ভোরের সূর্যের আবাহন হলো রাগ ভৈরবীতে, গানে গানে জানানো হলো মুক্তির বারতা, এক মিনিট নীরবতায় স্মরণ করা হলো গাজায় নিহত হাজার ফিলিস্তিনিকে।
সোমবার ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের এমন আয়োজনে সূচনা হলো বঙ্গাব্দ ১৪৩২ বরণ, যে সংগঠনটি বহন করে চলেছে বাংলার আবহমান সংস্কৃতি।
পাকিস্তানি আমলে বাঙালির জাতিসত্তার সুলক সন্ধানে ভূমিকা রেখেছিল যে আয়োজন, এবার ছিল তার ৫৮তম আয়োজন।
পালাবদলের বাংলাদেশে এবারের আয়োজনের শিরোনাম ছায়ানট করেছিল – ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’।
সকাল সোয়া ৬টায় রাগ ভৈরবীর মধ্য দিয়ে সূচনা হয় অনুষ্ঠানের, নানা গান, আবৃত্তির পর সোয়া ৮টায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে টানা হয় তার সমাপ্তি।
ছায়ানটের যাত্রাসঙ্গী সনজীদা খাতুন বিহনে প্রথম অনুষ্ঠানে সংগঠনটির পক্ষ থেকে নববর্ষ কথন পড়ে শোনান নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী। অসুস্থতা নিয়েই এই আয়োজনে যোগ দেন তিনি।
সারওয়ার আলী বলেন, “মুক্তির অন্বেষায়, দীর্ঘ বন্ধুর পথপরিক্রমায় অর্ধ শতকবর্ষ পূর্বে বিপুল আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ওই যাত্রাপথের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে বাঙালির শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীতসহ সকল মাধ্যম এবং বিভিন্ন স্থাপনায়।”
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বর্ষবরণের এই উৎসবের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা এক আলোকিত দেশ ও সমাজের স্বপ্ন দেখি, যে দেশের মানুষ সর্বজনের শান্তি-স্বস্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধর্ম-জাতি-বিত্তের বিভাজন ভাঙবে, গড়বে উদার সম্প্রীতির সহিষ্ণু সমাজ।”
চাওয়া ও পাওয়ার হিসাব মেলালে বাংলাদেশ যে এখনও সেই স্বপ্ন থেকে দূর রয়েছে, তা তুলে ধরেন মুক্তিযোদ্ধা সারওয়ার আলী।
তিনি বলেন, “একদিকে মুক্তির জন-আকাঙ্ক্ষা অর্জনের প্রত্যাশা, অন্যদিকে পীড়াদায়ক বিদ্বেষ-বিভক্তি, নারী-শিশুর অমানবিক মর্যাদাহানি ও অপরিণামদর্শী অসহিষ্ণুতা।”
এই অতৃপ্তি মোচনে সবাইকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সকলে ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ, মুক্তচিন্তার নির্ভয় প্রকাশ, আবহমান সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা হৃদয়ে ধারণ করলে মুক্তির আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুগম হবেই।”
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়। সংহতি জানানো হয় ফিলিস্তিনিদের লড়াইয়ের প্রতি।
সুপ্রিয়া দাশের রাগ পরিবেশনের পর দুই ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে সম্মেলক গানের পাশাপাশি একক গান গেয়ে শোনান ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা ইসলাম লিসা, খায়রুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, জয়ন্ত রায়, দীপ্র নিশান্ত, সেঁজুতি বড়ুয়া, মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য, ফারজানা আক্তার পপি, সুমন মজুমদার, ফারহানা আক্তার শ্যার্লি, সৈয়দা সনজিদা জোহরা বীথিকা, সুস্মিতা দেবনাথ শুচি ও আবুল কালাম আজাদ। আবৃত্তি করেন জহিরুল হক খান ও সুমনা বিশ্বাস।



