সড়কে গত মে মাসে আগের মাসের চেয়ে বেড়েছে মোটরবাইক দুর্ঘটনা, বেড়েছে হতাহতের সংখ্যাও।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনা যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তার সঙ্গে এপ্রিল মাসের তুলনা করলে এই চিত্র পাওয়া যায়।
এপ্রিল মাসে ২১৫ টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ২২৯ জন নিহত হয়েছিল, আহত হয়েছিল ২২৪ জন। মোট দুর্ঘটনার ৩৭.৯১ শতাংশ ছিল বাইক সংক্রান্ত, নিহতের ৩৯.২৭ শতাংশ ও আহতের ১৮.৬৪ শতাংশও ছিল বাইকার।
মে মাসে মোটরবাইক দুর্ঘটনা হয়েছে মোট ২৩৩টি। তাতে ২৫৬ জন নিহত এবং ২০১ জন আহত হয়েছে। মোট দুর্ঘটনার ৩৯.০২ শতাংশ ছিল মোটরবাইক সংশ্লিষ্ট, নিহতের ৪১.৬৯ শতাংশ ও আহতের ১৬.৮০ শতাংশ ছিল বাইকার।
অর্থাৎ মে মাসে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৭ জন বেড়েছে। তবে আহতের সংখ্যা ২৩ জন কমেছে। এক মাসের ব্যবধানে মোটরবাইক দুর্ঘটনার হার বেড়েছে ১.১১ শতাংশ পয়েন্ট।
এপ্রিল মাসে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ৫৬৭টি, তাতে নিহত হয়েছিল ৫৮৩ জন, আহত হয়েছিল ১২০২ জন। মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৯৭টি। তাতে ৬১৪ জন নিহত এবং ১১৯৬ জন আহত হয়।
এই হিসাবে মে মাসে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে ৩০টি। নিহতের সংখ্যা ৩১ জন বাড়লেও আহতের সংখ্যা কমেছে ৬।
মে মাসে রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়। নৌ পথে ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত এবং ১০ জন নিখোঁজ হয়। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৬৫২টি দুর্ঘটনায় ৬৫৮ জন নিহত এবং ১২১০ জন আহত হয়।
এপ্রিলে রেলপথে ৩৫টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়েছিল। নৌপথে ৮টি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত, ১ জন নিখোঁজ হয়েছিল। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৬১০টি দুর্ঘটনায় ৬২৮ জন নিহত এবং ১২০৭ জন আহত হয়েছিল।
এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিল চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৮টি। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিল সিলেট বিভাগে ২৮টি।
মে মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয় ঢাকা বিভাগে ১৩৯টি। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা হয় বরিশাল বিভাগে ৩০টি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে তথ্য সন্নিবেশিত করে বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়।
মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪২ জন চালক, ৩৪ জন পরিবহনকর্মী, ৯৫ জন পথচারী। এছাড়া ৫৯ জন নারী, ৫৪ জন শিশু, ৬৬ জন শিক্ষার্থী, ২ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ১ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ৫ জন শিক্ষক ও ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী।
দুর্ঘটনায় পড়া ৯৪৫টি যানবাহনের মধ্যে ২৯.৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.৫৩ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কভার্ডভ্যান ও লরি, ১২.৪৮ শতাংশ বাস, ১৪.১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৬.৬৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৯.৩১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫.৩৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস।
মে মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৯.০৭ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৪.৯৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০.১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা।
মোট দুর্ঘটনার ৩৩.৫০ শতাংশ ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ৩২.৮৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮.১৪ শতাংশ ফিডার রোডে। ৩.৫১ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মহানগরীতে, ১.৫০ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৫০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
মে মাসে দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তার মধ্যে রয়েছে- সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকা; জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকা; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন চালানো; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করার সুপারিশ করেছে।
সেই সঙ্গে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় আলোর ব্যবস্থা করা, ধীর ও দ্রুত গতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা, মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন তুলে নেওয়ার সুপারিশও করেছে।