Beta
শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

নভেম্বরেই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান, বিএনপি তারিখ জানাবে শিগগিরই

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
[publishpress_authors_box]

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ। শিগগিরই তারেক রহমানের ফেরার তারিখ ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, এছাড়া খুব শিগগিরই ২০০ আসনে বিএনপির একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগনাল দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন সালাউদ্দিন আহমদ।

গত বছর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে আলোচনা চলছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ২০০৭ সালের এক–এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হন। পরের বছর জামিনে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তিনি। এরপর প্রায় দেড় যুগ ধরে সপরিবার সে দেশে আছেন তারেক রহমান।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তার সাজা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইতোমধ্যে একে একে ওইসব সাজা বাতিল হয়েছে। অন্যান্য মামলা থেকেও খালাস পেয়েছেন তারেক রহমান।

এর মাঝে ছয় বছর পর কারামুক্ত খালেদা জিয়া গত মে মাসে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান, তখন তার ফিরে আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছিলেন কেউ কেউ। তারেক রহমানের ফিরে না আসার মধ্যে তার যাওয়ায় নানা গুঞ্জন ভাসছিল। তবে সেই গুঞ্জনে অবসান ঘটে বিএনপি চেয়ারপারসনের ফিরে আসার মধ্যদিয়ে।

তারেক রহমানের এখনও না ফেরা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়েই রয়েছে, যিনি বিএনপির নেতাদের কাছে কাণ্ডারী, কর্মীদের চোখে ভবিষ্যৎ। বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, সময় হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।

বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রস্তুতি, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের পরিকল্পনা, গণভোট এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির সিনিয়র নেতা সালাউদ্দিন আহমদ।

সালাউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর জোট করার পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির।

তিনি বলছেন, অতীতে আন্দোলনের সময় যেসব দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে অংশ নিয়েছে, তাদেরকে জোট শরিক হিসেবে সাথে রাখতে চায় তারা। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলেও জানান সালাউদ্দিন আহমদ।

নির্বাচনে জোট করলেও দলীয় প্রতীকে ভোটে লড়তে হবে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিওতে আনা এই পরিবর্তনটি সংশোধন করতে বিএনপি সরকারকে চিঠি দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া গণভোট ইস্যুতে সরকার ও বিএনপি টালবাহানা করছে, জামায়াতে ইসলামীর এমন বক্তব্যেরও জবাব দেন সালাউদ্দিন আহমদ। তার মতে, জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে করাই যৌক্তিক হবে।

“অনেককে বলতে শুনছি গণভোটে আমরা জবরদস্তি রাজি হয়েছি, কিন্তু সেটা তো না বরং আমাদের প্রস্তাবেই বাকি সবাই গণভোটে রাজি হয়েছে,” বলেও দাবি করেন সালাউদ্দিন আহমদ।

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছেন তারেক রহমান

২০০ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারা হবেন বিএনপির প্রার্থী- এ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে এই আলোচনাও আরও ডালপালা মেলছে।

প্রায় সব আসনে একাধিক প্রার্থী নিয়ে দলটি বিপাকে রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নও রয়েছে। যদিও সম্প্রতি বিভিন্ন আসনের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতারা।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, অন্তত ২০০ আসনে দলটির প্রার্থীদের নাম জানা যাবে খুব শিগগিরই। এরই মধ্যে দলটির নীতিনির্ধারকরা এসব আসনের সম্ভাব্য একক প্রার্থীর নাম নির্দিষ্ট করেছেন।

তিনি বলছেন, প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য যারা প্রার্থী আছেন, তাদের সাথে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে একটি প্রায়োরিটি তালিকা করেছে দলটি।

“দুইশ আসনে আমরা সিঙ্গেল প্রার্থীকে গ্রিন সিগনাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে খুব শিগগিরই একক প্রার্থীকে সেই সিগনাল দেওয়া হবে,” বলেন সালাউদ্দিন আহমদ।

বাকি আসনগুলো শরিকদের জন্য রাখা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, “অনেক সমীকরণ আছে, শরিকদের জন্য থাকবে, কিছু আসনে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি- এরকম কিছু আসনও আছে।”

সম্প্রতি বিবিসি বাংলার সাথে সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান

বৃহত্তর জোটের পরিকল্পনা

বাংলাদেশে অতীতের প্রায় সব নির্বাচনে একাধিক দলের জোট গঠনের ইতিহাস রয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

মাঠের বাস্তবতাও সেই আভাসই দিচ্ছে। কয়েকটি ইসলামী দলের মধ্যে জোট গঠনের আলোচনা শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরেই।

এমন প্রেক্ষাপটে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর জোট গঠন করার পরিকল্পনা করছে বিএনপিও। এক্ষেত্রে অতীতে আন্দোলন সংগ্রামে যেসব দল বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদেরকেই প্রাধান্য দিতে চায় দলগুলো।

সালাউদ্দিন আহমদ বলছেন, “স্বৈরাচারের পতনের আগেও আমরা যে ৩১ দফা প্রণয়ন করেছি সেখানেও আমাদের অঙ্গীকার আছে, ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা আমাদের যুগপৎ সঙ্গী ছিল তাদের সঙ্গে ঐকমত্যের জাতীয় সরকার গঠনের কথা আছে, সেই জোটটিই আরও সম্প্রসারিত হবে এখন।”

“আরও অনেকে সেখানে যুক্ত হতে পারে, অনেক ইসলামী দলও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে,” বলেন তিনি।

তবে নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি বলেও জানান বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।

তিনি বলছেন, “এনসিপির সঙ্গে এখনও আলোচনা হয়নি, তবে একদম যে হবে না সেটাও তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”

আরপিওতে যে পরিবর্তন চায় বিএনপি

নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ায় পরিবর্তন আনতে সরকারকে চিঠি দেবে বিএনপি।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলছেন, উপদেষ্টা পরিষদ আরপিওর যে সংশোধিত খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে, সেখানে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতীকের ব্যবহার নিয়ে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেখানে আপত্তি রয়েছে তাদের।

আরপিওতে আগের বিধান অনুযায়ী, কোনও নির্বাচনী এলাকায় এক বা একাধিক প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রতীক বরাদ্দে কোনও দলের প্রার্থী তার নির্ধারিত দলের প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করবে। তবে দুই বা ততোধিক দল যদি জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করে, তখন জোটের যেকোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানাতে হতো।

তবে সম্প্রতি সংশোধিত আরপিওতে এই সুযোগটি বাতিল করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জোটভুক্ত হলেও কোনওও নিবন্ধিত দলকে তার নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে।

সালাউদ্দিন আহমদ বলছেন, “আরপিও সংশোধনের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক যে আলোচনা হয়েছে, সেখানে আমরা এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ছিলাম। কারণ এভাবে সংশোধিত হলে ছোট দলগুলো জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।”

তিনি বলছেন, “বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এটা আমাদের দেশে প্রচলিত প্রক্রিয়া। কিন্ত হঠাৎ করে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরেও সেটা রাখা হলো না।”

এমনকি সংস্কার কমিশনের আলোচনায়ও বিএনপি এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বলেও জানান সালাউদ্দিন আহমদ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত