শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলায় সাক্ষ্য দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গিয়েছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা নাহিদ ইসলাম। সাক্ষ্যগ্রহণ না হলেও তিনি কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে; দাবি করেন, এই বিচার যেন নির্বাচনের পরও চালিয়ে যাওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মঙ্গলবার হাজির হয়েছিলেন নাহিদ। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার চলছে।
গত বছর যাদের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ শাসনের অবসান ঘটে, সেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাহিদ এই মামলার ৪৭তম সাক্ষী। জুলাই আন্দোলনের সময় তাকে দুই দফায় তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল।
মামলাটিতে ৪৬তম সাক্ষী হিসাবে সোমবার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। মঙ্গলবার তাকে জেরা করা হয়। সেই জেরা শেষ না হওয়ায় এদিন নাহিদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি।
ট্রাইব্যুনােলর প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম সাংবাদিকদের জানান, “আশা করি, আগামীকাল নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করবেন।”
সাক্ষ্য না দিলেও আদালত প্রাঙ্গণে তাকে পেয়ে সাংবাদিকরা নানা প্রশ্ন করলে তার উত্তর দেন অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গড়ে তার আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ।
তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন সরকারের যে নৃশংসতা ছাত্র-জনতার ওপর হয়েছিল, অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম দাবি ছিল এই বিচার প্রক্রিয়া যাতে যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয়।
“আমরা আশা করছি যে দ্রুত সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার পাব। শেখ হাসিনার এ মামলায় হয়তো আমি শেষ সাক্ষী। আমার সাক্ষ্য নেওয়ার পর এ মামলা রায়ের দিকে যাবে।”
অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর যে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইয়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই সরকারে তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন নাহিদ।
পরে দল গঠন করে রাজনৈতিক অভিযাত্রা শুরুর আগে তিনি পদত্যাগ করেন। এখন তার দল সংবিধানসহ মৌলিক সংস্কারের দাবিতে গণপরিষদ গঠন করে নির্বাচনের পথে যেতে চাইছে। প্রধান উপদেষ্টা অবশ্য ফেব্রুয়ারিতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ শাসনকালের গুম-খুন এবং ২০১৩ সালে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে দমন অভিযানের মামলার বিচারও হবে ট্রাইব্যুনালে।
আগামী নির্বাচনে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, এসব মামলার বিচার যেন না আটকায়, তা নিশ্চিত করতে সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রতিশ্রুতি চেয়েছেন এনপিসি আহ্বায়ক নাহিদ।
তিনি বলেন, “শুধু এই মামলাটিই নয়, সারা দেশে আরও নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম-খুন হয়েছিল, তার অনেক মামলা রয়েছে। ফলে এ বিচারপ্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ সময় চলবে।
“নির্বাচনের পরেও যাতে এ বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত না হয়, বিচার প্রক্রিয়া যেন অব্যাহত থাকে, সেই প্রতিশ্রুতির জন্য একটা রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছি। সকল রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে যেন সেই প্রতিশ্রুতি থাকে।”
ভারতে থাকা শেখ হাসিনাকে পলাতক দেখিয়ে চলছে তার বিচার। তার সঙ্গে এই মামলায় আসামি রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (পলাতক) এবং সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (বন্দি)।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর মামলাটিতে বিচার শুরুর আদেশ হয়। তখন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে আবেদন করেন আল-মামুন। পরবর্তীকালে এই মামলার ৩৬তম সাক্ষী হিসাবে তার সাক্ষ্য নেওয়া হয়।