Beta
সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫

নাহিদের এক পোস্টে অনেক জবাব

নাহিদ ইসলাম যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র।
নাহিদ ইসলাম যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র।
[publishpress_authors_box]

আওয়ামী লীগ সরকার হটানোর অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর বন্ধনে এক বছরেই ধরেছে চিড়; একের বিরুদ্ধে অন্যের অভিযোগ উঠছে একের পর এক।

এমনই কয়েকটি অভিযোগের জবাব নিয়ে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন নাহিদ ইসলাম, যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে উপদেষ্টার চেয়ার পেরিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করে এখন তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার দেওয়া ওই পোস্টে তিনি অভ্যুত্থানের পর জাতীয় সরকার গঠনে বিএনপির আপত্তির কথা বলেছেন। ছাত্রশক্তির নেপথ্যে ছাত্র শিবিরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ খণ্ড করেছেন। আবার প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের বিরুদ্ধেও তুলেছেন অভিযোগ।

গত বছরের আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অভ্যুত্থানকারী তরুণ এবং বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছিল।

সেই সরকার গঠনের আগে বঙ্গভবনে কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছিল। উপদেষ্টা পদে কারা কারা আসবেন, তা নিয়ে চলে দীর্ঘ আলোচনা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে তখন জাতীয় সরকার গঠনের কোনও প্রস্তাব শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তাদের দেওয়া হয়নি। তারা অন্য মাধ্যমে এ প্রস্তাব পেয়েছিলেন।

তার সেই বক্তব্য ধরে নাহিদ লিখেছেন, “এই বক্তব্যটি সত্য নয়। ৫ই অগাস্ট রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ে আমরা বলেছিলাম, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার করতে চাই। সেই প্রেস ব্রিফিংয়ের পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সাথে আমাদের ভার্চুয়াল মিটিং হয়। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

“তারেক রহমান এ প্রস্তাবে সম্মত হননি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের দিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাজেশন দেন। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা বলি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে। ৭ই অগাস্ট ভোরবেলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বাসায় আমরা উনার সাথে অন্তর্বর্তী সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা করি। উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেবার আগে জনাব তারেক রহমানের সাথে আরেকটি মিটিং এ প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ নিয়ে আলোচনা/পর্যালোচনা হয়।”

নাহিদের এই বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ সরকারবিহীন হয়ে পড়ে। অন্তর্বর্তী সরকার চূড়ান্ত হতে লেগেচিল তিন দিন। ড. ইউনূস প্রথমে রাজি ছিলেন না, যা তিনি নিজেই পরে জানান। রাজি হওয়ার পর তিনি ৮ আগস্ট প্যারিস থেকে ফিরে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ের আন্দোলন রক্তাক্ত পথ মাড়িয়ে অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মে সেই আন্দোলনটি শুরু হয়েছিল গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি নামে একটি সংগঠনের নেতাদের নেতৃত্বে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি সংগঠনটি গড়ে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন।

আওয়ামী লীগকে হটানোর এই আন্দোলন সফলে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারা এই অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব দাবি করে আসছেন।

ক্ষমতা হারানোর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও এই আন্দোলনের পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে বলে দাবি করতেন। পতনের আগে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধও করেছিল তার সরকার; তবে অভ্যুত্থানের পর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়।

ছাত্রশবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম সম্প্রতি এক টিভি আলোচনায় ছাত্রশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছাত্রশিবিরের ভূমিকা থাকার দাবি করেন।

তার জবাবে নাহিদ লিখেছেন, “শিবির নেতা সাদিক কায়েম সম্প্রতি একটা টকশোতে বলেছেন, ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার।

“গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রের সাথে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সাথে জাবির একটা স্টাডি সার্কেলও যুক্ত হয়। একটা নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা হয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাহিদ বলেন, “আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সকল পক্ষের সাথেই আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে ঢাবি শিবিরের সাথেও যোগাযোগ ছিল।

“যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনও সহযোগিতা করা মানে এই না যে তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল।”

সাদিক কায়েমের ভূমিকা নিয়ে নাহিদ বলেন, “সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সমন্বয়ক ছিল না। কিন্তু ৫ই অগাস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সাদিক কায়েমকে প্রেস ব্রিফিং এ বসার ব্যবস্থা করা হয়।

“কিন্তু সাদিক কায়েমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে এই অভ্যুত্থান ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম। অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করে নাই। কিন্তু এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনও হয় নাই। আমরা সব পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম।”

“আর কারা ক্ষমতার ভাগ বাঁটোয়ারা করতে চাইছে, গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে, সে বিষয়ে অন্যদিন বলব,” বলেছেন নাহিদ।

নাহিদের এই বক্তব্যের বিষয়ে সাদিক কায়েমও কোনও প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে জানাননি।

মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়োহিত সমাবেশ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন নাহিদ ইসলাম। ছবি : হারুন অর রশীদ
নাহিদ ইসলাম এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়কের দায়িত্বে।

অভ্যুত্থানের নেতা হিসাবে সাদিক কায়েমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন শায়েরকে সামরিক বাহিনীঘেঁষা বলে অভিযোগ করেছেন নাহিদ।  

তিনি লিখেছেন, “২রা অগাস্ট, ২০২৪ রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। এ উদ্দেশ্য কথিত সেইফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেইট করা হয় যাতে সে রাতে ফেইসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে আর আমাদের সাথে যাতে আর কোনও যোগাযোগ না রাখে। রিফাতদের (সমন্বয়ক রিফাত রশীদ) বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে।

“আমাদের বক্তব্য ছিল, একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে, তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক।”

নাহিদ বলেন, “আমাদের ভিতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনও গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

“এটাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সামনে আগাতে হবে। ৫ই অগাস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে গিয়েছি।”

“সায়েরগং ৫ই অগাস্টের পর বারবার চেষ্টা করেছে আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা নেতৃত্ব দাঁড় করাতে। সেক্ষেত্রে সাদিক কায়েমদের ব্যবহার করেছে। এবং তারা ব্যবহৃতও হয়েছে। সায়ের গংদের এ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কল রেকর্ড ফাঁস, সার্ভেইলেন্স, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা হেন কোনও কাজ নাই, যা হচ্ছে না।”

“বাংলাদেশে সিটিং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার হচ্ছে এ দেশের ইতিহাসে এরকম কখনও হয়েছে কি না, জানা নাই। কিন্তু মিথ্যার উপর দিয়ে বেশিদিন টেকা যায় না। এরাও টিকবে না,” এভাবেই পোস্টে যতি টেনেছেন নাহিদ।

নাহিদের এই পোস্টের পর তার প্রতি কিছু প্রশ্ন ছুড়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন জুলকারনাইন শায়ের।

তিনি লিখেছেন, “১. বিপ্লবের আগে ছাত্রশক্তির ঢাবি’তে লোকবল কত ছিল? ২. দেশের অন্য কোন-কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কমিটি ছিল? ৩. বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের নাহিদ ইসলাম ৫ ই আগস্টের পূর্বে চিনত কি না? ৪. কেবল মাত্র ছাত্রশক্তির বিপ্লব সংগঠিত করার মতো সাংগঠনিক কাঠামো ছিল কি না? ৫. গুটিকয়েক সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী না জানালে সাদেক কায়েমের অবদানের কথা নাহিদ ইসলামরা জাতিকে জানাতেন কি না?”

সম্প্রতি চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্র সমন্বয়কদের একজন আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদের গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে নাহিদের উদ্দেশে শায়ের বলেছেন, “আপনার অবগতির জন্যে জানাচ্ছি, আমি বৈষম্যবিরোধী চাঁদাবাজ রিয়াদকে কোনও রকমের সার্ভেলেন্সে রাখি নাই। আর সে চাঁদা আনতে গিয়ে যে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, সেটা লাগানোতেও আমার কোনও ভূমিকা নাই।

“রিয়াদ যে আপনার শেল্টারে ছিল সেটা আমি জানতাম। পরে জানতে পারলাম, আপনার ও আপনার বাবার সাথে তার ঘনিষ্ঠতার কথা। আপনি আমার উপর ক্ষেপে গেছেন, কারণ আপনাকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে যে রিয়াদকে ধরিয়ে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নাকি আমার। আমি দৃঢ়ভাবে আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই যে, চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিয়াদকে পাকড়াও করার ঘটনায় আমার কোনও হাত নাই।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত