ইসরায়েল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ওপর নতুন করে ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে। ইসরায়েলের শিল্প উদ্যোক্তাদের সংগঠন “ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইসরায়েল” এ তথ্য জানিয়েছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, এই শুল্ক অপরিবর্তিত থাকলে ১৮ থেকে ২৬ হাজার ইসরায়েলি চাকরি হারাতে পারেন।
সংগঠনটি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছে, তিনি যেন এই শুল্ক কমাতে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই সতর্কবার্তা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে প্রকাশ করা হয়।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী আমদানির ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ইসরায়েল আশা করেছিল এই শুল্ক থেকে ছাড় পাবে। এমনকি তারা শেষ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সব পণ্যের ওপর বাকি থাকা শুল্ক তুলে দেয়। তবুও যুক্তরাষ্ট্র ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।
সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, এই শুল্ক ফার্মাসিউটিক্যাল এবং চিপ প্রযুক্তিখাতে সম্প্রসারিত হলে ইসরায়েলের রপ্তানিতে মোট ক্ষতি ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উচ্চপ্রযুক্তি খাত। এর মধ্যে রয়েছে বায়োটেকনোলজি, প্লাস্টিক, ধাতু, রাসায়নিক ও জ্বালানি, রোবোটিক্স এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল থেকে ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি করেছে।
ইসরায়েলের ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিসডেন্ট ড. রন টোমার প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন, শুল্কের কারণে ইসরায়েলি অর্থনীতির প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান, বিনিয়োগ আকর্ষণের সক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু শিল্পখাতে শুল্ক আরোপ করলে সেটি ইসরায়েলের হার্ডওয়্যার রপ্তানির পাশাপাশি সফটওয়্যার ও অন্যান্য প্রযুক্তি সেবার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ ইসরায়েলের অনেক প্রযুক্তি কোম্পানি একইসঙ্গে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।
ড. টোমার বলেন, “এই গুরুতর পরিণতির পরিপ্রেক্ষিতে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি যেন শুল্ক আরোপ ঠেকাতে সব কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ইসরায়েলি অর্থনীতির বড় ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরের আগেই অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে শুল্কের অর্থনৈতিক প্রভাব ও তা মোকাবেলার উপায় সম্পর্কে অবহিত করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় গত বুধবার শুল্ক ঘোষণার পর থেকেই এর প্রভাব বিশ্লেষণ করছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে কাজ করছে।
স্মোটরিচ আরও জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে শিল্পখাতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সম্ভাব্য সুযোগ-সঙ্কট বিশ্লেষণ ও করণীয় ঠিক করেছেন।
বিশ্বের অন্যান্য বাজারের মতো ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির ঘোষণার পর থেকে ইসরায়েলের তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জেও শেয়ারমূল্য কমতে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, এটি একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করতে পারে।
রবিবার সকালে তেল আবিবের শেয়ারবাজারে প্রধান সূচক টিএ-১২৫ প্রায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যায়। গত সপ্তাহে এটি ০ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছিল। বড় কোম্পানিগুলোর সূচক টিএ-৩৫ কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং টিএ-৯০ সূচক (এটি অন্যান্য বৃহৎ মূলধনী কোম্পানিকে অনুসরণ করে) সেটি কমেছে প্রায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আর টিএ-ইনস্যুরেন্স ও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস সূচক কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
তেল আবিব শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক পরিকল্পনার ফলে বৃহস্পতিবার বিশ্বের সব বাজারেই পতন ঘটে। এর মধ্যে ইসরায়েলও রয়েছে। পাশাপাশি গাজায় ফের সংঘর্ষ শুরু হওয়া ও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে।”
তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইসরায়েল।



