Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জবাব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : পিআইডি
জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জবাব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : পিআইডি
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতি বাংদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়।”

বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিশ্ববাজারে অস্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্যতা এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পণ্য সরবরাহের সাপ্লাই-চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মূলত ইরান বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রপ্তানি সংশ্লিষ্ট পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে পণ্য তৈরি ও সরবরাহের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় রপ্তানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে।”

মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনা প্রবাজের ওপর নজর রাখতে দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতেও বলেছেন বলে সংসদকে জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো সংঘাত বা সংঘাতের খবর জ্বালানি তেলের বাজারকে প্রভাবিত করে। এতে পণ্যের জাহাজ ভাড়া বাড়ে। যা আমদানি ব্যয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে। সার আমদানি ব্যয়ে প্রভাব পড়ে।”

এক্ষেত্রে বিকল্প উৎস হিসেবে চীন, মরক্কো, তিউনেশিয়া, কানাডা, রাশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি।

অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে এমন আশঙ্কা মাথায় রেখে সরকার অগ্রিম কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী, তুলে ধরেন সেগুলোও।

এর মধ্যে রয়েছে, চাহিদা-যোগানের ভারসাম্য ঠিক রাখা, প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে যেন কোনও সমস্যার মুখোমুখি হতে না হয় সেজন্য এই প্রক্রিয়া সহজ করা, রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহ দিতে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার নিয়ম অব্যাহত রাখা, রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি অভিঘাত সহনশীল করার পাশাপাশি দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখা।

এছাড়া সামনের দিনে সরবরাহ সংকটের ফলে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হলে তা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে অর্থনীতির অগ্রাধিকারমূলক খাত যেমন, কৃষি, এসএমই, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য নেওয়া স্বল্প সুদভিত্তিক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম অব্যাহত রাখা।

এসময় বাংলাদেশ সব ধরনের সংঘাতের বিপক্ষে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টিবিসির কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রশ্নে সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “টিসিবিতে যে লোকবল আছে সেটা দিয়েই তার সরকার মানুষের যেভাবে সেবা করে যাচ্ছে সেটা যথেষ্ট। আর সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। হ্যাঁ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব আছে, বিশেষ করে যারা সীমিত আয়ের তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছে।

“তবে, গ্রামে যারা নিজেরা উৎপাদন করতে পারেন বা করছেন তাদের জন্য খুব একটা কষ্ট নেই, হাহাকারও নেই। তারপরও আমাদের সবসময় প্রচেষ্টা যে দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তার জন্য যথাযথভাবে যেসব পণ্যের প্রয়োজন সেটা দেশে যেমন উৎপাদনের পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি আমদানীও আমরা করে যাচ্ছি। যেটা যত টাকাই লাগুক না কেন। আমরা কিন্তু খরচ করে যাচ্ছি।”

আর এর ফলে, রিজার্ভেও চাপ পড়ছে বলেও উল্লেখ করলেন প্রধানমমন্ত্রী।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালামের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, “জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট। সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।”

এর ফলে ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটুকুই সংযত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য, যেমন- জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বাড়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে সংকট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এ পরিস্থিতেও আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

টাকার বিনিময় হারের সাম্প্রতিক পতন অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য শিগগিরই ক্রলিং পেগ ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। ফলে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।”

লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো আত্মঘাতি

অধিবেশনে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে পদক্ষেপ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পুরক প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের ট্রাফিক পুলিশ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে। তাদের রোদ বা ঝড়বৃষ্টি রোদ বলে কিছু নেই। তারা তাদের কর্তব্য পালন করে যান। কিন্তু মানুষের সচেতনতা না এলে কী করবেন? হেলপার যদি গাড়ি চালায় বা যার লাইসেন্স নেই যে কোন গাড়িতে বসে চালাতে শুরু করে এটা তো বুঝাও দুষ্কর। আর এভাবে গাড়ি চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে। এরা নিজেও মরে, যাত্রীদেরকেও মারে।”

দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, “আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। আমরাও গাড়ি কেনার সুযোগ দিয়েছি মানুষকে। এখন আমাদের গাড়ির সংখ্যা বেশি কিন্তু সেই তুলনায় ড্রাইভারের সংখ্যা খুব কম।

“যাদের লাইসেন্স নেই তারা যেন গাড়ি চালাতে না যান। এটা করতে গেলে তা হবে আত্মঘাতি। এই আত্মঘাতি ব্যবস্থা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সকলে সচেতন ও সোচ্চার হলে এটা অনেকটা কমবে। তারপরও বলব দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনাই। এটা আমাদের দেশ বলে নয়, সারা বিশ্বে অন্য দেশে যান- কী পরিমাণ মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যায়। এটা খুবই দুঃখজনক।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত