Beta
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বেসরকারি ঋণে মাত্র ৬.৫২% প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থ বছর শুরু

ss-Private-sector-credit-growth-051212
[publishpress_authors_box]

নতুন অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে উন্নতি নেই। মাত্র ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থ বছর।

গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শেষ মাস জুন শেষে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমে আসে। মুদ্রানীতিতে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গত ২২ বছরের যে তথ্য রয়েছে, তাতে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে একবার প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমেছিল। এর আগে করোনা মহামারীর মধ্যেও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশের ওপরে ছিল।

এ রকম অবস্থার মধ্যে গত ৩১ জুলাই চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে নীতি সুদহার (রেপো রেট) ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে দেশে বিনিয়োগ খরার মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। আর আগামী বছরের জুনে অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের শেষ মাসে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনও মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির এতো কম লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়নি।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আগের মুদ্রানীতিতে (জানুয়ারি-জুন) বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল তার থেকে ৩ দশমিক ৩১ শতাংশীয় পয়েন্ট কম অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে নতুন মুদ্রানীতিতে (জুলাই-ডিসেম্বর) যে লক্ষ্য ধরা আছে, জুলাইয়ে তার থেকে দশমিক ৬৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কম অর্জিত হয়েছে।

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের নিম্নমুখী ধারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২২ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তা আরও কমেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের চেয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।

আগের মাস জুনে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মে মাসে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। এপ্রিলে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। মার্চে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। তার আগে নভেম্বরে ৭ দশমিক ৬৬, অক্টোবরে ৮ দশমিক ৩০, সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ২০, আগস্টে ৯ দশমিক ৮৬, জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ এবং জুনে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

বিনিয়োগ মানেই অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য, বিনিয়োগ মানেই নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। আর বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে দেয় স্বস্তি। এই সূত্রে বাংলাদেশ এখন আছে অস্বস্তিতে।

শুধু তাই নয়; নতুন বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান নির্দেশক মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানিও আশঙ্কাজনভাবে কমছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ; নিষ্পত্তির পরিমাণ কমেছে ২৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।

গত অর্থ বছরে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য ১৭৪ কোটি ৫৫ লাখ (১.৭৪ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের এই অঙ্ক ছিল ২৩৩ কোটি ৯৯ লাখ (২.৩৪ বিলিয়ন) ডলার।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১৯৮ কোটি ৫১ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নিষ্পত্তির অঙ্ক ছিল ২৬৬ কোটি ১৬ লাখ (২.৬৬ বিলিয়ন) ডলার।

অন্যদিকে গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যা দুই দশক বা ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার খুবই হতাশাজনক; মাত্র দশমিক ৬৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।

সব মিলিয়ে দেশে শিল্প স্থাপনের নতুন উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ স্থবির হয়ে আছে; ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছেন উদ্যোক্তারা।

ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে বেসরকারি খাত। সেই খাতে ঋণপ্রবাহ ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ার অর্থ হলো বিনিয়োগ থমকে যাওয়া। আর বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে না। ফলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

আগের চেয়ে বিনিয়োগ এখন অনেক বেশি দামি হয়ে গেছে। একদিকে বেড়েছে ডলারের দাম, অন্যদিকে ব্যাংক সুদহারও চড়া। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ করতে গেলে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে বাজারে পণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের জন্য এ সময়টাকে মোটেই অনুকূল মনে করছেন না ব্যবসায়ীরা।

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ব্যবসার পরিবেশে অনিশ্চয়তা আর ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদহারের প্রভাবে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার বাড়িয়েই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; উঠেছে ১০ শতাংশে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করছেন না। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের এক বছর এক মাস হতে চলেছে। এখনও দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসেনি। উল্টো দিন দিন অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। টানা চার মাস কমে জুনে এই হার ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমেছিল।

অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার মানে হলো ব্যবসা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে যাবে। সেই সঙ্গে কমবে নতুন শিল্প স্থাপন বা শিল্প সম্প্রসারণের গতি। অবধারিতভাবে তার প্রভাব পড়বে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শুরু থেকেই অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশ উত্তাল হতে শুরু করে। একপর্যায়ে ছাত্রদের আন্দোলনে সহিংস ঘটনায় দেশে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই অস্থিরতা আরও বাড়ে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। সেই পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নতুন নতুন জটিলতা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে দেশে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ- সবার মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২২ সালের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে উঠেছিল। এরপর থেকে কমছেই।

২০২৩ সালের মে মাসে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। তার আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। মার্চে ছিল ১২ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অক্টোবর, সেপ্টেম্বর ও আগস্টে ছিল যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

২০২১ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

করোনা মহামারীর ধাক্কায় কমতে কমতে ওই বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছিল।

এ প্রসঙ্গে সকাল সন্ধ্যা কথা বলেছে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে সঙ্কোচনমুখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করছে। ফলে সব ধরনের ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে।

এক্ষেত্রে ক্ষমতার পটপরিবর্তনেরও একটা প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন এবিবির সাবেক সভাপতি।

মাহবুবুর রহমান বলেন, “যেকোনো দেশের বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হচ্ছে বিনিয়োগ সহায়ক অনুকূল পরিবেশ। বর্তমানে দেশে স্থিতিশীলতা নেই; অনিশ্চয়তা আছে। আগামী দিনগুলো কী হবে, নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা অপেক্ষা করছেন, যার প্রভাবে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দেশে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সংঘাত-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে সবার মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে।

“এমন পরিস্থিতিতে ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী- কেউই ঠিকমতো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছেন না। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করেই চলেছে। এর অংশ হিসেবে নীতি সুদহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে।”

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সবার মধ্যে ভয়-আতঙ্ক। সর্বত্র অনিশ্চয়তা-অস্থিরতা; কোথাও স্বস্তি নেই। এ অবস্থায় বিনিয়োগ করবে কে? ঋণ নেবে কে?”

তিনি বলেন, “করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দর বৃদ্ধি, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ- একের পর এক ধাক্কায় বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের অর্থনীতি চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর লেগেছে আরেক ধাক্কা। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েই চলেছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।”

“সবাই নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার আসার আগ পর্যন্ত দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না,” যোগ করেন আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপেও দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক ওই সংলাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা এলেও রাজনৈতিক খাতে আসেনি। নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল নয়। সবকিছু মিলিয়ে এখনই কেউ বিনিয়োগে ঝাঁপিয়ে পড়বে, এমন প্রত্যাশা কাল্পনিক।”

গভর্নর বলেন, “সরকারের দুটি চ্যালেঞ্জ ছিল। একটি হলো সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আর সংস্কারের এজেন্ডাকে এগিয়ে নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক, তারা যেন এটাকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আরও সুদৃঢ়ভাবে আর্থিক খাতকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।”

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের চেয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগ-জিডিপি অনুপাত, কর-জিডিপি অনুপাত কমেছে। মূল্যস্ফীতি এখনও উচ্চ পর্যায়ে। খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাতে সংস্কারসহ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগ রপ্তানি খাতকে ভালো অবস্থায় রেখেছে এবং বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। কিন্তু বিনিয়োগ হচ্ছে না। কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে না। রাজস্ব আহরণ বাড়ছে না। এগুলো উদ্বেগের বিষয়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত