অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মাঝে রাজনৈতিক অস্থিরতা, তাতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ছেন শিগিরু ইশিবা।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির এই প্রধানমন্ত্রী রবিবার জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পূর্বসূরি ইওয়োশিহিদে সুগা এবং সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের একজন শিনজিরো কোইজুমির সঙ্গে বৈঠক করার একদিন বাদেই পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন ইশিবা।
শিনজো আবের দায়িত্ব নেওয়ার আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর পদটিতে বেশ আসা-যাওয়া চলছিল। ২০২০ সালে আবে চলে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হন সুগা, তারপর দায়িত্বে ছিলেন ফুমিও কিশিদা।
ইশিবা গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না। গত জুলাই মাসে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের নির্বাচনে তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) হারার পর তার ওপর চাপ আরও বাড়ে।
তারপরও পদত্যাগের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করছিলেন ইশিবা। তার বদলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক খড়গ মোকাবেলায় জোর দেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হয়।
কিছুটা আবেগময় ভাষায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ৬৮ বছর বয়সী ইশিবা বলেন, “জাপান [যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে] বাণিজ্য চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছে, আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা অতিক্রম করেছি।”
এরপরই তিনি বলেন, “আমি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দায়িত্ব তুলে দিতে চাই।”
পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কেন?
ইশিবা গত বছরের অক্টোবরে এলডিপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তবে এখন দলটি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।
ইশিবা এক মাসের বেশি সময় ধরে নিজের দলের ভেতরের ডানপন্থী বিরোধীদের চাপ মোকাবেলা করে আসছেন।
পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তিনি এমন এক সময় জানালেন যখন তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি নেতৃত্ব নির্ধারণে একটি আগাম নির্বাচনে দিকে যাচ্ছিল।
সোমবার অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত যদি হয়, তাহলে তা ইশিবার ওপর অনাস্থা হিসাবে গণ্য হতো। তার আগেই সরে দাঁড়ালেন তিনি।
এলডিপিকে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইশিবা বলেছেন, উত্তরসূরি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
জাপানের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, দলের মধ্যে বিভাজন এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইশিবা।
অন্যদিকে আসাশি শিম্বুন পত্রিকা বলছে, ইশিবা তার পদত্যাগের ক্রমবর্ধমান চাপ সহ্য করতে পারেননি।
জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়ে জাপানিদের ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে সরকারের ওপর। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে গত সপ্তাহে জাপানের মুদ্রা ইয়েন এবং সরকারি বন্ডের ব্যাপক বিক্রি দেখা গেছে।
এর পরপরই দলের সভাপতি সুগার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ইশিবা। সেই সঙ্গে বর্তমান কৃষিমন্ত্রী কোইজুমির সঙ্গেও পরামর্শ করেন তিনি। তারাই তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন বলে চাউর হয়েছে।
মেইজি ইয়াসুদা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ কাজুতাকা মাইদা বলেন, “এলডিপির বারবার নির্বাচনে পরাজয়ের পর ইশিবার উপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ছিল, তাই তার পদত্যাগ অনিবার্য ছিল।”
কোইজুমি না কি তাকাইচি?
এলডিপি ক্ষমতায় থাকলে এই দলের দুই নেতার নাম সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আলোচনায় রয়েছে।
তারা হলেন- বর্তমান কৃষিমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি এবং সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী সানে তাকাইচি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমির েছলে িশনজিরো কোইজুমি ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামালের পর কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
জুনিচিরো কোইজুমির সরকারে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা তাকাইচি পরে শিনজো আবের মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন।
গত বছরের অক্টোবরে এলডিপির নেতৃত্ব নির্বাচনের লড়াইয়ে প্রথম রাউন্ডে ইশিবার চেয়ে এগিয়েছিলেন এই নারী, তবে চূড়ান্ত লড়াইয়ে হেরে যান।
অর্থনীতিতে চলমান অস্থিরতায় তকাইচিকেই ত্রাতা হিসাবে দেখছেন অনেকে। তিনি সম্প্রতি ব্যাংক অব জাপানের সুদের হার বৃদ্ধির সমালোচনা করেন।
শিনজিরো কোইজুমির পরিচিতি একজন রাজনীতিক হিসাবে। বর্তমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী হিসাবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
মেইজি ইয়াসুদা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ কাজুতাকা মাইদা বলেন, “সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের মধ্যে কোইজুমি ও তাকাইচিকে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় হিসাবে দেখা হচ্ছে।
“কোইজুমি বড় কোনও পরিবর্তন আনবেন বলে আশা করা হয় না। তবে সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব নীতির প্রতি তাকাইচির অবস্থান এবং সুদের হার বৃদ্ধির প্রতি তার সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রতি আর্থিক বাজারগুলোর আকর্ষণ বাড়াতে পারে।”
যেহেতু বর্তমান পার্লামেন্টের কোনও কক্ষে এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তাই দলটির পরবর্তী নেতাই যে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই।
বিশ্লেষকরা বলেন, যিনিই পরবর্তী নেতা হন না কেন, তিনি ম্যান্ডেট চাওয়ার জন্য একটি আগাম নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন।
জাপানের বিরোধী দল এখনও বিভক্ত থাকলেও জুলাই মাসের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে উগ্র-ডানপন্থী, অভিবাসন-বিরোধী সানসিতো পার্টি বেশ ভালো আসন পায়।
কিওদো নিউজ এজেন্সির রবিবার প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৫৫ শতাংশ জাপানি আগাম নির্বাচনের প্রয়োজন দেখছে না।
তথ্যসূত্র : সিএনএন