দেড় দশক আগে ঢাকার পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় আরও ৪০ বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) জওয়ানের জামিন আবেদন মঞ্জুর হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালত গত ৮ মে সন্ধ্যায় এ আদেশ দেয় বলে সোমবার নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের চিফ প্রসিকিউটর বোরহান উদ্দিন।
তিনি বলেন, “গত ৮ মে জামিনের বিষয়ে শুনানি শেষ হয়। সন্ধ্যায় বিচারক জামিনের আদেশ দেন। আজ পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়া গেছে। ৪০ জনের জামিন মঞ্জুর হয়েছে।”
একই আদালত এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি ১৭৮ জন বিডিআর জওয়ানকে জামিন দেয়। পরে ২৩ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কারাগার থেকে তারা কারামুক্ত হন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। সে ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে ছিল।
তাদের মধ্যে নতুন করে ৪০ জনের জামিন পাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের চিফ প্রসিকিউটর বোরহান উদ্দিন আরও বলেন, “আসামিদের মধ্যে অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত, এমনকি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছে। জামিন আবেদন করা আসামিদের নথিপত্র যাচাই করে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে ৪০ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। বাকি আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে।”
জামিন পাওয়া আসামিরা হলো- রেজাউল করিম, শাজাহান, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, রেজাউল করিম, মো. শামীম, ওয়ালি উল্লাহ, হাবিবুর রহমান, তারিকুল ইসলাম, বনি আমিন চৌধুরী, এ বারিক, ইমতিয়াজ আহমেদ নবীন, মোয়াজ্জেম হোসেন, মিজানুর রহমান, সিদ্দিকুর জামান জোয়ার্দার ওরফে লিটন, এ মোনাফ, আকিদুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, মিজানুর রহমান, কৌতুক কুমার সরকার, সালাউদ্দিন, সোহরাব হোসেন, কামাল হোসেন, ইশহাক, দারুল ইসলাম, সুমন চক্রবর্তী, আবু সাঈদ, সেজান মাহমুদ, মো. সেলিম, বিধান কুমার সাহা, মাসুম হাসান, ফিরোজ মিয়া, তাপস কুমার বিশ্বাস, রফিকুল ইসলাম, কামাল মিয়া, নূর-এ-আলম মিয়া, এনামুল হক, শফিকুল ইসলাম, রবিউল আলম ও আল আমিন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ দাবি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা পড়েছে।
তাতে আসামি হিসাবে শেখ হাসিনা, মইন উ আহমেদের পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ ৫৮ জনকে। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে অভিযোগে।
ওই অভিযোগ জমা পড়ার পর বিদ্রোহের সেই ঘটনার তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশন প্রধান করা হয় বিডিআরের এক সময়ের মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে।
ওই হত্যাকাণ্ডের শহীদদের স্মরণে প্রতিবছর ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আলোচিত এই হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, খালাস পান ২৮৩ জন। হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন।
হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। আর হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
২০১০ সালে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ আসামির বিরুদ্ধে বিচার কাজও শুরু হয়েছিল।