Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যে শেখ হাসিনার কঠোর শাস্তি চাইলেন নাহিদ

nahid-tribunal-170925
[publishpress_authors_box]

জুলাই গণহত্যার মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে শেখ হাসিনাসহ নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানালেন অভ্যুত্থানের নেতা নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যে তিনি ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রস্তাব দেওয়ার প্রেক্ষাপটও জানান।

বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় বুধবার সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেছিলেন নাহিদ। একদিন বাদে তা শেষ হওয়ার পর তাকে জেরা করা হয়।

যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে, সেই প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন নাহিদ।

অভ্যুত্থানের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে তার উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেন নাহিদ। পরে অভ্যুত্থানকারীরা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠন করলে উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দলটির আহ্বায়কের পদ নেন তিনি।

জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তখনকার পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে আসামি করা হয়।

সেই মামলায় সাক্ষ্যে গণঅভ্যুত্থানের সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শেখ হাসিনাসহ যারা যারা গণহত্যা ও নির্যাতনে যুক্ত ছিলেন, তাদের সবার কঠোর শাস্তি নাহিদ দাবি করেন বলে বাসস জানিয়েছে।

সাক্ষ্যে নাহিদ জুলাই আন্দোলনের সময় দুই দফা তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের বর্ণনাও দেন।

আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান থেকে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও তা ৫ আগস্ট এগিয়ে আনার কারণ সাক্ষ্যে তুলে ধরেন নাহিদ।

তিনি বলেন, তারা যখন জানতে পারেন যে ৬ আগস্ট সরকার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ করে তাদের হত্যা ও গুম করা হতে পারে, তখন তারা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করেন।

‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করতে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে মাহফুজ আলম (বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা) অন্যান্য ছাত্র সংগঠনসহ নাগরিক সমাজের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলছিলেন বলে জানান নাহিদ।

ড. ইউনূস তখন প্যারিসে ছিলেন। নতুন সরকার গঠনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে ৪ আগস্ট তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলে জানান নাহিদ। তিনি বলেন, ওই দিনই তাকে নতুন সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত দিন ৫ আগস্টের পরিস্থিতি তুলে ধরে নাহিদ বলেন, ওইদিন সকালে তারা শাহবাগে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শহীদ মিনার ও চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। এরমধ্যে সেনাবাহিনী এক পর্যায়ে রাস্তা ছেড়ে দিলে তারা শাহবাগে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণের মধ্যে শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

শাহবাগে বসে নাহিদ জানতে পারেন যে ঢাকার প্রবেশ মুখ যাত্রাবাড়ী, উত্তরা-গাজীপুর, সাভার-আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে।

নাহিদ বলেন, দুপুরে তারা শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে গণভবনের উদ্দেশে যখন রওনা হন, পথে শোনেন যে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছেন। ছাত্র-জনতা গণভবনে ঢুকে পড়েছে।

শেখ হাসিনা সেদিন পদত্যাগ করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এখনও তিনি সেখানেই রয়েছেন। তাকে ও আসাদুজ্জামান কামালকে পলাতক দেখিয়েই এই বিচার চলছে। সাবেক আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে এরইমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য দেওয়া শেষ করার পর নাহিদকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

প্রসিকিউশনের পক্ষে আদালতে ছিলেন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম। মামুনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে এই মামলায় গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা মামুন তখন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে রাজসাক্ষী হতে আবেদন জানান। পরে ৩৬তম সাক্ষী হিসেবে তার সাক্ষ্য নেয় আদালত।

এটি ছাড়াও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর একটিতে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে দমন-পীড়ন নিয়ে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত