ভারতের পাঞ্জাবের অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী দিলজিৎ দোসাঞ্জ এমনিতেই বেশ জনপ্রিয়। এবার তিনি নতুন আরেক মাইলফলক সৃষ্টির পথে। তা হচ্ছে সর্বোচ্চ আয়ের পাঞ্জাবি সিনেমা।
দিলজিতের নতুন হরর কমেডি ‘সর্দার জি ৩’ ইতোমধ্যেই বিদেশে রেকর্ড গড়েছে। এশিয়ার সবচেয়ে সফল তারকাদের একজন হিসেবে তার খ্যাতি দিন দিন বাড়ছে। অথচ তার দেশ ভারতেই এটি পায়নি।
গত ২৭ জুন বিশ্বব্যাপী মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি এখন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিতর্কে। এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমির। তিনি এই চলচ্চিত্রে দিলজিতের সহ-অভিনেত্রী।
দিলজিৎ গত বছর বিশ্ব ভ্রমণে বের হন। এসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন শহরে কনসার্টে করেছেন। তিনি প্রথম ভারতীয় শিল্পী হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার কোচেল্লা উৎসবে পারফর্ম করেন। সাম্প্রতিক সময়ে মেট গালা অনুষ্ঠানেও তিনি পাগড়ি পরে ঐতিহাসিক পোশাকে হাজির হয়ে নজর কাড়েন।
দিলজিৎ বলিউডে নিজেকে একজন জনপ্রিয় ও সমালোচক প্রশংসিত অভিনেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। কিন্তু এখন তিনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তাকে বয়কট করার ডাক উঠেছে। এমনকি তার পাসপোর্ট জব্দ করারও দাবি উঠেছে।
তবে চলচ্চিত্র বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি শুধু দিলজিতের বিরুদ্ধে নয়; বরং এটি ভারতের শিল্পী ও সৃজনশীলতার ওপর আরোপিত একটি বড়সড় সীমাবদ্ধতার ইঙ্গিত। তারা মনে করেন, এটি জাতীয়তাবাদী চাপের কাছে নতি স্বীকার করে শিল্পের স্বাধীনতা রুদ্ধ করার একটি প্রবণতা।
তাহলে একজন সফল শিল্পীর কাজ কেন আটকে দিচ্ছে ভারত?
বিতর্ক কেন
পাঞ্জাবি জনপ্রিয় হরর-কমেডি সিরিজ সর্দার জি এর তৃতীয় কিস্তি সর্দার জি ৩ পরিচালনা করেছেন অমর হুন্দাল। এই দিলজিৎ, নীরু বাজওয়ার মতো তারকাদের সঙ্গে পর্দা ভাগ করেছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমির।
চলচ্চিত্রের শুটিং এ বছর এপ্রিলে শেষ হয়। এর কিছুদিন পরেই ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়।
ওই হামলার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। তাদের অভিযোগ, এই সন্ত্রাসী হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদত ছিল। ইসলামাবাদ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এরপর কয়েকদিন দুই দেশের মধ্যে টানা চার দিন ধরে সামরিক উত্তেজনা চলে। এটি সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষগুলোর একটি।
তারপর দিলজিতের সিনেমায় বৈরী দেশের অভিনেত্রী হানিয়া আমিরকে দেখে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
কেন মুক্তি পায়নি
সিনেমাটি এখনও ভারতের সেন্সর বোর্ড সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি) থেকে ছাড়পত্র পায়নি। ফলে এটি ভারতের কোনও সিনেমা হলে মুক্তি পায়নি।
এছাড়া ভারত সরকার চলচ্চিত্রটির ট্রেলারকেও `জিওব্লক’ করেছে। অর্থাৎ ভারতের দর্শকরা অনলাইনে এটি দেখতে পাচ্ছেন না। তবে চলচ্চিত্রের টিজার ও অ্যালবাম, যেগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমিরের কোনও দৃশ্য নেই, সেগুলো এখনও ভারতে দেখা যাচ্ছে।
কাশ্মীরের পহেলগামে এপ্রিলে ঘটে যাওয়া হামলার পর ভারত সরকার ইনস্টাগ্রাম, এক্সসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে হাজার হাজার পাকিস্তানি সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়। এই তালিকায় হানিয়া আমির, ফাওয়াদ খান x মাহিরা খানের মতো তারকারাও ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার পাকিস্তানি সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমগুলোর অ্যাকাউন্টও ভারতে ব্লক করে দেয়।
এরপর ৮ মে সরকার একটি পরামর্শনামা জারি করে। তাতে বলা হয়, সব ভিডিও প্ল্যাটফর্ম, স্ট্রিমিং সার্ভিস এবং ডিজিটাল মাধ্যমগুলো যেন অবিলম্বে পাকিস্তানি উৎসের বিনোদন কনটেন্ট সরিয়ে ফেলে। এই নির্দেশনায় ওয়েব সিরিজ, চলচ্চিত্র, গান, পডকাস্টসহ সবই অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পাশাপাশি সরকার ১৬টি বিখ্যাত পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করে। এর মধ্যে জিও নিউজ, এআরওয়াই নিউজ এবং সামা টিভির মতো চ্যানেল ছিল। সেগুলোর সম্মিলিত সাবস্ক্রাইবার ছিল ৬ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি।
ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে লক্ষ্য করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়ানোর অভিযোগে এসব চ্যানেল নিষিদ্ধ করা হয়।
মুম্বাইভিত্তিক চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সমালোচক রাহুল দেশাই মনে করেন, পাকিস্তানি শিল্পীদের অভিনয়ের ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র বন্ধ করে দেওয়া এখন এক ধরনের অজুহাত হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রতি শত্রুতা প্রকাশ করা যায়।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “এটি একটি দুষ্টচক্রে পরিণত হয়েছে। কারণ ভারতের অনেক সিনেমাই এখন সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
দেশাই আরও বলেন, “ক্রিকেট যেমন অনেক সময় পাকিস্তানকে ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়, তেমনি সিনেমাও এখন সেই ভূমিকা পালন করছে।”
তার মতে, আজকের ভারতে বাস্তবভিত্তিক সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রটি অত্যন্ত সঙ্কুচিত। সীমান্তের ওপারের শিল্পীদের কাস্ট না করার এক অলিখিত নিয়ম তৈরি হয়েছে। অনেক নির্মাতাই এখন স্বেচ্ছায় নিজেদের সেন্সর করছেন।
শিল্পীদের সহযোগিতা কি সাধারণ ঘটনা
অতীতে এসব সহযোগিতা বহুবার ঘটেছে। তবে পাকিস্তানি অভিনেতারা ভারতে কাজ করতে পারেন না। ফলে তাদের শুটিং করতে হলে তা বিদেশেই করতে হয়।
রাহুল দেশাই বলেন, “২০০০-এর দশক বা তারও আগে পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের সংগীত বিভাগ ভারতের সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখত।”
কোক স্টুডিও পাকিস্তান ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫টি মৌসুম চালিয়েছে। এটি ভারতে একসময় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছিল।
গত দুই দশকে দুই দেশের শিল্পীদের মধ্যে বহু যৌথ কাজ হয়েছে। তবে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে এসব সহযোগিতা প্রায়ই বয়কট ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে দুই দেশের পক্ষ থেকেই।
বিশেষ করে পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতের জন্য এই পরিস্থিতি আরও জটিল। কারণ ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের সময় রাতারাতি আঁকা সীমান্ত পাঞ্জাবকে দুই ভাগ করে ফেলে। কিন্তু দুই দেশের পাঞ্জাবি জনগণ এক ভাষা, সংস্কৃতি ও আবেগে গভীরভাবে যুক্ত।
জনপ্রিয় পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র যেমন সিরিজ চাল মেরা পুট। এটি পাকিস্তানি শিল্পীদের অংশগ্রহণের জন্য পরিচিত। সেটির আগামী কিস্তি চাল মেরা পুট ৪ নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ ক্রমবর্ধমানভাবে পাকিস্তানি অংশগ্রহণ বর্জনের দাবি জোরালো হচ্ছে।
রাহুল দেশাই বলেন, “পাকিস্তানি অভিনেতাদের কাস্ট করা নিয়ে স্পষ্টতই সরকারিভাবে একধরনের চাপ বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। এখানে নিষেধাজ্ঞা, অনলাইন ট্রলিং ও শারীরিক নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ থাকে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্মাতারা প্রায়ই আতঙ্ক ও দ্বিধায় থাকেন।”
চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর অবস্থান কী
ভারতের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর মধ্যে বিশেষ করে ফেডারেশন অব ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লইস (এফডব্লিউআইসিই) ও অল ইন্ডিয়ান সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইসিডব্লিউএ) এই সিনেমার বিরুদ্ধে জোরালো আপত্তি জানিয়েছে। তাদের মূল আপত্তি হানিয়া আমিরকে সিনেমায় অভিনয় করানো নিয়ে।
এফডব্লিউআইসিই’র সভাপতি বি এন তিওয়ারির নেতৃত্বে সংগঠনটি এই সহযোগিতাকে ‘জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, দিলজিৎ ভারতের সেনাদের আত্মত্যাগ ও জাতীয় অনুভূতির প্রতি অসম্মান দেখিয়েছেন। এই কারণে সংগঠনটি ভারতে সিনেমাটি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে।
সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, তারা চাইছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি) যেন এই সিনেমার ছাড়পত্র না দেয়। পাশাপাশি তারা পাকিস্তানি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ না করার বিষয়েও জোর দিয়েছে।
এআইসিডব্লিউএ’ও এই অবস্থানকে সমর্থন করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, এই চলচ্চিত্রের প্রযোজকরা ভারতীয় শিল্পীদের উপেক্ষা করে পাকিস্তানি প্রতিভাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তারা শুধু সিনেমা নয়, দিলজিৎ দোসাঞ্জের গানের প্রতিষ্ঠান ও ইভেন্ট অর্গানাইজারদের কাছেও তাকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতীয় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন পরিচালক সমিতির সভাপতি অশোক পণ্ডিত এক স্থানীয় সংবাদপত্রকে বলেন, “আমরা এই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রযোজকদের বলব যেন তারা দোসাঞ্জের সঙ্গে আর কাজ না করেন।”
তিনি আরও বলেন, “পুরো দেশেই তাকে বয়কট করা উচিৎ। সঙ্গীত কোম্পানি থেকে শুরু করে পুরো পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র শিল্প পর্যন্ত। দিলজিৎ হচ্ছেন এক ধরনের ‘পাকিস্তান প্রেমে আসক্ত ব্যক্তি’।”
তবে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন সিবিএফসির সাবেক সদস্য ও জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির চলচ্চিত্র বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইরা ভাস্কর। তিনি মনে করেন, এই ঘটনা আসলে ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অবস্থানের প্রতিফলন। এটি দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যকার বিভেদের ইঙ্গিত নয়।
তিনি বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের সরকার গণমাধ্যমের শক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে, বিশেষ করে সিনেমার ক্ষেত্রে। তারা এখন জনপরিসরে প্রচলিত বিবরণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট।”
দিলজিৎ কী বলছেন
বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্ককে এই মাসের শুরুতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দিলজিত দোসাঞ্জ বলেন, “সিনেমাটি নির্মাণের সময় সবকিছু ঠিকঠাক ছিল।
“আমরা ফেব্রুয়ারিতে শুটিং করি। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। পরে এমন কিছু বড় ঘটনা ঘটে, যেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।”
এখানে তিনি কাশ্মীরের হামলা এবং ভারত-পাকিস্তানের সামরিক উত্তেজনার প্রসঙ্গ তুলেছেন।
দিলজিৎ বলেন, “এই পরিস্থিতির কারণে প্রযোজকেরা সিদ্ধান্ত নেন, সিনেমাটি এখন আর ভারতে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা বিশ্ববাজারে এটি মুক্তি দেন। তারা এই ছবিতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। আর যখন সিনেমাটি বানানো হচ্ছিল, তখন এমন কোনও সমস্যা ছিল না।”
কেমন সফল ‘সর্দার জি ৩’
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দিলজিৎ জানান, সিনেমার প্রযোজকেরা জানতেন যে ভারতের মতো বিশাল বাজারে মুক্তি না পেলে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। সিরিজটির আগের চলচ্চিত্র সর্দার জি ২ শুধু ভারতে প্রায় ৩০ লাখ ডলার আয় করেছিল।
তবুও দিলজিৎ তার সিনেমার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ভক্তদের সঙ্গে তথ্য ও ছবি শেয়ার করছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানে সিনেমাটি রেকর্ড গড়েছে এবং অনেক শো হাউসফুল হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সিনেমাটির বক্স অফিস আয় ইতোমধ্যেই ৭ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সিনেমাটির বাজেট ছিল ৪ মিলিয়ন ডলার।
পাকিস্তানে এই সিনেমা এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এটি দেশটির ইতিহাসে কোনও ভারতীয় নির্মিত চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ আয়।
ভারতে সমালোচক রাহুল দেশাই মনে করেন, “এখানে সেন্সরশিপ শুধু কাস্টিং নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এখন গল্পের বিষয়বস্তুর ওপরেও প্রভাব ফেলছে। যেসব গল্প বলা যাবে আর যাবে না, তার নির্দিষ্ট সীমারেখা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।”
দিলজিৎ আর কী সমস্যায়
দিলজিতের আরও একটি চলচ্চিত্র বড় ধরনের জটিলতার মধ্যে রয়েছে আগে থেকে। ২০২২ সালে হানি ত্রেহান পরিচালিত চলচ্চিত্র পাঞ্জাব’৯৫ এখনও মুক্তির আলো দেখেনি। মূলত ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের (সিবিএফসি) কঠোর শর্ত ও বিলম্বের কারণে এই চলচ্চিত্রটির ছাড়পত্র এখনও আটকে আছে। সিনেমাটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে জমা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র মেলেনি।
পাঞ্জাব’ ৯৫ একটি জীবনীভিত্তিক নাট্যচিত্র। এটি মানবাধিকারকর্মী যশবন্ত সিং খালরার জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। খালরার ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে পাঞ্জাবে শিখ সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত ২৫ হাজারেরও বেশি বেআইনি হত্যা ও গুমের ঘটনা প্রকাশ করেছিলেন।
চলচ্চিত্রটিকে সিবিএফসি থেকে মোট ১২০টি সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল রাজনৈতিক নেতাদের নাম বাদ দেওয়া, নথিভুক্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সরিয়ে ফেলা, এমনকি প্রধান চরিত্রের নামও পরিবর্তন করা।
পরিচালক হানি ত্রেহান আল জাজিরাকে বলেন, “সিবিএফসি গঠিত হয়েছিল একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে, যাতে শিল্পীদের রক্ষা করা যায়, যাতে সরকার শিল্পকর্মে হস্তক্ষেপ না করে। কিন্তু এখন সরকার নির্মাতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে এবং তাদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে।”
সমালোচক রাহুল দেশাই পাঞ্জাব’ ৯৫ একটি ব্যক্তিগত স্ক্রিনিংয়ে দেখেছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “এটি এতটাই সুন্দরভাবে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র, যা আজকের দিনে দর্শকদের মধ্যে বিদ্রোহের অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে পারে। বিশেষ করে যারা বর্তমানে শাসনব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট। তাই বোঝা যায়, সরকার কেন এতটা অস্বস্তিতে রয়েছে।”
দিলজিৎ ও ত্রেহান প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা সিবিএফসির প্রস্তাবিত কাট মানবেন না।
এর ফলে সিনেমাটি এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এর প্রিমিয়ার হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (টিআইএফএফ)। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই প্রদর্শনী বাতিল করা হয়। এরপর অন্যান্য আন্তর্জাতিক উৎসব থেকে আসা আমন্ত্রণগুলোও প্রত্যাখ্যান করা হয়।
তথ্যসূত্র : আল জাজিরা