বিশ্বজুড়ে পরিবেশবিদেরা যখন হন্যে হয়ে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের উপায় খুঁজছেন, তখন জাপানের ম্যানিকিউরিস্ট বা নখ পরিচর্যাকারী নাওমি আরিমোতো হাতে নিয়েছেন ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ।
টোকিওর দক্ষিণে নিজের বাড়ির কাছের সমুদ্র সৈকতে আরিমোতো নিয়মিতভাবে বালুর ভেতর পড়ে থাকা ছোট ছোট প্লাস্টিকের টুকরা সংগ্রহ করেন, যে টুকরাগুলো পরে তিনি ব্যবহার করেন নখ সাজাতে।
৪২ বছর বয়সী আরিমোতো জানান, সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার করার কাজে অংশ নেওয়ার পর এই আইডিয়া তার মাথায় আসে।
“আমি যখন নিজের চোখে দেখলাম সমুদ্রে কত প্লাস্টিকের আবর্জনা রয়েছে, তখনই আমি পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠি। সাগরে এত বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই।”
জাতিসংঘের তথ্যের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, প্রতি বছর প্রায় ২০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে নিক্ষিপ্ত হয়। এই সমস্যা মোকাবেলায় একটি ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে জাতিসংঘের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
২০১৮ সালে মেরুদণ্ডজনিত অসুস্থতার কারণে সমাজকর্মীর পেশা ছেড়ে আরিমোতো নিজের বাড়িতে নখ পরিচর্যাকেন্দ্র চালু করেন। ২০২১ সাল থেকে তিনি ‘উমিগোমি’ বা ‘সমুদ্রের আবর্জনা’ দিয়ে নখ সাজানোর কাজ শুরু করেন। প্রতি মাসে তিনি নিজের হুইলচেয়ারে বসে সৈকত থেকে ছোট ছোট প্লাস্টিকের টুকরা সংগ্রহ করেন, যে টুকরাগুলো অন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চোখ এড়িয়ে যায়।
প্লাস্টিকের টুকরাগুলো সংগ্রহের পর তিনি প্রথমে ধুয়ে রঙ অনুযায়ী আলাদা করেন। এরপর এগুলোকে ছোট টুকরায় কেটে ধাতব ছাঁচে গলিয়ে রঙিন ডিস্ক তৈরি করেন, যা কৃত্রিম নখে লাগানো যায়। এই পরিবেশবান্ধব উপায়ে নখ সাজানোর জন্য খরচ শুরু হয় ১২ হাজার ৭৬০ ইয়েন (প্রায় ৮২.৫২ ডলার) থেকে।
আরিমোতো বিশ্বাস করেন, তার এই উদ্যোগ বিপুল জলরাশির মধ্যে পানির একটি ফোটার মতো হলেও তা প্লাস্টিক দূষণের বিশাল সমস্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, “মানুষ যখন তাদের আঙুলের ডগায় এই ডিজাইন দেখবে, তারা ফ্যাশন উপভোগ করার পাশাপাশি পরিবেশগত সমস্যাগুলো সম্পর্কে আরও সচেতন হবে।”
এই উদ্যোগ আরিমোতোর গ্রাহকদের কাছেও প্রশংসিত হচ্ছে। ৫৭ বছর বয়সী কিয়োকো কুরোকাওয়া বলেন, “রিসাইকেলড সামগ্রী দিয়ে এমনভাবে নখ সাজানো যায়, তা ভাবতেও পারিনি। এটি সত্যিই অসাধারণ।”
নাওমি আরিমোতো আশা করেন, তার এই ছোট উদ্যোগ বৃহত্তর পরিবর্তনের জন্য সচেতনতা তৈরি করবে এবং সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার প্রেরণা যোগাবে।