ফেডারেশনগুলোর সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে হাস্যকর সব কার্যক্রম চলছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি)।
এক দিন আগে কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলকে সাধারণ সম্পাদক রেখে আরচারি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। এরপর সার্চ কমিটির পদত্যাগের হুমকিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই পদে সংশোধন করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক এই সংস্থা।
এনএসসির দেওয়া অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তানভীর আহমেদকে। রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলকে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির এক নম্বর সদস্য করা হয়েছে। আগের ঘোষিত কমিটিতে এক নম্বর সদস্য পদে ছিলেন তানভীর আহমেদ। মূলত তানভীর একজন আন্তর্জাতিক জাজ, সাবেক খেলোয়াড় ও ব্যবসায়ী।
সার্চ কমিটির ভাষ্য অনুযায়ী দুই মেয়াদে কেউ কোনও ক্রীড়া ফেডারেশনে থাকবেন না, এমন নিয়মে কাজী রাজীব উদ্দীনকে তারা বাদ দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ওই পদে তাকে রেখেই বৃহস্পতিবার কমিটি ঘোষণা করেছিল। যার ফলে পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছিলেন সার্চ কমিটির প্রধান জোবায়েদুর রহমান রানা।

অবশ্য যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার আশ্বাসের ভিত্তিতে কাজী রাজীব উদ্দীন চপলকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
অথচ দেশের নতুন খেলা আর্চারিকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল। টোকিও ও প্যারিস অলিম্পিকে রোমান সানা ও সাগর ইসলাম নিজ যোগ্যতায় সরাসরি খেলেছিলেন। ২০১৯ কাঠমান্ডু এসএ গেমসে ১০ ইভেন্টেই সোনা জিতেছিল আর্চারি। গাজীপুরে নিজস্ব ভেন্যু, দীর্ঘমেয়াদী পৃষ্ঠপোষক- এ সবের নেপথ্যে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক রাজীব উদ্দীন চপল। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৮ মার্চ টঙ্গীতে আর্চারি ভেন্যুতে ফেডারেশনের নেতৃত্বের প্রশংসাও করেছিলেন।
হঠাৎ কি এমন ঘটনা ঘটলো যে রাজীব উদ্দীন চপলকে সরিয়ে দিতে হয়েছে?
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ রাজীব উদ্দীন চপলকে সাধারণ সম্পাদক করলেও ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত সার্চ কমিটির আর্চারি ফেডারেশনের সুপারিশে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না চপল। গুরুত্বপূর্ণ পদে ‘একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি নয়’ এই তত্ত্বে তারা চপলের পরিবর্তে অন্য জনের নাম সুপারিশ করেছিলেন। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় সার্চ কমিটির আহ্বায়ক জোবায়েদুর রহমান রানা উষ্মা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের হুমকিও দিয়েছিলেন। এই হুমকির প্রেক্ষিতেই মূলত আরচ্যারি ফেডারেশনের সেক্রেটারি রদবদল হয়েছে।
সার্চ কমিটি ক্রীড়া মন্ত্রলায়ের গঠিত একটি বিশেষ কমিটি। আর্চারি কমিটি বদলের মাধ্যমে সার্চ কমিটির সঙ্গে মন্ত্রণালয়-জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে। এর আগে মহিউদ্দিন বুলবুল বাফুফের নির্বাচনী প্রচারণার এক পক্ষের সভায় শুধু উপস্থিত হওয়ার জন্য কমিটি থেকে বাদ দিয়েছিল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

এদিকে ঈদের ছুটির মধ্যেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দুটি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি প্রকাশ করেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম বক্সিং ও উশু ফেডারেশনের বিদ্যমান কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটির আদেশ জারি করেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আইন ২০১৮ অনুসারে।
এই দুই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বিগত সময়ে দায়িত্ব পালন করা দুই জন। বক্সিংয়ে এমএ কুদ্দুস খান ও উশুতে দিলদার হোসেন দিলু। বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক ও ক্রিকেট দলের সাবেক ম্যানেজার লে. কর্নেল আব্দুল লতিফ খানকে (অবসর)। দুই ফেডারেশনের কমিটিই ১৯ সদস্য বিশিষ্ট। সাবেক খেলোয়াড়, কোচ, সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন হয়েছে।
এদিকে উশু ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদে দুলাল হোসেনকে সরিয়ে দিলদার হাসান দিলুকে এবং বক্সিং ফেডারেশনে মাজহারুল ইসলামকে সরিয়ে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে এমএ কুদ্দুস খানকে। এ নিয়ে ২৬টি ক্রীড়া ফেডারেশনে নতুন অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।



