সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও সেঞ্চুরি করলেন উলভার্ট। কিন্তু দলকে জেতাতে পারলেন না তিনি। অবশেষে তৃতীয় বারের চেষ্টায় শাপমুক্তি ভারতের। ঘরের মাঠে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হল তারা। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারাল ভারত।
প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৭ উইকেট হারিয়ে করেছিল ২৯৮ রান করেন। জবাবে ৪৫.৩ ওভারে ২৪৬ রানে অল আউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটে-বলে নজর কাড়লেন শেফালি বর্মা ও দীপ্তি শর্মা। এই দুই ক্রিকেটারের দাপটে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের ট্রফি জিতলেন হারমানপ্রীতরা। নাবি মুম্বাই মানে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে সাফল্যের গল্প শুনিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর। তিনি বললেন, ‘‘ইংল্যান্ডের কাছে হার মানতে পারিনি। খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু কেউ ভেঙে পড়েনি। কেউ বলেনি, এর পর কী করব। সেই রাতে অনেক কিছু বদলে গিয়েছিল। বলতে পারি, এক রাতে বদলে গিয়েছিল গোটা দল। আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম, আরও আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়ে নামব। জিততেই হবে।’’

বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল বেঙ্গালুরুতে। কিন্তু আরসিবি আইপিএল জেতার পর পদপিষ্টের ঘটনার পর সেখান থেকে বিশ্বকাপের খেলা সরিয়ে দেওয়া হয়। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল সরে আসে নবি মুম্বাইয়ে।
মাঠ বদলে যাওয়ায় হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলেন হারমনপ্রীতেরা। ভারত অধিনায়ক বলেন, “যেই শুনলাম ডিওয়াই পাতিলে সেমিফাইনাল, ফাইনাল হবে, খুব খুশি হয়েছিলাম। কারণ, এখানে উইকেট খুব ভাল। আমরা এই মাঠে ভাল খেলি। পাশাপাশি এখানে সমর্থকেরা মাঠ ভরান। এই সমর্থন আমাদের প্রয়োজন ছিল। তাই বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বইয়ে খেলা সরে যাওয়ার পর নিজেদের মধ্যে আমরা বলাবলি করতে শুরু করেছিলাম, চ্যাম্পিয়ন হব। মুম্বাইয়ে এসে মনে হয়েছিল, ঘরে ফিরলাম।”
রেকর্ড গড়ে জিততে হবে দ.আফ্রিকাকে
মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ ৩৫৬ রানের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার। ভারত আজ এত বেশি রানের পুঁজি পায়নি। তারপরও দক্ষিণ আফ্রিকাকে জিততে গেলে নতুন ইতিহাসই গড়তে হবে।
১৬৭ রানের বেশি লক্ষ্য ছুঁয়ে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি কোনো দল। ২০০৯ সালের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের ১৬৬ রানের চ্যালেঞ্জে ৪ উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ড। আজ নাবি মুম্বাইয়ে জিততে হলে প্রোটিয়াদের করতে হবে ২৯৯। ভারত করেছে ৭ উইকেটে ২৯৮ রান। তবে রেকর্ড তো ভাঙার জন্যই গড়া হয়। নাবি মুম্বাইয়ে আজ দক্ষিণ আফ্রিকা নতুন রেকর্ড গড়তে পারেন কিনা সেটাই দেখার।
স্মৃতি মান্ধানা ও শেফালি বর্মা দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন ভারতকে। দুজন ওপেনিংয়ে গড়েন ১০৪ রানের জুটি। মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে এখন শেফালি–মান্ধানার ১০৪ রানই উদ্বোধনী জুটিতে ভারতের সর্বোচ্চ। সব ফাইনাল মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ ১৬০ রানের রেকর্ডটা অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিসা হিলি ও র্যাচেল হেইন্সের, ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে।
An inspiration for all 👌#TeamIndia players share a moment with the Master Blaster 🤝
— 100MB (@100MasterBlastr) November 2, 2025
[Sachin Tendulkar, India vs South Africa, Women's Cricket World Cup 2025, Final] pic.twitter.com/j717wNGkYk
মান্ধানা ৫৮ বলে ফেরেন ৪৫ রান করে। আর সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও ৭৮ বলে ৮৭ করে আউট হন শেফালি।
সেমিফাইনালে ভারতের জয়ের নায়িকা জেমিমাহ রদ্রিগেজ অবশ্য ফাইনালে সফল হননি। আউট হয়েছেন ২৪ রানে। ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর ২৯ বলে করেছেন ২০ রান, এমলাবার বলে বোল্ড হয়েছেন দলীয় ২২৩ রানে। এরপর দীপ্তি শর্মার ৫৮তে ভারতের স্কোর পৌঁছে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত
বৃষ্টির শঙ্কা ছিল আগে থেকে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টিও হয়েছে মুম্বাইয়ে। তাই পিছিয়ে গেছে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল। বৃষ্টি থামার পর অবশ্য হয়েছে টস। আর টস জিতে মেঘলা আকাশের কথা ভেবে ফিল্ডিং নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক লরা ভলভার্ট।
বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৫টায় শুরু হবে খেলা। আবারও বৃষ্টি বাধা না হলে খেলা হবে পুরো ৫০ ওভারই। এর অর্থ রাতটা লম্বা হতে যাচ্ছে। উপমহাদেশে এত দেরীতে কোনও ওয়ানডে ম্যাচ শুরু হয়েছে কিনা এটাও গবেষণার বিষয়।
সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য রাখা হয়েছে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা সময়। সাড়ে পাঁচটার আগে খেলা শুরু করা গেলে ওভার কমানো হবে না। আর অন্তত ২০ ওভারের ম্যাচের জন্য খেলা শুরুর শেষ সময় রাত ৯.৩৮ মিনিট। তখনও খেলা শুরু না হলে ফাইনাল গড়াবে রিজার্ভ ডে তে।

শেষ ৯টি ফাইনালে পাঁচ বার টসে প্রথমে ব্যাট করা দল জিতেছে। তাই পরিসংখ্যানে কিছুটা এগিয়ে ভারত। দুই দলই একাদশে কোনও বদল আনেনি। সেমিফাইনালের দলই খেলছে ফাইনালে।
ভারতের একাদশ
শেফালি বর্মা, স্মৃতি মান্ধানা, জেমাইমা রদ্রিগেজ, হারমানপ্রীত কৌর (অধিনায়ক), রিচা ঘোষ (উইকেটকিপা), দীপ্তি শর্মা, আমানজোত কৌর, রাধা যাদব, ক্রান্তি গৌড়, শ্রী চরণী ও রেনুকা সিং।
দ.আফ্রিকার একাদশ
লরা ভলভার্ট (অধিনায়ক), তাজমিন ব্রিটস, আনিকা বশ, সুনে লুস, মারিজান কাপ, আনেরি ডের্কসেন, সিনালো জাফতা (উইকেটকিপার), ক্লোয়ি ট্রাইওন, নাদিন ডি ক্লার্ক, আয়াবঙ্গা খাকা ও ননকুলুলেকো এমলাবা।



