তখনও শ্রীলঙ্কায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু হয়নি। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার যে অ্যঅশেজ দ্বৈরথ তা চলছিল পুরোদমে। সেই সিরিজ খেলতে যেতেই ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা জাহাজ যাত্রা বিরতি দিতেন শ্রীলঙ্কায়।
১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ড যাওয়ার পথে তেমনই একটি বিরতিতে শ্রীলঙ্কায় থেমেছিল স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া দল। শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে প্রাচীন মাঠ পি সারাভানামুত্তু বা পি সারা ওভালে খেলেছিলেন একটি ম্যাচ। ওই ম্যাচেই ২০ রান করে আউট হন ব্র্যাডম্যান।

লঙ্কার সবচেয়ে প্রাচীন মাঠের গৌরব নিয়ে বেশ টিকে আছে পি সারা ওভাল। কাঠামোই বলে দেয় মাঠটি কতটা প্রাচীন। সাদা কালো টেলিভিশন আসলে ছবিগুলোতে যেমন সরকারি অফিস দেখানো হতো ঠিক সেরকম বার্নিশ করা কাঠ আর বড় বড় কাচের দেয়ালে ঘেরা অফিসে গিয়ে পরিচয় দিতে হলো।
মাঠটি নিয়ে রিপোর্ট করার অনুমতি চাইতে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন তামিল ক্রিকেট ইউনিয়ন ম্যানেজার দানেশা গুনাতিলাকা। মুত্তিয়া মুরালিধরনের হাতে উদ্বোধন হওয়া জনশক্তি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঝদিয়ে নিয়ে গেলেন ভেন্যুর মাঠের কাছে।

বাউন্ডারি সীমানা পেরিয়ে মাঠ প্রবেশের আগে হাতের বামে রয়েছে পাব অথবা ক্লাব। এখানে বসে রেস্টুরেন্টের আমেজে টেস্ট খেলা দেখার সুযোগ আছে। যান পাশে ব্রডকাস্ট ফ্যাসিলিট ও প্রেসবক্স।
ক্লাবের বাম পাশেই ট্রাইফুন আর মিরান্দো স্ট্যান্ড। এটাই স্টেডিয়ামের ক্রিকেটার্স ড্রেসিংরুম এবং ভিআইপি গ্যালারি। কাঠের চেয়ারে সাজানো অতীত সময়ের গ্যালারীর যুগে ফিরে যেতে হবে এখানে এলে। ক্রিকেটারদের ড্রেসিংরুমের সামনেও কাঠের চেয়ার সাজানো তাদের বসবার জন্য। অবশ্য ২০১৯ এরপর থেকে এ মাঠে আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হওয়ায় কাঠামোগুলো একটু বিবর্ণ।

পাশের ক্লাব ঘরের বারান্দায়ও আছে কাঠের চেয়ারে বসে খেলা দেখা এবং পানীয়তে চুমুক দেওয়ার সুযোগ। তবে কাঁচঘেরা মূল রেস্টুরেন্টের ভেতরে সোফায় সাজানো বসার জায়গায়। তার দেয়ালেই সোভা পাচ্ছে ১৯৪৮ সালে খেলা ম্যাচটির দুটো ছবি।
একটিতে সিলন ক্রিকেটার্স দলের অধিনায়ক মাহাদেভান সাথাসিভামের সঙ্গে ব্র্যাডম্যানের টস করতে যাওয়া এবং ম্যাচে তার ব্যাটিংয়ে নামার মুহুর্তের ছবি। মাঠ থেকে এই কাঠামোর ঠিক বিপরীত পাশেই আছে তখনকার সময়ের বিখ্যাত স্কোরবোর্ডটি।

ওই ম্যাচে মাত্র ২০ রান করেছিলেন ব্র্যাডম্যান। ক্রিকেট বিষয়ক লেখক জ্যাক ফিঙ্গেলটন পি সারাকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‘যে মাঠ ব্র্যাডম্যানকে বিবর্ণ করেছিল’। পরে জানা যায় ওই ম্যাচে পিচের পরিমাপ ছিল ২২ নয় ২০ গজ।
মাঠটির স্কোরবোর্ড ইতিহাসের অংশ। ইলেকট্রনিক সুবিধা ছাড়া এত বিশ্লেষণ করা ক্রিকেট স্কোরবোর্ড আর কোন মাঠে নেই। যা দেখে ডন ব্র্যাডম্যানও বলেছিলেন পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বিশদ স্কোর বোর্ড। অবশ্য পরে শ্রীলঙ্কার সিংহলিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ড মাঠেও এই রকম বিস্তারিত স্কোরবোর্ড বসানো হয়।

মাঠটি শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে শুধু ব্র্যাডম্যানের জন্যই বিখ্যাত তা কিন্তু নয়। এই মাঠে ১৯৮২ সালে শ্রীলঙ্কা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম হোম টেস্ট খেলে। ১৯৮৫ সালে শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট জয়ের ভেন্যুও এটি, জয়টি ছিল ভারতের সঙ্গে।
১৯৯৪ এর পর থেকে এই মাঠে খেলা হয়েছে খুব কম। পরে অবশ্য খেলা হয়। ২০০২ সালে ইতিহাসে প্রথম নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে টেস্ট আয়োজন করে এই মাঠ। অস্ট্রেলিয়া সেসময় পাকিস্তান সফরে যেতে চায়নি। তাই দুই দলের টেস্ট হয়েছিল এই মাঠে।



