Beta
রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

ঢাকার মানুষের মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ১৬৩ ডলার

শনিবার ডিসিসিআই আয়োজিত ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স প্রণয়নবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান।
শনিবার ডিসিসিআই আয়োজিত ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স প্রণয়নবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান।
[publishpress_authors_box]

দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় যেখানে ২ হাজার ৮২০ ডলার, সেখানে ঢাকা জেলার বাসিন্দাদের মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ১৬৩ ডলার।

বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২২ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এটি দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ের প্রায় দ্বিগুণ।

শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (ইপিআই) বা অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক প্রণয়নবিষয়ক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকার মানুষের মাথাপিছু আয়ের এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সংস্থা, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালে করা জেলাভিত্তিক জিডিপির তথ্যকে ভিত্তি ধরে ঢাকা জেলার বিনিয়োগ, ভোগ, ব্যয়, আমদানি, রপ্তানি, আয়তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা জেলার মাথাপিছু আয়ের এ হিসাব অনুমান করা হয়েছে।

সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসে গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮২০ ডলার হওয়ার তথ্য দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিবিএস।

সাময়িক এ হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এক বছরের ব্যবধানে এ আয় বেড়েছে ৮২ ডলার, আগের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ২ হাজার ৭৩৮ ডলার।

এর আগে সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল ২০২১-২২ অর্থ বছরে, ২ হাজার ৭৯৩ ডলার।

দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের তথ্য দিলেও জেলাভিত্তিক আয়ের হিসাব দেয় না প্রতিষ্ঠানটি। এবার ঢাকা জেলার হিসাব তুলে ধরল ডিসিসিআই।

মাথাপিছু আয় ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয়সহ যত আয় হয়, তা একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এই হিসাব করা হয়।

মূলত ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় বিবিএসের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পার্থক্য হয়।

কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ ঢাকায়

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব একেএম আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী। তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় একটি অংশ সম্পন্ন হয় ঢাকা জেলায়। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ আসে এই জেলা থেকে। ঢাকাকে বিবেচনা করা হয় আর্থিক খাতের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাড়ে ৭০০–এর বেশি কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ঢাকা জেলায় অবস্থিত।

আসাদুজ্জামান জানান, দেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩২ শতাংশের বাস ঢাকা জেলায়। আর মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ঢাকায় থাকে। ঢাকা খুবই শিল্পঘন জেলা।

দেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি হয় এ জেলা থেকে। সব মিলিয়ে মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) এককভাবে ৪৬ শতাংশ অবদান রাখছে ঢাকা জেলা।

ইপিআই সূচক চালু করবে ঢাকা চেম্বার

দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (ইপিআই) বা অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা চেম্বার। তিন মাস পরপর ইপিআই সূচক প্রকাশ করা হবে।

এতে মূলত শিল্প ও সেবা খাতের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পরিবর্তন চিহ্নিত করা হবে এবং তার আলোকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।

আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ পরিমাপের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন সূচক, যেমন বিসিআই, ইজ অব ডুইং বিজনেস ইনডেক্স, জিডিপি প্রভৃতি রয়েছে। তবে এসব সূচক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকৃত পরিবর্তন ও কারণগুলো যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে পারে না। সরকার অনেক সময় ভূ–অর্থনৈতিক পটভূমি নীতিনির্ধারণ করে, কিন্তু হালনাগাদ তথ্য না থাকায় সেগুলো সব সময় কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।

এমন বাস্তবতায় ইপিআই সূচক প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তাসকিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ঢাকা জেলাকে কেন্দ্র করে এই সূচক প্রকাশ করা হবে। ভবিষ্যতে সারা দেশে এর আওতা বাড়ানো হবে।

তাসকিন আহমেদ বলেন, “অর্থনৈতিক কার্যক্রম মূল্যায়নের প্রচলিত পদ্ধতিতে আমরা সাধারণত বার্ষিক বা প্রান্তিক জাতীয় হিসাবের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দ্রুত পরিবর্তনশীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও ব্যবসায়িক আস্থা মূল্যায়নে রিয়েলটাইম বা হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ জরুরি।”

ডিসিসিআই প্রণীত ইপিআই দেশের উৎপাদন ও সেবা খাতের কার্যক্রম ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মূল্যায়ন করবে। এর মাধ্যমে উৎপাদন, বিক্রয়, রপ্তানি, ক্রয়াদেশের প্রবাহ, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের প্রবণতা জানা সম্ভব হবে।

প্রাথমিকভাবে সূচকের হিসাবে ছয়টি উপখাত রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—তৈরি পোশাক, বস্ত্র, পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়, আবাসন, পরিবহন ও সংরক্ষণ এবং ব্যাংক খাত।

গত বছরের দুটি প্রান্তিকের তথ্য নিয়ে প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থান সূচকের (ইপিআই) তথ্য প্রকাশ করেছে ঢাকা চেম্বার। এ জন্য শূন্য থেকে এক পর্যন্ত মোট ছয়টি স্কোর নির্ধারণ করেছে তারা। এগুলো হচ্ছে (অর্থনীতির গতি) খুবই কম, কম, মাঝামাঝি, বেশি ও অনেক বেশি। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৮০ স্কোর পেয়ে ২০২৪ সালের অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিকে ঢাকা জেলার অর্থনীতি বেশি বা ভালো গতিতে এগিয়েছিল বলে জরিপে উঠে আসে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, ওই বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে অর্থনীতি অনেকটা স্তিমিত ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু ত্বরিত সিদ্ধান্তের কারণে পরের প্রান্তিকে অর্থনীতি ভালো করেছে।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, “স্থানীয় বিভিন্ন সূচকে দেখা যায়, দেশের অর্থনীতি ভালো করছে। কিন্তু বৈশ্বিক সূচকের কিংবা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখতে পাই, আমরা বিভিন্ন সূচকে সবচেয়ে নিচের দিকে থাকি। তাই এসব সূচকের তথ্যে আত্মতুষ্টির কারণ নেই; বরং এসব সূচককে বৈশ্বিক মানের সঙ্গে তুলনা করে প্রকাশ করলে সেটি বেশি কার্যকর হবে।”

অনুষ্ঠানে ইপিআই সূচকটি প্রতি মাসে প্রকাশ করার ও সূচকের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দেন ঢাকা চেম্বারের আরেক সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত