আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত উদ্দিন স্কয়ারে (ট্রাফিক পয়েন্টে) আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা জানান বলে জানিয়েছে বাসস।
জুলাই সনদ ঘোষণা দিতে সরকার ‘ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে’ অভিযোগ করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এর আগে বলেছেন, ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ৩ অগাস্ট তারাই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সেরে জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ প্রণয়ন চূড়ান্ত করতে চান বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
গত ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপনে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে সমাবেশ ডেকেছিল।
তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারাই জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে। তখন পিছু হটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যে প্লাটফর্মের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা।
অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে গত ১ জুলাই থেকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে দেশব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল এনসিপি।
শুক্রবার সুনামগঞ্জের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা এনসিপির আহ্বায়ক দেওয়ান সাজাউর রাজা সুমন। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়।
সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি সংস্কার, বিচার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে এগিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের দলীয় অবস্থান থেকে সরে এসে সংস্কারের পক্ষে কাজ করছে। ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র মেরামতের জন্যই জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের মানুষ সবসময় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কেবল জুলাই গণঅভ্যুত্থানই নয়, ২০২১ সালের মোদীবিরোধী দিল্লির আধিপত্যের বিরুদ্ধেও এই জেলার মানুষ নিজের রক্ত ও জীবন দিয়েছেন।
নাহিদ বলেন, “২৪ এর অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের তিনজন শহীদ আয়াতুল্লাহ, শহীদ হৃদয়, শহীদ সোহাগ। আমরা তাদের ঋণ শোধ করতে পারব না। তাদের স্বপ্নের ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”
সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “সকলে ভেবেছিল ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল মাইলস্টোনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে পুঁজি করে আবারও ফ্যাসিস্ট পুনর্গঠিত হচ্ছে।”
ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও রাজনীতির স্বার্থে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করতে হবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য যে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
সুনামগঞ্জকে নতুন করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “মুজিববাদ নানা ছলেবলে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মুজিববাদের রাজনীতি বাংলাদেশে হবে না। মুজিববাদের বিরুদ্ধে সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, মুজিববাদ মানে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, লুটপাট, দুর্নীতি, ইসলাম বিদ্বেষ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখল, দেশে ভারতের কাছে বর্গা দেওয়ার রাজনীতি। সেজন্য মুজিববাদের হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ রক্ষা করতে হবে।
সুনামগঞ্জ জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। জুমার নামাজের পর পৌর শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। পদযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এতে নেতৃত্ব দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশামুল হকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন যুবশক্তির জেলা এনসিপর যুগ্ম সমন্বয়কারি আবু সালেহ নাসিম, ইসহাক আমীনী, শহীদুল ইসলাম, জেলা আহবায়ক ইমনোদ্দোজা, সদস্য সাকিব, এনসিপির জেলা কমিটির সদস্য তাসাদ্দুক রাজা ইমন, ফয়সল আহমেদ, রেজাউল করিম, আলী হোসেন খান প্রমুখ।