Beta
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনও ঋণ ছাড় করবে না আইএমএফ

ওয়াশিংটনে আইএমএফের সদরদপ্তর।
ওয়াশিংটনে আইএমএফের সদরদপ্তর।
[publishpress_authors_box]

নির্বাচিত সরকার ছাড়া আলোচিত ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের বাকি কিস্তি ছাড় করবে না আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চলমান এই ঋণের ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় করার কথা ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথমার্ধে।

কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা আইএমএফ এর ঋণের শর্ত মানবে কিনা, সেই নিশ্চয়তা না পেয়ে কিস্তির অর্থ ছাড় করতে রাজি নয় সংস্থাটি।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল। কয়েক দফা আলোচনা শেষে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে বৈশ্বিক আর্থিক সংস্থাটি।

গত বছরের আগস্টে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্থাটির কাছ থেকে আরও ৮০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়।

গত জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার একসঙ্গে ছাড় করে আইএমএফ। সেইসঙ্গে সরকারের অনুরোধে মূল ঋণের পরিমাণ ৮০ কোটি ডলার বাড়িয়ে ৫৫০ কোটি (৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার করা হয়। আট কিস্তিতে এই অর্থ পাওয়া কথা রয়েছে।

এ পর্যন্ত আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচি পাঁচ কিস্তিতে ৩৬৪ কোটি ৭০ লাখ (৩.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে প্রথম তিন কিস্তির ২৩১ কোটি (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার পাওয়া গিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে।

ওয়াশিংটনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “পরবর্তী কিস্তি মার্চ বা এপ্রিলে আসতে পারে। তবে এতে বাংলাদেশের কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, বরং এটি ইতিবাচকই হবে।”

“আইএমএফ আপাতত ষষ্ঠ কিস্তি স্থগিত রেখে ষষ্ঠ ও সপ্তম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়তে চায়, যার পরিমাণ হবে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার। এর আগেও তৃতীয় কিস্তির পূর্বশর্ত পূরণে বিলম্বের কারণে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় করেছিল আইএমএফ।”

সালেহউদ্দিন বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে ষষ্ঠ কিস্তির পর্যালোচনা সম্পন্ন নাও হতে পারে। কিস্তি ছাড়ের জন্য রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়া প্রায় সব শর্তই পূরণ হয়েছে। তবে দাতা সংস্থাগুলো নিশ্চিত হতে চায় যে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলো নতুন রাজনৈতিক সরকারও বজায় রাখবে। আমরা আইএমএফকে আশ্বস্ত করেছি যে, পরবর্তীতে যে সরকারই আসুক না কেন, সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”

“আগামী ২৯ অক্টোবর আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় যাবে। তারা দুই সপ্তাহ অবস্থান করবে। প্রতিনিধি দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে; পর্যালোচনা করবে। গত জুন পর্যন্ত অগ্রগতি মূল্যায়নের পর কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে আইএমএফ,” বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সাধারণত প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফের দেওয়া শর্তগুলোর কতটুকু সরকার বাস্তবায়ন করেছে, তা যাচাই করতে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসে পর্যালোচনা (রিভিউ) করে থাকে। প্রতিনিধিদলটি ওয়াশিংটনে ফিরে সংস্থাটির সদরদপ্তরে পর্যালোচনা প্রতিবেদন জমা দেয়। তার ওপর ভিত্তি করে ঋণ অনুমোদন করে থাকে আইএমএফ।

ষষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার আগে পূর্ব নির্ধারিত সময় সূচি অনুযায়ী ২৯ অক্টোবর সেই প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় আসছে। মিশনটি ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রতিবেদন দেবে। এর ওপর নির্ভর করবে কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি।

ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের পূর্বশর্ত হিসেবে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে শুধু রাজস্ব আহরণের শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাকি সবকটি পূরণ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সব শর্ত পূরণ করলেও সময়মতো কিস্তির অর্থ নাও পেতে পারি। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সরকার ঋণের শর্তগুলো মানবে কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় করবে।”

নতুন এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের সমস্যা হবে কিনা- জানতে চাইলে গভর্নর সাংবাদিকদের বলেন, “বর্তমানে আমাদের কোনও আর্থিক চাপ নেই। তাই এটি কোনও সমস্যা নয়। তাছাড়া সবসময় আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে থাকতে হবে এমনটি নয়।

“তবে তাদের পলিসি সাপোর্টের দরকার রয়েছে। আমরা যা চাই তা হলো- নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব, যাতে আমাদের নীতিগত অঙ্গীকার সঠিক পথে থাকে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আইএমএফের কাছ থেকে ষষ্ঠ কিস্তি বাবদ ৮০ কোটি ডলারের কিছু বেশি অর্থ পাওয়ার কথা। এটি ছাড় না করলেও দেশের বিদেশি মুদ্রার স্থিতিশীলতায় কোনও সমস্যা হবে না। কেননা, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে (তিন মাস, জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিটেন্স বেড়েছে ১৬ শতাংশ।

রপ্তানি আয় পরপর দুই মাসে প্রবৃদ্ধি না হলেও এই তিন মাসের হিসাবে সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়েছে। আমদানি ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যে কারণে ডলারের সংকট নেই। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বাড়ছেই।

বুধবার দিন শেষে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল প্রায় ২৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস বা মোট হিসাবে ছিল ৩২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট-বিওপি) উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এই অবস্থায় আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় না করলেও কোনও সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত