Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

হৃদরোগে মৃত্যুর জন্য দায়ী, কী এই রাসায়নিক

খাবার রাখার পাত্রের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় ফথালেটস।
খাবার রাখার পাত্রের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় ফথালেটস।
[publishpress_authors_box]

বিশ্বে ২০১৮ সালে ৫৫-৬৪ বছর বয়সী নারী-পুরুষদের মধ্যে হৃদরোগে মৃত্যুর যে হার ছিল, তার ১০ শতাংশেরও বেশি ঘটে এক বিশেষ ধরনের রাসায়নিকের কারণে, যার নাম ফালেটস।

খাবার রাখার পাত্র, শ্যাম্পু, প্রসাধনী সামগ্রী, পারফিউম, শিশুদের খেলনায় কৃত্রিমভাবে তৈরি এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এসব পণ্যের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ফালেটস।

বিজ্ঞান সাময়িকী ইবায়োমেডিসিনে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।      

মানবদেহে ফালেটসের ভূমিকা সম্পর্কে গবেষণা প্রতিবেদনটির জ্যেষ্ঠ লেখক ও নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের শিশুরোগবিদ্যা ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. লিওনার্দো ত্রাসান্দে বলেন, “ফালেটস হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা বিদ্যমান হৃদরোগকে দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে এবং এর ফলে হঠাৎ মৃত্যুসহ মারাত্মক সমস্যা ঘটতে পারে।

“এছাড়া টেস্টোস্টেরন হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায় ফালেটস। পুরুষদের মধ্যে এই হরমোনের মাত্রা কম হলে ভবিষ্যতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।”

আগের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, ফালেটস প্রজনন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে ছেলেশিশুর যৌনাঙ্গের গঠনে বিকৃতি, অণ্ডকোষ না নামা এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া ও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস।

ওইসব গবেষণায় ফালেটসের সঙ্গে হাঁপানি, শিশুদের অতিরিক্ত মোটা হওয়া এবং ক্যানসারের মতো রোগের সম্পর্কও পাওয়া গেছে।

নতুন এই গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকারকর্মীদের সংগঠন এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিজ্ঞান কর্মকর্তা ডেভিড অ্যান্ড্রুস বলেন, “এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ফালেটসের কারণে বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত ও আর্থিক ক্ষতি হতে পারে, যা এই রাসায়নিক পদার্থের ঝুঁকি নিয়ে আগে থেকেই বিদ্যমান উদ্বেগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”  

খাবার সংরক্ষণের পাত্র, শ্যাম্পু, প্রসাধনী সামগ্রী, পারফিউম, শিশুদের খেলনা ইত্যাদি যারা বানায়, তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত আমেরিকান কেমিস্ট্রি কাউন্সিল এই গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে সিএনএনের প্রশ্নের কোনও জবাব দেয়নি।  

তবে তারা ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়েছে, তারা ডিআইএনপি, ডিআইডিপির মতো উচ্চ ফালেটসের উপকারিতা তুলে ধরার কাজ করে।

সুগন্ধ ধরে রাখতে প্রসাধনী সামগ্রীতে যোগ করা হয় ফালেটস।

কোথায় আছে ফালেটস

ফালেটসকে প্রায়ই ‘সব জায়গায় থাকা রাসায়নিক’ বলা হয়। কারণ বলতে গেলে সব জায়গায় এটি বিরাজমান।

যেমন পিভিসি পাইপ, ভিনাইলের মেঝে, বৃষ্টি ও দাগ প্রতিরোধী পণ্য, চিকিৎসায় ব্যবহৃত টিউব, বাগানে সেচের পাইপ, শিশুদের খেলনায় ফালেটস যুক্ত করা হয়, যাতে প্লাস্টিক আরও নমনীয় হয় এবং সহজে না ভাঙে।

এছাড়া খাবারের প্যাকেট, ডিটারজেন্ট, জামা, আসবাবপত্র ও গাড়িতে এই রাসায়নিক থাকে। সুগন্ধ দীর্ঘস্থায়ী করতে শ্যাম্পু, সাবান, হেয়ার স্প্রে ও প্রসাধনী সামগ্রীতেও এটি ব্যবহার করা হয়।

ডিটারজেন্টেও ব্যবহৃত হয় এই রাসায়নিক।

কী বলছে গবেষণা

মঙ্গলবার ইবায়োমেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে ডিইএইচপি নামের একটি ফালেটসের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়, যা বিশ্বের ২০০টি দেশ ও অঞ্চলে মৃত্যুহারের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত তা পরীক্ষা করেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক ড. লিওনার্দো ত্রাসান্দে জানান, গবেষকরা বহু জনসংখ্যাভিত্তিক জরিপের স্বাস্থ্য ও পরিবেশসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেন, যার মধ্যে এমন প্রস্রাবের নমুনাও ছিল যাতে ডিইএইচপির রাসায়নিক উপাদানের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে। গবেষণায় এই ডিইএইচপি হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে জানা গেছে।

গবেষকরা মানুষের শরীরে োলেটসের পরিমাণের সঙ্গে মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলনা করেন।

এতে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী ৫৫-৬৪ বছর বয়সী নারী ও পুরুষদের মধ্যে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৬৪টি মৃত্যুর পেছনে ডিইএইচপির সংস্পর্শ একটি কারণ ছিল।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিইএইচপি সম্পর্কিত হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৩০ শতাংশ হয়েছে আফ্রিকায় আর পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে মৃত্যুর হার ২৫ শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ও নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী গবেষণা বিজ্ঞানী সারা হাইম্যান জানান, বিশ্বজুড়ে ডিইএইচপির কারণে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি নিয়ে এই প্রথম কোনও গবেষণা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ফালেটসের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সম্পর্ক তুলে ধরে আমাদের এই গবেষণা বলছে, এই রাসায়নিক মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি।”

খাবার গরম করতে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে প্লাস্টিকের পাত্র না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

করণীয় কী

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফালেটস এবং অন্যান্য হরমোন বিঘ্নকারী রাসায়নিকের সংস্পর্শ চাইলে কমানো সম্ভব।

কীভাবে তা সম্ভব, সে প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের শিশুরোগবিদ্যা ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. লিওনার্দো ত্রাসান্দে বলেন, যতটা সম্ভব প্লাস্টিকের ব্যবহার এড়িয়ে চলা।

তিনি বলেন, অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খেলে শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রবেশ অনেকটাই কমানো যায়।

“প্লাস্টিকের পাত্র কখনোই মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা ডিশওয়াশারে ব্যবহার করা উচিৎ নয়, কারণ তাপের কারণে এতে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক সহজে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।”

তথ্যসূত্র : সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত