Beta
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

৪.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস দিল আইএমএফ

imf-headquarter-050624
[publishpress_authors_box]

এডিবি ও বিশ্ব ব্যাংকের পর আইএমএফ চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে।

আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি মনে করছে, ২০২৫–২৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। এই আর্থিক বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) হার গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের চেয়ে বাড়বে। আবার মূল্যস্ফীতির হার কমবে।

আইএমএফ বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। অন্তর্বর্তী সরকার এই আর্থিক বছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ বা ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইএমএফের নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ বছর (২০২৫ সাল, ক্যালেন্ডার বছর) বৈশ্বিক জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

আইএমএফ গত জুন মাসে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। তিন মাসের ব্যবধানে পূর্বাভাস কমিয়েছে। যদিও এর কারণ আউটলুকে উল্লেখ করা হয়নি।

এক সপ্তাহ আগে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক তাদের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদনে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে।

দুই সপ্তাহ আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের (এডিও) প্রতিবেদনে চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশে ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। এ হার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল ১০ শতাংশ।

গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছিল ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত জুনে শেষ হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। ইতোমধ্যে তিন মাস পার হয়ে গেছে; কিন্তু এখনও ওই অর্থ বছরের জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

গত ২৭ মে যে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছিল, তাতে গত অর্থ বছরের ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হয়েছিল।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ২২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থ বছর শেষে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হবে। গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ছিল ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

আগের মাস আগস্টে অর্থাৎ অর্থ বছরের দ্বিতীয় মাসে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচক কমে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে নেমেছিল, যা ছিল ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল দেশে। এরপর আর কখনও ৮ শতাংশের নিচে নামেনি।

অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল দেশে।

গত অর্থ বছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।

টানা কয়েক মাস কমে গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে আসে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে কিছুটা বেড়েছিল; আগস্টে আবার নিম্মমূখী হয়। সেপ্টেম্বরে ফের বেড়েছে।

বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে

চলতি বছরের জন্য বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস কিছুটা বাড়িয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি গত জুলাইয়ে চলতি বছর বৈশ্বিক জিডিপিতে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। এর আগে এপ্রিলের পূর্বাভাসে এ হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাক্কলন করেছিল। বছরের তৃতীয় পূর্বাভাসে সংস্থাটি ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলল।

বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে, সারা দুনিয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধীরে ধীরে ইতিবাচক গতি ফিরে আসছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি বড় অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি হয়েছে। এ কারণে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের খারাপ প্রভাব এড়ানো গেছে।

২০২৬ সালের জন্য আইএমএফ বৈশ্বিক জিডিপিতে ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটি মনে করছে, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি ও প্রধান অর্থনীতিগুলোর স্থিতিশীল আর্থিক নীতি অব্যাহত থাকবে।

যদিও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাণিজ্য উত্তেজনা এখনও বড় ঝুঁকি হয়ে রয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত