২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা ৫৮ বছর বয়সী মারিয়া কোরিনা মাচাদো।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য দীর্ঘদিনের সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে ভেনেজুয়েলার এই রাজনীতিককে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, মারিয়া কোরিনা মাচাদো সাম্প্রতিক সময়ে লাতিন আমেরিকার সাহসিকতার অনন্য উদাহরণ হিসেবে আবির্ভূত হন।
কমিটির চেয়ারম্যান ইয়রগেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস বলেছেন, মাচাদো গুরুত্বপূর্ণ ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, মাচাদো ২০ বছরেরও বেশি আগে মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, অর্থাৎ বন্দুকের বদলে ব্যালট বেছে নিয়েছিলেন।
“এটাই গণতন্ত্রের মূল চেতনা, আমাদের ভিন্নমত থাকলেও জনগণের শাসনের নীতিকে রক্ষা করার যৌথ ইচ্ছা। যখন গণতন্ত্র হুমকির মুখে, তখন এই যৌথ ভিত্তিকে রক্ষা করা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
ইয়রগেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস ব্যাখ্যা করছেন ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি কেমন। তিনি বলছেন যে সেখানে গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরস্কার পেতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছিল। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই যে নোবেল শান্তি পুরস্কার চেয়েছেন সেটাও কোনও গোপন বিষয় নয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেই অল্প কয়েকজন বিশ্বনেতার একজন, যারা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন।
কিন্তু, ট্রাম্পকে হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
কারণ এই বছরের পুরস্কারের মনোনয়ন জানুয়ারিতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ঠিক তখনই যখন তার দ্বিতীয় মেয়াদ ওভাল অফিসে শুরু হচ্ছিল।
এর আগে সাহিত্যসহ আরও চারটি ক্যাটেগরিতে বিষয়ে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন হাঙ্গেরীয় লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই।
শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসা বিষয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে জাপানের শিমন সাকাগুচি, মার্কিন গবেষক মেরি ব্রানকাও ও ফ্রেড রামসডেল। তাদের গবেষণা বর্তমানে অটোইমিউন রোগ ও ক্যান্সারের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মেটাল অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির গবেষণার জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সাসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমর ইয়াগি। এই তিন বিজ্ঞানীর কাজ আমাদের গ্রহের সবচেয়ে বড় কিছু সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
যেমন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্বন ডাই-অক্সাইড ধরে রাখা, এবং রসায়ন ব্যবহার করে প্লাস্টিক দূষণ কমানো।
আর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরে ও জন এম. মার্টিনিস, বৈদ্যুতিক সার্কিটে বৃহৎ মাত্রার কোয়ান্টাম টানেলিং ও শক্তির পরিমিত বিভাজন আবিষ্কারের জন্য তারা এই পুরস্কার পান।
১৯০১ সালের পর থেকে প্রতি বছর নোবেল কমিটির সদস্যরা গোপনে একত্রিত হয়ে এই পুরস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
তবে তারা কখন এই আলোচনা করেন সেটা প্রকাশ করেন না, আর তাদের চূড়ান্ত বৈঠকের বিষয়টি এখন পর্যন্ত সাংবাদিকরাও জানতে পারেনি।
নোবেল কমিটির সদস্যরা যে কক্ষে বসে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন সেই কক্ষে প্রবেশের অনুমোদন পেয়েছে বিবিসি।
নরওয়ের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার সঙ্গে মিলে বিবিসি পর্দার আড়ালের এই প্রক্রিয়া এক নজরে দেখার সুযোগ পেয়েছে, যা নোবেল পুরস্কারের ১২৫ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম।
“আমরা আলোচনা করি, তর্ক করি, খুব উত্তপ্ত অবস্থা থাকে,” বিবিসিকে বলেন নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়রগেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস।
“কিন্তু অবশ্যই আমরা ভদ্র এবং আমরা প্রতি বছর একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করি।”
এই কমিটির সদস্য কারা হবেন সেটা ঠিক করে দেন নরওয়ের পার্লামেন্ট সদস্যরা। সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত পার্লামেন্ট সদস্যরাই কমিটির সদস্য হন।
নরওয়ের নোবেল কমিটি কাদের এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন তা আগেভাগে জানার উপায় নেই।
কারণ এই তথ্য কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়, যা ৫০ বছর পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না।
প্রতিটি নোবেল পুরস্কারে থাকে একটি মেডেল, একটি ব্যক্তিগত সনদপত্র (ডিপ্লোমা), এবং একটি নগদ অর্থ পুরস্কার।
এ বছর প্রতিটি পুরস্কারের অর্থমূল্য হবে ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা বা ১১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৫ মার্কিন ডলার।
এর মানে হলো, যদি একজন ব্যক্তি পুরস্কার পান, তিনি পুরো টাকাটাই পাবেন। কিন্তু যদি কোনও বিজ্ঞানীর দল পুরস্কার পায়, তাহলে তারা সেই টাকাটা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবেন।