ভারত-পাকিস্তান বিষয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নেওয়া হবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি বলেছেন, ভারত কখনও কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নেয়নি, এখন নিচ্ছে না আর ভবিষ্যতেও নেবে না।
এবিষয়ে পুরোপুরি রাজনৈতিক ঐক্যমত্য আছে বলেও ফোনালাপে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন তিনি। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।
কানাডায় জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করার কথা ছিল মোদী ও ট্রাম্পের। কিন্তু ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই দ্রুত কানাডা থেকে ওয়াশিংটন ফিরে যান ট্রাম্প। তাতে ওই বৈঠক বাতিল হয়ে যায়।
এরপর মঙ্গলবার ফোনে কথা বলেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। ৩৫ মিনিট ধরে চলা ওই ফোনালাপে ট্রাম্পকে এসব কথা বলেন মোদী। আলোচনায় উঠে আসে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, অপারেশন সিঁদুরের কথা। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হয় দুজনের মধ্যে। আলোচনায় ট্রাম্প ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার সমর্থন ব্যক্ত করেন।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২৬ জন পর্যটক নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। হামলার ঘটনায় পাকিস্তান সরকার জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের ভেতরে ৯ জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
ওই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর হামলা শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এরপর উভয়পক্ষ একে অপরকে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। এরপর ১১ মে যুদ্ধবিরতিতে যায় দুই দেশ।
ভারত সরকার বারবার বলে আসছে, ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধানরা ‘সরাসরি’ আলোচনা করে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায়। তবে যুদ্ধবিরতির প্রথম তথ্য আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ১০ মে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পকে এমন স্পষ্ট বার্তা দিলেন মোদী। বিক্রম মিশ্রি বলেন, “ট্রাম্পকে তিনি বলেছেন, ভারত কখনও কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নেয়নি, এখন নিচ্ছে না আর ভবিষ্যতেও নেবে না।
“নরেন্দ্র মোদী আরও বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক স্তরে সরাসরি আলোচনা হয়েছে এবং তা পাকিস্তানের দিক থেকেই শুরু হয়েছিল।”
পহেলগাম হামলার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মোদীকে ফোন করে সমবেদনা জানান এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে থাকার বার্তা দেন। ওই ফোনালাপের পর ১৭ জুন দুই নেতা প্রথম সরাসরি আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, “মোদী ট্রাম্পকে অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেছেন, ২২ এপ্রিলের পর ভারত সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান দৃঢ়।”
ফোনালাপে মোদী ট্রাম্পকে ৬ ও ৭ মে থেকে শুরু করে ১০ মে রাত পরযন্ত হওয়া ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া সব ঘটনাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। সেসময় মোদী বলেন, “এরপর পাকিস্তান ভারতকে হামলা বন্ধ করার অনুরোধ করে।”
বিক্রম মিশ্রি জানান, ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মোদীকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানান। সম্মেলন শেষে কানাডা থেকে ফেরার পথে সেখানে‘স্টপ বাই’(অনির্ধারিত সফর) করতে পারেন কিনা? তবে পূর্বনির্ধারিত কাজ থাকায় সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি মোদী।
তথ্যসূত্র : দ্য হিন্দু