ভারতের বিশ্বকাপের দলে শুরুতে জায়গা পাননি শেফালি বর্মা। তাই ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা খেলছিলেন। ফর্মে থাকা প্রতিকা রাওয়াল চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আগে দলে সুযোগ পেয়েছিলেন শেফালি। ফাইনালে সেই শেফালিই ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করলেন।
ব্যাটে-বলে দাপট দেখালেন তিনি। প্রত্যাবর্তনের কাহিনি লিখলেন ভারতের এই ক্রিকেটার। ব্যাট হাতে ৮৭ রানের পর বল হাতে নিলেন ২ উইকেট। জিতলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কারও।
ভারতের ওপেনিং জুটি প্রতিকা ও স্মৃতি মান্ধানা রান পাওয়ায় কেউ শেফালির কথা বলছিল না। কিন্তু প্রতিকা চোট পাওয়ার পরে সেই তার দিকেই নজর দেয় ম্যানেজমেন্ট। তড়িঘড়ি ডেকে পাঠানো হয় তাকে। শেফালি এসে শুধু ভাল খেললেন না, দলকে জেতালেনও।
নিজের বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়ার মধ্যে ঈশ্বরের নির্দেশ দেখতে পেয়েছিলেন শেফালি। বলেছিলেন, “প্রতিকার সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। কেউ চায় না, একজন ক্রীড়াবিদ ও রকম চোট পাক। কিন্তু যা হয়েছে তা ঈশ্বরের নির্দেশে। ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন ভাল কিছু করার জন্য।” সেই নির্দেশের প্রতিদান দিলেন শেফালি।

ফাইনালে ৪৫ হাজার দর্শকের সামনে শেফালি লম্বা ইনিংল খেললেন। ৭৮ বলে ৮৭ রান করলেন ভারতের ওপেনার। তার ব্যাটে ভর করে বড় রান করল ভারত। শেফালি ভাল শুরু না দিলে ২৯৮ রান করা সম্ভব হত না হারমানপ্রীত কৌরদের।
২১ বছর ২৭৮ দিন বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনালে অর্ধশতরান করলেন শেফালি। পুরুষ ও মহিলাদের ক্রিকেট মিলিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বকনিষ্ঠ ওপেনার হিসাবে ফিফটি করলেন তিনি। পুরুষদের ক্রিকেটে এত দিন এই রেকর্ড ছিল বীরেন্দ্র শেবাগের। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ২৪ বছর ১৫৪ দিন বয়সে অর্ধশতরান করেছিলেন তিনি। শেফালি নিজের আদর্শ মনে করেন শেবাগকেই। তার খেলার ধরন অনেকটা শেবাগের মতোই। শুরু থেকে বড় শট খেলতে পারেন। যত ক্ষণ মাঠে থাকেন, তাকে থামানো যায় না। সেই গুরুকেই ছাপিয়ে গেলেন শেফালি। পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে এক দিনের বিশ্বকাপে কোনও ভারতীয় ওপেনার হিসাবেও সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেললেন শেফালি।
ভারতের বিশেষজ্ঞ বোলারেরা যখন উইকেট তুলতে পারছেন না তখন শেফালির হাতে বল তুলে দেন হারমানপ্রীত। এর আগে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ১৪ ওভার বল করেছিলেন তিনি। সেই শেফালিই ভারতকে খেলায় ফেরান। প্রথম ওভারেই সুনে লুসকে ফেরান তিনি। নিজে বল করে নিজেই ক্যাচ ধরেন।
পরের ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরও বড় ধাক্কা দেন শেফালি। মারিজ়ান কাপকে আউট করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়া করার ক্ষেত্রে কাপের বড় ভূমিকা ছিল। সেই কাপকে ফিরিয়ে খেলার রাশ ভারতের হাতে এনে দেন তিনি। সাত ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। ম্যাচের সেরাও হন শেফালি।

খেলা শেষে শেফালির মুখে শোনা গেল সেই ঈশ্বরের নির্দেশের কথাই। তিনি বললেন, “ঈশ্বর আমাকে ভাল কিছু করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। এই ম্যাচে সেটাই দেখা গেল। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতেছি। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।” বাইরে থেকে হঠাৎ করে দলে ঢুকলেও নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন শেফালি। তিনি বললেন, “আমি খেলার মধ্যেই ছিলাম। নিজের উপর বিশ্বাস ছিল। নিজেকে শান্ত রেখেছিলাম। জানতাম, আমি পারব। আমার পরিবার, বন্ধুরা আমাকে অনেক উদ্বুদ্ধ করেছে।”
ফাইনালে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলেন শেফালি। সেটাই করার চেষ্টা করেছেন। শেফালি বললেন, “এই ম্যাচে আমার একটাই লক্ষ্য ছিল। রান করতে হবে। দলের সকলে আমাকে বলেছিল, স্বাভাবিক খেলা খেলতে। আমি নিজের স্বাভাবিক খেলাই খেলেছি। বড় শট মেরেছি। শতরান করতে পারতাম। কিন্তু আমার কাছে দলের রান বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দলের জয়ে আমার যোগদান রয়েছে। এর থেকে ভাল কিছু হতে পারে না।”
শেফালি ভক্ত শচীন টেন্ডুলকারের। এই ম্যাচ শচীন গ্যালারিতে বসে তার ব্যাটিং দেখেছেন। এর থেকে অনুপ্রেরণার আর কিছু হতে পারে না শেফালির কাছে। তিনি বললেন, “শচীন স্যারকে দেখে আমার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছিল। তার সঙ্গে আমার কথা হয়। উনি সবসময় আমাকে আত্মবিশ্বাস জোগান। উনি কিংবদন্তি। তার কাছে শেখার অনেক কিছু আছে। চেষ্টা করি শেখার।’’



