Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নারীদের লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করল তালেবান

তালেবান শাসনে নারীদের কেন করে থাকতে হবে, তা দেখানো হয়েছে এই পোস্টাারে। ছবি : গার্ডিয়ান
তালেবান শাসনে নারীদের কেমন করে থাকতে হবে, তা দেখানো হয়েছে এই পোস্টাারে। ছবি : গার্ডিয়ান
[publishpress_authors_box]

চার বছর আগে তালেবান পুনরায় আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পর কেউ কেউ ভেবেছিল, তারা কিছুটা বদলাবে। তালেবান নেতাদের কথায়ও সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে, আগের তালেবানকেই দেখা যাচ্ছে।

এবার তালেবান সরকার নতুন একটি নির্দেশ জারি করেছে; তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম থেকে নারীদের লেখা বই বাদ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে মানবাধিকার এবং যৌন হয়রানি বিষয়ক শিক্ষাও করা হয়েছে নিষিদ্ধ।

নারীদের লেখা দেড়শ বইয়ের তালিকায় ‘সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি’ বইটিও রয়েছে। মোট ৬৮০টি বইয়ের এই তালিকা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এগুলো ‘শরিয়াবিরোধী’ এবং ‘তালেবান নীতির পরিপন্থী’।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও বলা হয়েছে যে তারা ১৮টি বিষয় আর পড়াতে পারবে না। একজন তালিবান কর্মকর্তা বলেছেন, এই বিষয়গুলো শরিয়ার মূলনীতি এবং সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এই আদেশটি ২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে আনা ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞার সর্বশেষ সংযোজন।

আফগানিস্তানে এখন কিশোরীদের জন্য মাদরাসাই একমাত্র শিক্ষার পথ।

এই সপ্তাহেই তালিবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০টি প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, অনৈতিকতা রোধ করার জন্য এই পদক্ষেপ।

এই বিধিগুলো জীবনের অনেক দিককে প্রভাবিত করলেও নারী ও মেয়েদের ওপর এর প্রভাব বিশেষভাবে গুরুতর।

তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পরপরই ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে মেয়েদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের শেষের দিকে ধাত্রীবিদ্যা বিষয়ক কোর্সগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিষয়গুলো নারীদের নিয়ে ছিল, সেগুলোও লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। নিষিদ্ধ হওয়া ১৮টি বিষয়ের মধ্যে ৬টি বিশেষভাবে নারীদের নিয়ে, যার মধ্যে রয়েছে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন এবং উইমেনস সোশিওলজি।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তালেবান সরকার দাবি করে আসছে, তারা আফগান সংস্কৃতি এবং ইসলামিক আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নারীদের অধিকারকে সম্মান করে।

নতুন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিবিসি তালেবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনও মন্তব্য পায়নি।

‘বিশাল শূন্যতা’

নিষিদ্ধ হওয়া বইগুলো পর্যালোচনাকারী কমিটির একজন সদস্য বিবিসি আফগানকে বলেছেন, “নারীদের লেখা কোনও বই পড়ানোর অনুমতি নেই।”

তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার আগের বিচার উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলি বলছেন, তিনি এই পদক্ষেপে বিন্দুমাত্র বিস্মিত হননি।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “গত চার বছরে তালেবান যা করেছে, তা বিবেচনা করলে পাঠ্যক্রমে এমন পরিবর্তন আনা তাদের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত ছিল না।

“তালেবানের নারীবিদ্বেষী মানসিকতা এবং নীতিগুলোর কারণে যখন নারীদের নিজেদেরই পড়াশোনার অনুমতি নেই, তখন তাদের মতামত, ধারণা এবং লেখালেখিও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।”

নিষিদ্ধ তালিকায় নিজের লেখা একটি বইও খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন জাকিয়া আদেলি।

এই নতুন নির্দেশ আগস্টের শেষের দিকে তালেবান সরকার থেকে জারি করা হয়।

উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাডেমিক বিষয়ক উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিউবি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো এক চিঠিতে বলেন, এই সিদ্ধান্তগুলো ধর্মীয় পণ্ডিত এবং বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেলের পরামর্শে নেওয়া হয়েছে।

পড়াশোনা করতে না পেরে আফগান তরুণীরা এখন কার্পেট তৈরিতে ব্যস্ত রাখছেন নিজেদের।

নারীদের লেখা বইয়ের পাশাপাশি এই নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে প্রতিবেশী দেশ ইরানি লেখক বা প্রকাশকদের বইও।

বই পর্যালোচনা প্যানেলের একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, আফগান পাঠ্যক্রমে ইরানি বিষয়বস্তুর অনুপ্রবেশ রোধের জন্য এটা করা হয়েছে।

আফগানিস্তানের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো ৫০ পৃষ্ঠার তালিকায় ৬৭৯টি বইয়ের নাম রয়েছে, যার মধ্যে ৩১০টি হয় ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এর ফলে শিক্ষাদান কাজে একটি বড় শূন্যতা তৈরি হবে, তা পূরণ প্রায় অসম্ভব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শিক্ষক বলেন, “ইরানি লেখক এবং অনুবাদকদের বই আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বৈশ্বিক শিক্ষা সম্প্রদায়ের প্রাথমিক সংযোগ হিসেবে কাজ করে। এগুলো সরিয়ে ফেলার ফলে উচ্চশিক্ষায় এক বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে।”

কাবুল ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক বিবিসিকে বলেন, তাদের এখন তােলবান সরকারের আরোপিত বিধি-নিষেধগুলো বিবেচনা করে পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় প্রস্তুত করতে হচ্ছে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, এই অধ্যায়গুলো বৈশ্বিক মান অনুযায়ী প্রস্তুত করা যাবে কি না?

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত