সময় বুঝে পানি পানে তৃপ্তি বাড়বে; আরও বাড়বে হজম শক্তি। তাহলে পানি কি খাওয়ার আগে না মাঝে না কি একেবারে শেষে পান করা ভালো হবে?
রোজকার অভ্যাসে খেয়াল রাখা চাই, শরীরের আর্দ্রতা যেন বজায় থাকে। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষ্ঠু পরিচালনায় আট গ্লাস পানি খাওয়া চিরায়ত বচন।
কখন কখন পানি পান করছেন তা বুঝেই ফলাফল বলবে শরীর। এই যেমন ঘুম থেকে ওঠার পর পানি পানে দিন শুরু করা শরীরের জন্য আদর্শ অভ্যাস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি পানের সময় মেনে চললে খাদ্যাভ্যাস থেকে ঠিক মতো পুষ্টি পৌঁছে যায় শরীরে।
অনেকে খাওয়ার ঠিক আগেভাগে অনেকখানি পানি পান করে নেন। এতে হজমে সহায়ক পাচক রস পানিতে গুলে যায়। এই অবস্থা পুষ্টির বন্টনে বাধা হয়ে ওঠে।
কখন পানি পান করবেন?
চিকিৎসকরা সব সময় খাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে পানি পানের পরামর্শ দেন। এতে পরে তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া যায় এবং শরীরে পরিপাক কাজে ভারসাম্য থাকে।
সবার জন্য হুঁশিয়ারি হচ্ছে, খাওয়ার ঠিক আগেভাগে পানি পান ভালোর চেয়ে মন্দ ডেকে আনে।
ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হসপিটালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট রাকেশ গুপ্তার পরামর্শ হচ্ছে, “২৪০ থেকে ৩৬০ মিলিলিটার পানি অন্তত খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে পান করতে হবে।
“এতে শরীর লালা ও গ্যাস্ট্রিক রস উৎপাদন হয়, যা পরে খাবার ভাঙতে কাজ করে।”
“খাবারের আগে পানিতে গলা ভিজিয়ে নিলে পেটও খানিক ভরা ভরা থাকে। তখন গ্রোগ্রাসে বেশি বেশি খাওয়ার চাহিদা কমে যাবে। আর তাতে খাদ্যাভ্যাস থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি নেওয়াতে লাগাম টানা যাবে।”
খাওয়ার আগে পানি পানের উপকারিতে আছে জানার পর আবার বেশি বেশি পানি পান করা যাবে না।
উপকারি দিক তুলে ধরতে অমৃত হাসপাতাল ফরিদাবাদের প্রধান পুষ্টিবিদ চারু দুয়া বলেন, খাওয়ার আগে পানি পানের অভ্যাস ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
এছাড়া, নিয়ম মেনে পানি পানে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ভালোভাবে কাজ করতে পারে; এতে হজম শক্তি বাড়ে এবং খাবার থেকে বেশি পরিমানে পুষ্টি পায় শরীর।
খাওয়ার মাঝে পানি চলবে?
খাওয়ার মাঝেও পানি পান করা যাবে; তবে ঢক ঢক করে গ্লাসের পানি শেষ করে দেওয়া একেবারেই ভালো কথা নয়।
চিকিৎসক গুপ্তা বলেন, “খেতে খেতে মাঝে মাঝে এক চুমুক করে পানি পান করা যায়। খাওয়ার পরেও দুয়েক চুমুক করে পানি পান হজমের কাজে উপকার করে।”
খেতে খেতে পানির গ্লাসে চুমুক দেওয়ার উপকারিতা নিয়ে দুয়া বলেন, খেতে খেতে দুয়েক চুমুক পানি পান করলে খাবার সহজে নরম হয়ে আসে। খাওয়ার মাঝে অল্প পরিমাণে পানি পানের অপকারিতা নেই।
খাওয়ার পরপরই পানি পান নয়
খাওয়ার পরপর বেশি বেশি পানি খেলে তা শরীরের উপকার নয় বরং অপকারই করে। এ কারণে অন্তত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট বিরতি নেওয়া দরকার; এরপর একটু বেশি পানি পান করলেও অসুবিধা নেই।
“মনে রাখতে হবে, পরিমিত থাকাটাই মূল কথা। বয়স, শারীরিক অবস্থা, ওষুধের অভ্যাস ও মাত্রা এবং ব্যক্তিগত ধৈর্যের কারণে পানি পানের অভ্যাস একেকজনের শরীরে একেক ভাবে কাজ করে”, বললেন চিকিৎসক গুপ্তা।
একটু সতর্ক করতে দুয়া বলেন, খাওয়া শেষ করা মাত্রই পানি পানে পেট ভরে আইঢাই বোধ হতে পারে। তাতে ঢেকুর হতে পারে অনেকের।
“শরীর আর্দ্র থাকলে বিপাকচক্রের মাইক্রোবায়োম ভালোভাবে কাজ করে। এতে ভালো ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়ার শংকাও কমে আসে।
“শরীরে পানির ঘাটতি হলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। বিপাকচক্রের মাইক্রোবায়োমের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে হজমশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে আসে।”
পানি পানের রীতিনীতি
- ৮x৮ নীতি মনে রাখতে হবে সব সময়। এর অর্থ আট আউন্স পরিমাণ গ্লাসে প্রতিদিন আট বার পানি পান প্রয়োজন; অর্থ্যাৎ দুই লিটার পরিমাণ পানি। বয়স, লিঙ্গ, আবহাওয়া এবং পরিশ্রম ভেদে এই পানির পরিমানে কমবেশি হতে পারে। প্রস্রাবের রঙ হলুদ দেখা গেলে বুঝতে হবে পানি কম খাওয়া হচ্ছে।
- অতিরিক্ত পানি পান করাও শরীরের জন্য ভালো নয়। আবার শরীরে পানি স্বল্পতাও বিপজ্জনক। তাই চাহিদা বুঝে পানি পানের অভ্যাস করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।