আর কয়েকদিনের অপেক্ষা। এরপর গত বিপিএলে ফিক্সিংয়ের ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট তৈরির কাজ শেষ হবে। ২৫ আগস্ট তা প্রাথমিকভাবে জমা পড়বে বিসিবি প্রেসিডেন্টের টেবিলে। সেই রিপোর্টের ফলাফল আদৌ প্রকাশিত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
কারণ দেশের ক্রিকেটে এর আগেও তদন্ত রিপোর্ট ফাইলবন্দি হয়েই থেকেছে। বা গুটিকয়েক কর্মকর্তাদের মাঝেই আটকে গেছে। ২০২৩ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তাহলে বিপিএল ফিক্সিংয়ের তদন্ত প্রতিবেদন কতটা প্রকাশ্যে আসবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
বিপিএল ফিক্সিংয়ের স্বাধীন তদন্ত কমিটির রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সূত্র মাধ্যমে সকাল সন্ধ্যা জানতে পেরেছে মোট ১০-১২ জন ক্রিকেটারের নাম ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে ৩-৪ জনের নাম জড়িয়ে আছে গভীরভাবে। জাতীয় দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজেও খেলেছেন এমন একজন জনপ্রিয় ক্রিকেটারও আছেন। এছাড়া দুই জন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার- একজন পেসার, অন্যজন স্পিনার। আছে এক তরুণ পেসারের নামও।
তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণ সাপেক্ষে এই ক্রিকেটারদের শাস্তির সুপারিশও করা হবে বলে জানা গেছে। কিন্তু কার কতটুকু দোষ এবং সেই অনুযায়ী শাস্তি কেমন তা প্রকাশ করা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মোহাম্মদ আশরাফুলের ফিক্সিং ঘটনার পর প্রায় প্রতি বিপিএলেই, বিশেষ করে গত কয়েক মৌসুম ধরে ফিক্সিংয়ের জোড়ালো অভিযোগ উঠেছে। ওই অভিযোগ পর্যন্তই ছিল, এরপর আর এগোয়নি বিসিবি।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, “ফিক্সিংয়ে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই প্রকাশ করা উচিত এবং শাস্তিও হওয়া উচিত। কারণ যে বা যারা জড়িত তারা দেশের ক্রিকেটকে কলুষিত করছে। এটাই তো অ্যান্টি-করাপশনের কাজ, নাহলে তাদের কেন রাখা হয়েছে।”
একই সঙ্গে ফিক্সিং রোধের জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলেছেন সুজন, “কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়। যেমন অ্যান্টি-করাপশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকরা প্রতি দলের সঙ্গেই থাকে। তারা কোনও ক্রিকেটারকে সন্দেহ করলে তার বা তাদের ব্যাগ বারবার চেক করতে থাকবেন। কোন ফোন তাদের হাতে আছে, তারা কোথাও যোগাযোগ করছে কিনা, এ নিয়ে তৎপর হবেন। এরকম হলে ক্রিকেটাররা সতর্ক হয়ে যাবে। এরকম পদক্ষেপগুলি ফিক্সিং প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।”
আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ তদন্ত কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে, “যে নেতিবাচক দিকগুলো আমরা গত ডিপিএলে (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ) দেখেছি, সেটা যদি থামানো না যায় তাহলে দিন দিন বাড়বেই। অ্যান্টি-করাপশন ইউনিটের ওপর প্রভাব থাকে ক্রিকেট বোর্ডেরও। কিন্তু আমার মতে, প্রভাবমুক্তভাবে তদন্ত করার সুযোগ দিতে হবে ইউনিটকে।“
ফিক্সিং তদন্ত রিপোর্টে বেশ ভালোভাবে উঠে এসেছে দুর্বার রাজশাহী, সিলেট স্ট্রাইকার্স ও ঢাকা ক্যাপিটালসের নাম। তিন দলেরই কিছু ক্রিকেটার সন্দেহভাজনের তালিকায় আছেন। প্রাথমিক তদন্তের এই রিপোর্টে মোট তিন হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠা তৈরি হয়েছে। ৩০০ ঘণ্টারও বেশি সাক্ষাৎকার আছে ক্রিকেটারদের। আর মোট ৩৬টি ঘটনা আছে সন্দেহের তালিকায়।
প্রাথমিক রিপোর্টে সন্দেহভাজন ক্রিকেটারদের সুষ্ঠভাবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্রিকেট থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিতে যাচ্ছে তদন্ত কমিটি। সামনের জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে কিছু ক্রিকেটারদের তাই দেখা যাবে না, এটা নিশ্চিত।