বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বির হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের এই মামলায় বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু তাহের আট আসামির সবাইকে খালাস দিয়ে রায় দেন।
খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তারেক রহমানের এপিএস মিয়া নুর উদ্দিন অপু, সাবেক বিএনপি এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার ছেলে সাফিয়াত সোবহান ও শাদাত সোবহান এবং বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তারেক রহমান যখন বন্দি, তখন ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর দুদকের উপ-পরিচালক আবুল কাসেম ঢাকার রমনা থানায় এই মামলাটি করেন।
বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশন্স নেটওয়ার্ক লিমিটেডের পরিচালক সাব্বির মারা গিয়েছিলেন ২০০৬ সালের ৪ জুলাই। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়া, বাবর ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
ঢাকার গুলশানের একটি ভবনের নিচে সাব্বিরের লাশ পাওয়ার পর প্রথম পুলিশ জানিয়েছিল, ভবন থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। তবে কয়েকদিন পর সাব্বিরের ভগ্নিপতি এ এফ এম আসিফ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাতে অভিযোগ করা হয়, মতবিরোধের জেরে সাব্বিরকে হত্যা করে লাশ উঁচু ভবন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছিল সাফিয়াত সোবহান সানবীরসহ পাঁচজনকে।
সেই মামলা ধামাচাপা দিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে তারেকের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২০০৭ সালে। তাতে তারেকসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়।
মামলাটি তদন্ত করে ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল তারেক রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
তাতে অভিযোগ করা হয়, সাব্বির হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে তারেক, বাবর ও শাহ আলমের মধ্যে ঘুষ লেনদেন হয়েছিল বাবরের বেইলি রোডের সরকারি বাড়িতে। বৈঠকে শাহ আলমের কাছে ১০০ কোটি টাকা দাবি করেন তারেক ও বাবর। ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে এই হত্যা রহস্য ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারেক ও বাবরের সঙ্গে শাহ আলমের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে শাহ আলমের কাছ থেকে বাবর ২১ কোটি টাকা নেন। এ টাকার মধ্যে বাবরের নির্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান ২০০৬ সালের ২০ আগস্ট হওয়া ভবনে ১ কোটি টাকা তারেকের পিএস অপুকে বুঝিয়ে দেন। বাবর ৫ কোটি টাকা আবু সুফিয়ানের মাধ্যমে নগদ গ্রহণ করে কাজী সালিমুল হক কামালের কাছে জমা রাখেন। বাকি ১৫ কোটি টাকা বাবরের নির্দেশে আবু সুফিয়ান প্রাইম ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় সালিমুল হক কামালকে ২০টি চেকের মাধ্যমে দেন।
২০০৮ সালে ১৪ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ-৩ এর তৎকালীন বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন মামলায় তারেকের সাজা হলেও এই মামলাটি ঝুলে ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর এখন রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন তারেক।
বিএনপি দাবি করে আসছিল, তারেকের বিরুদ্ধে এটিসহ অন্য মামলাগুলোও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এদিকে সাব্বির হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে যে মামলা হয়েছিল, ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সেই মামলার রায় দেন। তাতে সাফিয়ান সোবহান সানবীরসহ পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।