আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
শুক্রবার দিবাগত রাতে ফেইসবুকে এক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার দুপুরে ফেইসবুকে এক পোস্টে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী ৫ আগস্ট বিকাল ৫টায় জাতির সামনে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে।
পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা। ৫ই আগস্টের মধ্যেই তা ঘোষিত হবে। ঘোষণাপত্র ইস্যুকে গণআকাঙ্ক্ষায় বাঁচিয়ে রেখে এটা বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।”
বাসস জানিয়েছে, গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত দল ও সংগঠনগুলোর মাঝে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই জুলাই ঘোষণাপত্র।
অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল এনসিপিসিহ বিভিন্ন দলকে পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার।
ঐকমত্য কমিশন এ নিয়ে রাজনৈতিক দল সমূহের সাথে কয়েক দফা বৈঠক ও মতবিনিময় করেছে।
এর আগে গত ২৯ জুলাই মঙ্গলবার এক পোস্টে অভ্যুত্থানের পর বছর গড়াতে চললেও জুলাই সনদ চূড়ান্ত না হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দুষেছিলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, যাকে এই অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ অভিহিত করেন খোদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সেই পোস্টে জুলাই সনদ ঘোষণায় দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি লেখেন, সবকিছুর পরও ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ে যে আন্দোলনের সূচনা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে, সেই প্ল্যাটফর্মের নেপথ্যের চালিকা শক্তি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহফুজ।
রক্তাক্ত এক পথ পেরিয়ে সেই আন্দোলন অভ্যুত্থানে রূপ নেয়, তাতে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। অভ্যুত্থানকারীদের মতামতের ভিত্তিতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
কোনও ঘোষণপত্র ছাড়াই অভ্যুত্থান ঘটে যাওয়ার পর তার স্থায়ী স্বীকৃতির জন্য জুলাই সনদ প্রণয়নের ঘোষণা গত ডিসেম্বরে দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারই তা প্রণয়ন করবে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিনের প্রতিবেদন জমা পড়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই এর প্রধান হন, সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় আলী রীয়াজকে।
একটি জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে টানা বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার দুপুরে ওই ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী মঙ্গলবার, ৫ই আগস্ট, ২০২৫ বিকেল ৫টায় গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে।”
বিডিনিউজ জানিয়েছে, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কাজ চলে। জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রাথমিক খসড়া করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির মতামত নেওয়া হয়। এরপর প্রণীত খসড়ার ওপর দলগুলোর ফের মতামত চায় সরকার। এখন সেই খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানানো হলো।
প্রথম আলো জানিয়েছে, ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে।
পরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।