীরে বরফ গলতে থাকে। টানা ১৪ ঘণ্টা পর অবশেষে বিলটি পাস হয়। মাত্র দুজন রিপাবলিকান এতে ভিন্নমত পোষণ করেন।
সিএনএন জানিয়েছে, শুক্রবার বিকালে হোয়াইট হাউসে এক বড় অনুষ্ঠানে বিলটিতে স্বাক্ষর করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অনুষ্ঠান থেকে আকাশে ওড়ানো হবে সেই বি-২ বোমারু বিমান, যেগুলো গত মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বাংকার বাস্টার বোমা ফেলেছিল।
অনেকের মতে, গত কয়েকটি দিন ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও মোড় ঘোরানোর মত। দ্বিতীয় মেয়াদের মাত্র ছয় মাসের মাথায় এখন তিনি তার রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে রয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের এক রায় প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার আরও বিস্তৃত ব্যবহারের পথ খুলে দিয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় তার হামলা গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন গতি তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া গত সপ্তাহের ন্যাটো সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে নতুন প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প এমন এক অর্থনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন যা এখনও নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করে চলেছে। শুল্ক আরোপের হুমকিতে বাজারে উদ্বেগ আছে সত্যি। তবে তার কড়া অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঐতিহাসিকভাবে কমে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিলটি প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এয়ার ফোর্স ওয়ানের বাইরে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি এখন আমার আরও ক্ষমতা আছে, সত্যিই তাই।”
ট্রাম্প বিরোধীরা অবশ্য ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন পুরো বিষয়টি। তাদের মতে, রিপাবলিকানদের ওপর ট্রাম্পের এই দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ এবং বিদেশি মিত্রদের ওপর তার চাপ প্রয়োগ তাকে এক ধরনের অনিয়ন্ত্রিত স্বৈরশাসক হিসেবে উপস্থাপন করে।
অন্যদিকে তার সমর্থকদের কাছে গত দুই সপ্তাহ ছিল এক উত্তেজনাকর বিজয়ের যাত্রা।
আরকানসাসের সাবেক গভর্নর আসা হাচিনসন গত বছর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পদের লড়াই করেছিলেন। তিনি বলেন, “তিনি (ট্রাম্প) এবার তার এজেন্ডাকে প্রথম মেয়াদের চেয়েও বেশি বাস্তবায়ন করছে। এখন তিনি সরকার পরিচালনার কাঠামোর ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, দ্বিতীয় মেয়াদে একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প এখন জানেন কীভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করতে হয়, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়কে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়। আর সুপ্রিম কোর্টও এবার তার পক্ষে রয়েছে। এখন তিনি এমন এক ক্ষমতাধর অবস্থানে আছে, যেটা সবাই অনুভব করছে। ট্রাম্প নিজেও জানেন, এবার তার হাতে সময় কম — মাত্র চার বছর।”
রিপাবলিকানদের অনেকে অবশ্য ট্রাম্পকে নিয়ে সন্দিহান। কারণ আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে এই বিল তাদের জন্য রাজনৈতিক বোঝা হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
তবে ট্রাম্পের এই বিল নিয়ে সমর্থক ও বিরোধী উভয়পক্ষই একমত যে, এই উদ্যোগ এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেবে।
মূলত বিলটি পাস হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরাসরি তৎপরতায়। কারণ বিলটির গুরুত্ব তিনি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিলেন। তাই রাতেও তিনি আইনপ্রণেতাদের ফোন করে রাজি করানোর কাজ চালিয়ে গেছেন। হোয়াইট হাউসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “এই আইন পাশের পেছনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছিলেন সবসময়, সর্বত্র। তিনিই ছিলেন এই প্রক্রিয়ার সর্বব্যাপী শক্তি।
“মার-আ-লাগোতে এক ডিনারের পর আরেক ডিনার, এক বৈঠকের পর আরেক বৈঠক। এই সম্পর্কগুলো, আর প্রেসিডেন্ট যে সম্পর্ককে কতটা গুরুত্ব দেন, সেটাই আমাদের শেষ পর্যন্ত এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।” তিনি আরও জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিল নিয়ে কতবার বৈঠক করেছেন, তার হিসেবই তারা হারিয়ে ফেলেছেন।
এদিকে ডেমোক্র্যাটরা ইতোমধ্যে পরিকল্পনা শুরু করেছে, কীভাবে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের নতুন আইনে মেডিকেইড প্রোগ্রামে আনা পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। তারা দেশের বিভিন্ন নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনাগুলো তুলে ধরে সমালোচনা করছেন। এই সমালোচনার প্রতিফলন ঘটে বৃহস্পতিবার বিল পাসের দিন প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিজের দেওয়া দীর্ঘ ভাষণে।
তাকে বলতে শোনা যায়, “নেতৃত্ব মানে সাহস, বিশ্বাস আর সহানুভূতি। অথচ এই প্রশাসন ও তাদের রিপাবলিকান সহযোগীদের কাছ থেকে আমরা যা দেখেছি তা হলো নিষ্ঠুরতা, বিশৃঙ্খলা আর দুর্নীতি।” জেফ্রিজের এই ভাষণ ছিল আধুনিক ইতিহাসে কংগ্রেসে সবচেয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা।
একাধিক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র্রের জনগণের বড় একটি অংশ বিলটি নিয়ে সন্দিহান। ফলে সামনের মাসগুলোতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য বড় কাজ হবে, এই বিল নিয়ে জনমত পরিবর্তন করা।
বিলটি যেভাবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবে, তাতে ট্রাম্প কিছুটা সুবিধা পেতে পারেন। বিল অনুযায়ী কর হ্রাসের বিষয়টি অদূর ভবিষ্যতেই কার্যকর হবে। কিন্তু মেডিকেইড ও খাদ্য সহায়তা প্রোগ্রামের বড় পরিবর্তনগুলো কার্যকর হবে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর।
তবু সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে বড় আইন পাস করিয়েছেন এবং ভেবেছেন এটি তাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য গড়ে দেবে, এমন প্রেসিডেন্টরা পরবর্তীতে আফসোস করেছেন। কারণ তারা পরে বুঝতে পারেন যে, তারা সাধারণ জনগণের কাছে সেই বিলের পক্ষে যথেষ্ট প্রচার চালাননি। আর এর খেসারত দিতে হয়েছে নির্বাচনে।
গত সপ্তাহে বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা নেট বেশি কাটা হলে রিপাবলিকানদের রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়তে হতে পারে।
গত মঙ্গলবার সিএনএনকে তিনি বলেন, “আমি খুব বেশি কাটছাঁট করতে চাই না। আমি কাটছাঁট পছন্দ করি না।”
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানান, ব্যক্তিগত আলোচনায় ট্রাম্প রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, মেডিকেইড, মেডিকেয়ার ও সোশাল সিকিউরিটি পরিবর্তন করার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে ‘পরাজয় ডেকে আনতে পারে’। তাই হোয়াইট হাউস আইনপ্রণেতাদের বোঝাতে চেয়েছে, মেডিকেইডে পরিবর্তনের বাস্তব প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর দ্রুত পড়বে না। রাজ্য সরকার ও হাসপাতালগুলোকে সময় দেওয়া হবে এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে। একইসঙ্গে আইনপ্রণেতাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি রাজ্য ঠিক কীভাবে মেডিকেইড ফান্ড ব্যবহার করবে।
২০১৭ সালে ওবামাকেয়ার বাতিলের ব্যর্থ চেষ্টা থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার ট্রাম্পের টিম রিপাবলিকানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। তারা চেষ্টা করেছেন আরও স্পষ্টভাবে বোঝাতে, কেন এই বিল কার্যকর হবে।
তবু ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য ছিল রিপাবলিকানদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের চিন্তা না করে তার নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। আগামী বছরের নির্বাচনে কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ তিনি পাশে সরিয়ে রেখেছেন। রিপাবলিকানদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছেন কখনও মিষ্টি ভাষায়, কখনও রাজনৈতিক প্রতিশোধের হুমকি দিয়ে।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেছেন, বিলটি নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের প্রচার বেশ কার্যকর হয়েছে। তবে তারা বলেছেন, রিপাবলিকানদের লক্ষ্য ছিল আগে বিলটি পাস করানো। প্রচারের কাজ এখন শুরু হবে।
এক কর্মকর্তা বলেন, “এখন আমাদের কাজ হলো ব্যাখ্যা করা—বিলটি কীভাবে আমাদের ভোটারদের উপকারে আসবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, একবার এই বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছালে বিল নিয়ে জনমতও বদলাবে।”
শুরু থেকেই ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠরা এই বিলকে দলের প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষার মতো করে তুলেছিলেন। গত সপ্তাহে একটি আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে রিপাবলিকান সেনেটরদের জানিয়ে দেওয়া হয়, বিল পাসে ব্যর্থতা মানে ‘চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা’।
বিলের বিরোধিতাকারী রিপাবলিকানদের ট্রাম্প কঠোরভাবে মোকাবিলা করেছেন। সেনেটর থম টিলিস ও কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি যখন জানান, তারা বিলের বিপক্ষে ভোট দেবেন, তখন ট্রাম্প হুমকি দেন, তাদের বিরুদ্ধে তিনি প্রাইমারি চ্যালেঞ্জারদের সমর্থন দেবেন।
শেষ পর্যন্ত টিলিস ঘোষণা দেন, তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন। ট্রাম্পের আনুগত্য পরীক্ষায় আর অংশ নেবেন না। পরে সেনেটে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ট্রাম্পকে বিলটির প্রকৃত প্রভাব সম্পর্কে ভুল ধারণা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এই বিল ট্রাম্প যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা ভাঙবে। আর এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।”
বুধবার ট্রাম্পের কৌশলে পরিবর্তন আসে। তিনি হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের আতিথেয়তা করেন। কেবিনেট রুম এবং ওভাল অফিসের বৈঠকগুলোতে ট্রাম্প ছিলেন বেশ খোলামেলা। তিনি নিজ হাতে নাম লেখা প্লেসকার্ডে স্বাক্ষর করেন, অতিথিদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং তাদের টেলিভিশনে উপস্থিতি নিয়ে প্রশংসাও করেছেন। এসময় তিনি অতিথিদের স্মারক উপহার দেওয়া ছাড়াও ওভাল অফিস ঘুরিয়ে দেখান।
তবে পাশাপাশি ট্রাম্প খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, কংগ্রেসের দুই কক্ষের মধ্যে দীর্ঘ সপ্তাহজুড়ে আলোচনা-সমঝোতার পর আর কোনও পরিবর্তন এই বিলে আনা যাবে না।
প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা স্টিভ স্কালিস বৃহস্পতিবার ক্যাপিটল হিলে বলেন, “তিনি সবাইকে একটি খুব সরল বার্তা দিয়েছেন। এই বিল নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এখন আর কোনও পরিবর্তন আনা যাবে না। সে সময় শেষ।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এয়ার ফোর্স ওয়ানের বাইরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কারও সঙ্গে কোনও লেনদেন করিনি। আমি শুধু বলেছি, এই বিল কতটা ভালো, সেটাই আলোচনা করেছি।”
টেনেসির কংগ্রেসম্যান টিম বারচেট পরে একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, “প্রেসিডেন্ট দারুণ ছিলেন, যেমন তিনি সবসময়ই থাকেন। তথ্যসমৃদ্ধ, হাস্যরসপূর্ণ। তিনি আমাকে বললেন, টিভিতে আমাকে দেখতে ভালো লাগে—সেটা বেশ মজার ছিল।”
তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন ক্যাপিটলে আইনপ্রণেতাদের মধ্যে বিতর্ক চলছিল, তখন এক সূত্র জানায়, রক্ষণশীল সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় এটা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তারা বিল আটকে রাখলে প্রাইমারিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী আনা হবে। এই হুমকিই কিছু সদস্যকে হ্যাঁ ভোট দিতে বাধ্য করে।
ওই সূত্র বলেন, “প্রতিনিধি পরিষদের প্রাথমিক নির্বাচনে যেকোনও প্রার্থীর ওপর ট্রাম্পের প্রভাব গত কয়েক দশকের যেকোনো রাজনীতিকের চেয়েও বেশি, হয়তো সবচেয়ে বেশি। কাজেই যারা কট্টর ডানপন্থী এলাকা থেকে নির্বাচিত, তাদের অনেককে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ট্রাম্প তার এজেন্ডার বিরুদ্ধে কাউকে সহ্য করবেন না, সেটাও পরিষ্কার।”
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা দাবি করেন, সরাসরি কোনও প্রাইমারি হুমকি দেওয়া হয়নি। তবে স্বীকার করেন, এই হুমকির সম্ভাবনা সবসময় আলোচনার পটভূমিতে বিরাজ করেছে।
হাউস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের সময় উপস্থিত একজন জানান, ট্রাম্প ব্যাখ্যা করেছেন কেন এই বিল রিপাবলিকান এজেন্ডার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যুক্তি দেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাজেট ঘাটতির আশঙ্কাকে ছাপিয়ে যাবে। এই যুক্তি তিনি ও তার দল জনসম্মুখেও দিয়ে যাচ্ছেন।
সাউথ ক্যারোলাইনার কংগ্রেসম্যান রাল্ফ নরম্যান শুরুতে বিলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। পরে মত বদলে সমর্থন দেন। তিনি সিএনবিসিতে বলেন, “তিনি চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে বিলটিকে আরও ভালো করা যায়, কিভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে কিছু পরিবর্তন আনা সম্ভব।”
কিছু রিপাবলিকান সদস্য প্রকাশ্যে বলেছিলেন, জ্বালানি খাতে কিছু করছাড় ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার বিষয়টি সেনেট অত্যন্ত ধীর গতিতে করছে। নরম্যান বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউসের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পাওয়াটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটাই ছিল শেষ মুহূর্তের আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয়।
নরম্যান বলেন, “রাত গভীর পর্যন্ত আমরা আলোচনা করছিলাম, কীভাবে জো বাইডেনের চালু করা এই করছাড়গুলো পরিবর্তন বা বিলুপ্ত করা যায়।”
বৃহস্পতিবার ভোররাতে রিপাবলিকানদের একাংশ যখন দ্বিধায় ছিলেন, তখন ট্রাম্প সোশাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি লিখেন, “রিপাবলিকানদের জন্য এটা হওয়া উচিত ছিল খুব সহজ একটি ‘হ্যাঁ’ ভোট। হাস্যকর!”
এরপর কয়েকটি ফোনকলের মাধ্যমে সেই বিরোধিতাকারীরাও রাজি হয়ে যান। আর ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত বিলটি পাস হওয়ার পথে এগিয়ে যায়।
তথ্যসূত্র : বিবিসি ও সিএনএন