Beta
রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

কথার ফুলঝুরি নয়, বাস্তবভিত্তিক বাজেট দিতে চেয়েছি : অর্থ উপদেষ্টা

post-budget-press-meet-of-salahuddin-030625
[publishpress_authors_box]

নানা সমালোচনা চললেও অন্তর্বর্তী সরকারের হয়ে নিজের দেওয়া প্রথম বাজেটের পক্ষে দাঁড়িয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অর্থনৈতিক সঙ্কটের এই সময়ে তার প্রধান চেষ্টা মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা। তাই কথার ফুলঝুরি বাদ দিয়ে বাস্তবভিত্তিক বাজেট দিতে চেয়েছেন তিনি।

প্রথা অনুযায়ী বাজেট প্রস্তাবের পর দিন মঙ্গলবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসে একথা বলেন তিনি।

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে কাজ চালালেও তা যে কঠিন, সেকথা বলেছেন তিনি। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখলেও তিনি বলেছেন, জনগণ না চাইলে তা তুলে দেবেন তিনি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ আহমেদ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন।

এই বাজেট গতানুগতিক বলে সমালোচনা যেমন উঠেছে, তেমনি এই কথাও উঠেছে যে বৈষম্য দূর করার কথা থাকলেও বাজেটে তার কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে সালেহ উদ্দিন নিজের বাজেটকে ‘জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব’ দাবি করে বলেন, “তবে কখনোই পুরোপুরি ব্যবসাবান্ধব করা সম্ভব না। এক দিকে কর কমাতে গেলে আরেকদিকে বাড়াতে হবে।

“তবে হুট করে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব না। এবার প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মানুষের জীবন যাত্রা স্বচ্ছ, সহজ করার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।”

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে উচ্চ প্রবৃদ্ধির দিকে নজর ছিল, তা থেকে মোড় ঘোড়ানোর কথা বলেছেন সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন।  

তিনি বলেন, “আগের বিভিন্ন সময়ে যে প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে এবার আমরা বের হয়ে এসেছি। প্রবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি- এই ধারা থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি।

“আমরা সাধারণ প্রবৃদ্ধিতে না গিয়ে সাধারণ মানুষের যাতে জীবন মানোন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে করা যায়, সেদিকে জোর দিয়েছি।”

একারণে এবারই প্রথম আগের বারে চেয়ে বাজেটের আকার বাড়াননি বলে জানান তিনি।

বাজেটের খুঁটিনাটি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জিজ্ঞাসার জবাব দিতে চারজন উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সালেহ উদ্দিন।

মঞ্চে অর্থ উপদেষ্টার বাম পাশে বসেছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ ও অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

আর ডান পাশে বসেছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং সড়ক ও রেলপথ উপ‌দেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।

সংবাদ সম্মেলনে প্রথম অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন তার বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তার পর উপদেষ্টারা বক্তব্য দেন। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্ন আহ্বান করেন অর্থ উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “এই সরকার কঠিন একটা সময়ে দায়িত্ব নিয়েছে। অনেকে বলেন, দেশ আইসিইউতে ছিল। বিশেষ করে আর্থিক খাত একেবারে খাদের কিনারায় পৌঁছেছিল।

“সবার চেষ্টায় আর্থিক খাতকে একটা পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হয়েছে। মানুষকে আরও কীভাবে স্বস্তি দেওয়া যায়, সে চেষ্টা রয়েছে বাজেটে। সবচেয়ে বড় বিষয় বাজেটের আকার প্রথমবারের মতো কমানো হয়েছে।”

সবাইকে খুশি করার কাজটিও কঠিন জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “বাজেটে জনপ্রিয় ডিমান্ড পূরণ করা কঠিন। ঋণ ব্যবস্থাপনায় টেকসই করার উদ্যোগ আছে এই বাজেটে। যাতে আমার বৈদিশিক ঋণের চাপে পড়ে না যাই, সেদিকে খেয়াল করা হয়েছে।”

বাজেটে জুলাই আন্দোলনের বৈষম্যবিরোধী চেতনার প্রতিফলন হয়নি- এটা মানতে নারাজ সালেহ উদ্দিন।

তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “চট করে বিপ্লবী বাজেট করা সম্ভব না।”

প্রবৃদ্ধি নিয়ে সালেহ উদ্দিন বলেন, “এতদিন আমরা প্রবৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি করি। তবে সেই প্রবৃদ্ধি সব পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌঁছায়নি।

“এ থেকে বেরিয়ে এসে জীবনযাত্রা যেন ভালো পর্যায়ে নেওয়া যায়, সেজন্য এবারের বাজেটে কথার ফুলঝুরি বাদ দিয়ে বাস্তবভিত্তিক করার চেষ্টা করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক, পুঁজিবাজার, জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার চেষ্টা করা হয়েছে।”

গতানুগতিকতার সমালোচনার জবাবে সালেহ উদ্দিন বলেন, “অনেকে এবারের বাজেটকে গতানুগতিক, আগের ধারাবাহিতা বলছেন। তবে সেটা ঠিক না।

“এবারের বাজেটে তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা রয়েছে। কীভাবে সবার জীবনযাপন আরও স্বচ্ছ, মান উন্নয়ন করা যায় সে চেষ্টা করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলে দেখছি প্রতিটি দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করছে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। এই সুযোগ দেওয়া ঠিক হয়েছে— এ প্রশ্নের উত্তরে সালেহ উদ্দিন বলেন, “কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সরকার যে খুব ভালো কাজ করেছে তা না; এমনকি মানুষ না চাইলে সুযোগটি বাতিল করা হবে।”

বিগত সরকারের সময়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের অগ্রগতি নিয়ে আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পাচারকারীরা অনেক বুদ্ধিমান। ওই টাকা ফেরত আনা কঠিন হবে।”

সংসদ না থাকায় টিভি-বেতারে ভাষণের মাধ্যমে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা। এই মাসের শেষে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই বাজেট কার্যকর হবে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এই মাসের মধ্যে বাজেট অনুমোদন হবে। তার আগে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ আছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত