সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য সফরের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের পাশে বসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্টারমারকে তখন ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, তার নজর পড়েছে এক টুকরো জমির ওপর, যা তার দেশের সামরিক বাহিনী একসময় নিয়ন্ত্রণ করত। আর সেটি হলো প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি।
তিনি বলেন, “আমরা সেটি (তালেবানের হাতে) একেবারে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছি। আমরা সেই ঘাঁটিটা ফেরত চাই।”
এর দুদিন পর সোশাল মিডিয়ায় নিজের মত প্রকাশ করে ট্রাম্প লিখলেন, “যদি আফগানিস্তান সেই বাগরাম ঘাঁটি তাদের কাছে ফেরত না দেয় যারা সেটি নির্মাণ করেছে, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে, তাহলে খারাপ কিছু ঘটবে!”
প্রত্যাশিতভাবেই তালেবান এই দাবির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায় যে “কোনও অবস্থাতেই” আফগানরা এই ঘাঁটি কোনও তৃতীয় দেশের কাছে হস্তান্তর করবে না।
২০২১ সালের আগস্টে কাবুল দখলের পর থেকে ক্ষমতায় আসা আফগানিস্তানের শাসক তালেবান তাদের এই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানের পক্ষে এক বিরল ও তাৎপর্যপূর্ণ সমর্থন পেয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। অথচ এরাই সাধারণত ভূরাজনীতিতে একে অপরের সঙ্গে একমত হয় না।
মস্কোতে এক বৈঠকে রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইরান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও কিরগিজস্তানের প্রতিনিধিরা তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে আফগানিস্তানে কোনও বিদেশি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টার বিরুদ্ধে একজোট অবস্থান নেয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাম নেয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে লক্ষ্যটি ছিল স্পষ্ট।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭ অক্টোবর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, “তারা আফগানিস্তান এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে কোনও দেশের সামরিক অবকাঠামো স্থাপনের প্রচেষ্টাকে অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে। কারণ এটি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থ রক্ষা করে না।”
এই বৈঠক ছিল তথাকথিত “মস্কো ফরম্যাট কনসালটেশনস” এর সপ্তম আসর।
গত মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া ও ইরান একই রকম এক বিবৃতিতে “সামরিক ঘাঁটির পুনঃপ্রতিষ্ঠার” বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু মস্কোর এই ঘোষণায় আরও বৃহত্তর ও বৈচিত্র্যময় দেশগুলো, যাদের মধ্যে অনেকের স্বার্থবিরোধিতা আছে, তারাও একই অবস্থানে ঐক্যবদ্ধ হয়।
ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ভারত উদ্বিগ্ন চীনের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ নিয়েও। অন্যদিকে, ইরান সবসময় আফগানিস্তানে পাকিস্তানের উপস্থিতিকে সন্দেহের চোখে দেখে।
কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান বহুদিন ধরেই আশঙ্কা করে আসছে যে আফগানিস্তানের সহিংসতা তাদের ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান ও তালেবানের সম্পর্কও বেশ টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। যদিও একসময় ইসলামাবাদই তালেবানকে আশ্রয় ও সহায়তা দিয়েছিল।
ইসলামাবাদের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইএসএসআই) গবেষক তাইমুর খানের মতে, এই বৈপরীত্য সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রকে অঞ্চল থেকে দূরে রাখার পক্ষে একমত হওয়া এই দেশগুলোর ঐক্য দেখায় যে তারা মনে করে আফগানিস্তানের বিষয়টি একটি আঞ্চলিক দায়িত্ব, বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপের বিষয় নয়।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “তাদের পারস্পরিক মতভেদ থাকা সত্ত্বেও, আঞ্চলিক দেশগুলো একমত যে আফগানিস্তান আর কোনও বিদেশি সামরিক উপস্থিতি মেনে নিতে পারে না।”
মস্কোয় এই অবস্থান শুধু তালেবানদের শক্তি জোগায়নি, বরং ট্রাম্পের বাগরাম ঘাঁটি ফেরতের দাবির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানকে বৈধতাও দিয়েছে।
যদিও রাশিয়া ছাড়া কোনও দেশ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবুও প্রতিবেশী দেশগুলো ক্রমশ কাবুলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গভীর করছে।
প্রতীকী ও কৌশলগত পুরস্কার
আফগান তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দোহায় স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে। পরবর্তীতে ২০২১ সালের আগস্টে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময়, তারা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
কিন্তু এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে, দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার এক মাস পর ট্রাম্প আবারও বলেন, “আমরা বাগরাম ঘাঁটি রাখার পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা সেখানে একটি ছোট বাহিনী রাখতে চেয়েছিলাম।”
বাগরামের অবস্থান কাবুল থেকে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার উত্তরে। এটি মূলত সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫০-এর দশকে নির্মাণ করেছিল। এতে দুটি কংক্রিট রানওয়ে রয়েছে। একটি ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার ও অন্যটি ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই ঘাঁটি আফগানিস্তানে কয়েকটি স্থানের একটি যেখানে বড় সামরিক বিমান ও অস্ত্রবাহী যান অবতরণ করতে পারে।
গত অর্ধশতকে আফগানিস্তান দখল ও নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতায় থাকা বহু শক্তির জন্য এটি একটি কৌশলগত ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। তখন বাগরাম হয়ে ওঠে ওয়াশিংটনের তথাকথিত “সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের” কেন্দ্রবিন্দু।
আফগানিস্তানের দুর্গম পর্বতময় ভূপ্রকৃতির কারণে বৃহৎ সামরিক লজিস্টিক কেন্দ্রের উপযোগী স্থান খুবই সীমিত। এই ঘাটতির কারণেই বাগরাম ঘাঁটি আজও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যুক্তরাষ্ট্রের দেশত্যাগের চার বছর পরেও।
ওয়াশিংটনভিত্তিক নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র পরিচালক কামরান বোখারি বলেন, তিনি ট্রাম্পের মন্তব্য সত্ত্বেও মনে করেন না যে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই আফগানিস্তানে পুনরায় বাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূরাজনীতি ‘সামরিক সীমিতকরণ’-এর দিকে যাচ্ছে। ওয়াশিংটনে এমন কোনও মনোভাব নেই যে আফগানিস্তানে ফের সামরিক প্রতিশ্রুতি নেওয়া হবে। এটি বিশাল এক লজিস্টিক কাজ হবে।
“তালেবানরা যদি যুক্তরাষ্ট্রকে ঘাঁটিটি ফেরত দিতেও রাজি হয়, তবুও সেটি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় তার কার্যকারিতার তুলনায় অনেক বেশি হবে।”
একই সময়ে বোখারি বলেন, মস্কোর বৈঠকটি রাশিয়ার জন্য সুযোগ তৈরি করেছে দেখানোর যে, ইউক্রেন যুদ্ধ ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পরও, মধ্য এশিয়ায় তার প্রভাব এখনও টিকে আছে।
তবে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নতুন উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ শুধু রাশিয়া বা চীনেই সীমাবদ্ধ নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে ইরানও যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সামরিক উপস্থিতি সেখানে চায় না।
অন্যান্য আঞ্চলিক দেশগুলো যেমন ভারত ও পাকিস্তানও আগ্রহী। এটা প্রমাণ করতে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পরও এই অঞ্চল নিজেই নিরাপত্তা শূন্যতা সামলাতে সক্ষম। যদিও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ অংশীদার, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন বেড়েছে। এর আংশিক কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রুশ তেল কেনা নিয়ে ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে।
আর আছে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো, যাদের আফগানিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ, দুর্বলভাবে সুরক্ষিত সীমান্ত রয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফের সামরিক উপস্থিতি সহিংস গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দিতে পারে।
মধ্য এশিয়ার নিরাপত্তা হিসাবনিকাশ
মস্কো ফরম্যাটে অংশ নেওয়া চারটি মধ্য এশীয় দেশ; কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান। দেশগুলো তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে মিলে ছয়টি স্থলবেষ্টিত দেশ গঠন করেছে, যাদের ভূগোল তাদের আঞ্চলিক রাজনীতিতে এক অনন্য অবস্থান দেয়। তবে একই সঙ্গে উষ্ণ পানির বন্দরগুলোতে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষাও জাগায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই দেশগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি “অবাঞ্ছিত”।
কাজাখ বিশ্লেষক ও সেন্ট্রাল এশিয়া রিজিওনাল ইকনমিক কোঅপারেশন ইনস্টিটিউটের (সিএআরইসি) উপপরিচালক কুয়াত আকিজানভ বলেন, “এটি হঠকারী যুক্তরাষ্ট্রবিরোধিতা নয়।”
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘাঁটি হোস্ট দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে। মস্কো ও বেইজিং উভয়েই ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনও পুনরাগমনের বিরোধিতা জানিয়েছে। সেই ঐকমত্যের সঙ্গে সমন্বয় করে চললে আমাদের ছোট অর্থনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর চাপ কমে।”
তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিক দেশগুলো এখন মস্কো ফরম্যাট বা শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) মতো আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করতে আগ্রহী, যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির চেয়ে।
তালেবান ও প্রতিবেশীদের ভয় কী
আফগানিস্তানের বড় প্রতিবেশীদের নিজস্ব উদ্বেগ আছে।
ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদের খান বলেন, “তারা আশঙ্কা করে, যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় সামরিক উপস্থিতি গোয়েন্দা অভিযান জোরদার করবে, অস্থিতিশীলতা বাড়াবে এবং আফগানিস্তানকে আবারও প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আঞ্চলিক দেশগুলো এখন আফগানিস্তানকে দেখে এমন একটি এলাকা হিসেবে, যাকে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক একীকরণের মাধ্যমে স্থিতিশীল করতে হবে। পশ্চিমা হস্তক্ষেপ বা কৌশলগত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের বাগরাম দাবি তালেবানদের জন্য একটি দ্বিধা তৈরি করেছে।
ক্রাইসিস গ্রুপের কাবুলভিত্তিক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেন, তিনি মনে করেন ট্রাম্পের দাবি মূলত তার “ব্যক্তিগত প্রবণতা”-নির্ভর, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মহলের ঐকমত্য নয়। তিনি বলেন, “তার মনে হতে পারে, আফগানিস্তান এখনও তার জন্য একটি অসমাপ্ত অধ্যায়।”
তালেবানদের পক্ষে বাগরাম হস্তান্তর করা অকল্পনীয়। এনিয়ে বাহিসের মত, “কাবুল যদি বাগরাম ঘাঁটি দেয়, তবে তা তাদের নিজস্ব সমর্থক মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি করবে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উসকে দিতে পারে।”
একই সময়ে নিউ লাইনস ইনস্টিটিউটের বোখারি বলেন, তালেবানরা জানে যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তাদের শাসন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বড় বাধা। সেই বাধা দূর করতে হলে তাদের পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, “তালেবান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাইছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা বিনিময়ে কী দেবে? ওয়াশিংটনের আগ্রহ এখন মধ্য এশিয়ায়, যেটিতে পৌঁছানো কঠিন। কারণ চারপাশে রাশিয়া, চীন ও ইরান।”
ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন যে চীনের মিসাইল কারখানার কাছাকাছি হওয়ায় বাগরামের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাগরাম চীনের সীমান্ত থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে এবং শিনজিয়াংয়ের এক মিসাইল কারখানা থেকে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে।
বোখারি বলেন, “চীনকে এই অঞ্চলের একচ্ছত্র প্রভাবশালী হতে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে নয়।”
এই প্রেক্ষাপটে বাগরাম ঘাঁটির প্রসঙ্গটি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তালেবানদের সঙ্গে নতুন করে ব্যবসায়িক বা কৌশলগত সংযোগ গড়ার ইঙ্গিত।
বোখারি ও বাহিস উভয়েই একমত; ওয়াশিংটন তালেবানদের সঙ্গে কথা বলছে, তবে অনেক দেরিতে।
তালেবান ইতোমধ্যে প্রতিবেশী অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে, যা কয়েক বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল।
যোগাযোগ, স্বীকৃতি নয়
২০২১ সালের আগস্টে ৪ কোটিরও বেশি মানুষের দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে তালেবানদের শাসনব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।
তারা ইসলামের কট্টর ব্যাখ্যা অনুসারে শাসন চালাচ্ছে, নারীদের কাজ ও শিক্ষায় অংশগ্রহণের ওপর কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করেছে। অন্যদিকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ও ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশের (আইএসকেপি) মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি প্রতিবেশী দেশগুলোকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। তালেবান অবশ্য দাবি করে যে তারা আফগান মাটি কোনও প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয় না।
একসময় তালেবানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পাকিস্তান এখন তাদের নিয়ে ক্রমবর্ধমান হতাশা প্রকাশ করছে। ইসলামাবাদ মনে করে, কাবুল সীমান্তের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০২৪ সাল ছিল পাকিস্তানের জন্য প্রায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর। সহিংসতায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। এর বেশিরভাগের জন্য ইসলামাবাদ আফগান মাটিতে সক্রিয় গোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করে। যদিও কাবুল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে আফগান সীমান্তের কাছে গত বুধবার টিটিপির এক হামলায় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
তবুও পাকিস্তান মে মাসে তালেবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নীত করে। সেই মাসেই আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কি পাকিস্তানি সমকক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং ইরান ও চীনে বৈঠক করতে যান।
মুতাক্কি মস্কোতে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠকেও অংশ নেন, যেখানে ট্রাম্পের বাগরাম পরিকল্পনার সমালোচনা করা হয়। বৃহস্পতিবার তিনি যাচ্ছেন ভারতে এক সপ্তাহব্যাপী ঐতিহাসিক সফরে, যে দেশ কয়েক বছর আগেও তালেবানকে পাকিস্তানের প্রক্সি ও শত্রু হিসেবে দেখত।
বাহিস বলেন, আঞ্চলিক দেশগুলো তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছে বাস্তববাদী কারণে। সীমান্ত শান্ত রাখা, সন্ত্রাসবিরোধী নিশ্চয়তা পাওয়া এবং বাণিজ্যিক রুট নিশ্চিত করতে।
সিএআরইসি’র বিশ্লেষক আকিজানভ বলেন, এই ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ “তালেবানের সঙ্গে কাজের স্বাভাবিকতা তৈরি করছে এবং সেই বয়ানকে শক্তিশালী করছে যে আঞ্চলিক ভবিষ্যৎ স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত হবে, বাইরের সামরিক শক্তি দিয়ে নয়।”
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই বৈধতা প্রতিটি রাজধানীতে শর্তসাপেক্ষ। সন্ত্রাসবিরোধী নিশ্চয়তা, সীমান্ত নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সংযোগ ও নারীর মৌলিক অধিকারের ওপর নির্ভর করে।”
আইএসএসআইয়ের খান একমত হয়ে বলেন, “আমরা এখন যে পরিস্থিতি দেখছি, তা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নয়, বরং কার্যকর বোঝাপড়া। কারণ আফগানিস্তানের একঘরে হয়ে থাকা কারও স্বার্থেই নয়।”
তথ্যসূত্র : আল জাজিরা।