Beta
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
Beta
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

নখ নিয়ে নখরা নয়

nailcare-010524-01
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

নিজেকে সুন্দর ভাবে তুলে ধরতে সুন্দর নখেরও কদর রয়েছে। নখ যত্ন করে করে বড় রাখেন অনেকে। বড় নখে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নেলপলিশ দেন। তাতে নখ ও হাতের সৌন্দর্য সবকিছু ছাপিয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নখ শুধু সৌন্দর্য বাড়ায় না; শরীরের সুস্থতার আয়না হলো আঙুলের নখ।

নখের হাল বলে দিতে পারে শরীরে রোগ বাসা বেঁধেছে কি না।

নখের গোড়ায় সাদা ছোপ, নখের কোনা বেড়ে যাওয়া সবই আসলে  স্বাস্থ্য নিয়ে পূর্বাভাস দেয়।                                                                                    

নখের রঙ, আকার, মসৃণতা দেখে বুঝে নেওয়া যায় শরীর সুস্থ আছে কি না।  যদি নখে কোনো কোনা না থাকে, দেবে না থাকে, দাগহীন হয় এবং মলিন না থাকে তাহলে এক কথা নখের স্বাস্থ্য ভালো আছে।

নখ মলিন হলে অথবা বার বার ভেঙ্গে গেলে বুঝতে হবে শরীরের দিকেও নজর দেওয়ার সময় হয়েছে।

ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে গ্লেনেগ্লেস বিজিএস হসপিটালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট বালাকৃষ্ণা জিকে ইনডিয়া টুডের কাছে বলেন, “ত্বক ও শরীরের অনেক সমস্যার উপসর্গ নখে দেখা দেয়।

“বিশেষ করে নখের রঙ বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, নখের বৃদ্ধি কমে যাওয়া হতে পারে কোনো অসুখের লক্ষণ।”

ত্বকের অংশ হলো নখ।

“প্রোটিন কেরাটিনের স্তর নখের গঠনে ভূমিকা রাখে। নখের চারপাশের চামড়া বা কিউটিকলের নিচ থেকে নখের গোড়া বেড়ে ওঠে। নতুন কোষ হওয়া মানে মানে পুরনো বয়সী কোষ শক্ত হয়ে আঙুলে ডগা পেরিয়ে সামনের দিকে বেড়ে যাচ্ছে।”

চিকিৎসা দিতে গিয়ে রোগীর নখের স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করে দেখা হয় বলে জানালেন মনিপাল হসপিটালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের এই সিনিয়র কনসালটেন্ট সুনীল হাভান্নাভার।  

নখের স্বাস্থ্য ভালো আছে কী করে বুঝবেন?

“নখের রঙ খানিকটা গোলাপী দেখাবে, ঠিক মতো বেড়ে উঠবে, কোনো দাগ থাকবে না বা মলিন দেখাবে না এবং গোড়ার দিকে অর্ধ চন্দ্রাকৃতি সাদা দাগ থাকবে।”

তবে অনেক সময় আঘাত পেলে নখে দাগ হতে পারে। পরে নখ বেড়ে উঠতে থাকলে দাগের অংশটুকুও সামনে চলে আসে।  এসময় বাড়তি নখ কেটে ফেলা হলে ধীরে ধীরে দাগটুকুও চলে যায়।

তাই নখে কিছু কিছু দাগ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করলেন বালাকৃষ্ণা জিকে।

তবে মানসিক চাপের ছাপ নখেও দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করলেন তিনি।

“যদি নখের রঙ হলদে বা লাল  হতে থাকে, ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয় তাহলে শরীরের যত্ন নিতে হবে।”

ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক বালাকৃষ্ণা জিকে বলেন, শত রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা, ডিজঅর্ডার এবং রোগের প্রভাব পড়ে নখে।  

পায়ের নখও শরীরের সুস্থতা আর অসুস্থতার কথা বলতে পারে।

“হাতের নখ প্রতি মাসে সাড়ে তিন মিলিমিটার করে বাড়ে। পায়ের নখ খানিক ধীর গতিতে বাড়ে; প্রতি মাসে এক দশমিক ছয় মিলিমিটার।”

হাভান্নাভার বলেন, লোহার ঘাটতি হলে নখের আকৃতি ছড়ানো গোলাকার হয়ে যায়; অনেকটা চামচের মতো।

নখের মাঝে একটু দেবে রেখার মতো দেখালে তাকে বিউ রেখা বলে। ছত্রাক সংক্রমণ, হাইপারথাইরয়েডিজম অথবা ট্রমা থেকেও নখে বিউ রেখা দেখা দিতে পারে।  

জিংকের ঘাটতি হলে নখে সাদা ছোপ পড়তে পারে। আবার যাদের সাইনুসাইটিস ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস আছে তাদের নখ হলদে দেখায়।

যকৃতের রোগে ভুগলে তাদের নখ সাদা হয়ে যায়।

হাতের নখের গোড়ায় চামড়া উঠে যেতে থাকলে ধরে নিতে হবে ভিটামিনের ঘাটতি রয়েছে।

চিকিৎসক বালাকৃষ্ণা জিকে বলেন, “প্রোটিনের অভাব এবং ফলিক এসিড, ভিটামিন বি, সি, কেরাটিন এবং বায়োটিনের অভাব দেখা দিচ্ছে শরীরে তা বুঝতে হবে নখের এমন উপসর্গ দেখে।”

অবশ্য ঠিক মতো হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা না হলেও এমন সমস্যা হতে পারে। আবার হাত অতিরিক্ত শুষ্ক হলেও নখের চারপাশে চামড়া উঠতে পারে।

কারো কারো হাতের নখ কামড়ানোর অভ্যাস রয়েছে। আবারও কেউ খুব ঘন ঘন হাত ধুয়ে থাকেন। এসব কারণে নখের ধারের ত্বক উঠে যেতে পারে।

আর এ সময় যত্ন না নিলে সংক্রমণ হতে পারে।

নখের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করা ঠিক নয়। পাশাপাশি বাড়িতেও একটু সময় নিয়ে নখের পরিচর্যা করা জরুরি।

  • নখ পরিষ্কার ও শুকনা রাখতে হবে। এতে করে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হবে না
  • বারবার পানিতে হাত ভেজালে নখ ভেঙ্গে যেতে পারে। বাসন মাজার সময় এবং কেমিকেল জাতীয় লিকুইড দিয়ে পরিষ্কার করার সময় হাতে গ্লাভস পরে থাকা উচিত
  • হাতেপায়ের নখের পরিচ্ছন্নতায় নিয়মিত ম্যানিকিউর-প্যাডিকিউর করা দরকার এবং নখ সুন্দর করে কেটে রাখতে হবে
  • হাতে ক্রিম ও লোশন দিতে হবে যেন নখ ও নখের ধারের ত্বক আর্দ্র থাকে    

নখের ক্ষতি করে যত বদভ্যাস

  • নখ কামড়ানো ছাড়তে হবে। নখের ধারের চামড়া টেনে টেনে তোলার অভ্যাস থাকে অনেকের; এটিও করা যাবে না
  • নখের কোনা বেড়ে গেলে টেনে তোলা যাবে না; বরং খুব সাবধানে কেটে ফেলতে হবে
  • অতিরিক্ত কেমিকেল রয়েছে এমন পণ্য নখে দেওয়া যাবে না। নেইলপলিশ রিমুভার ভালো ব্র্যান্ডের কিনতে হবে।
  • ধূমপান ছাড়তে হবে; কারণ সিগারেটের অভ্যাসের কারণে নখে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়
  • নিজের তোয়ালে অন্যকে ব্যবহার করতে না দেওয়াই ভালো; এতে করে ছত্রাক সংক্রমণ থেকে নখ সুস্থ রাখা যায়

নেইলপলিশ আর নেইল এক্সটেনশনও কি ক্ষতিকর?

নেইলপলিশে থাকা পাঁচ রকমের উপাদান নখের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। যেমন নেইলপলিশের ফরমালডিহাইডের কারণে ক্যান্সার ও লিউকেমিয়া দেখা দিতে পারে।

নখপালিশের উপাদানের কারণে কখনও কখনও এলার্জিও দেখা দেয়।

আজকাল নেইল এক্সটেনশন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ কাজ যদি নিয়ম মেনে না করা হয় তাহলে নখের ক্ষতি হতে পারে। যদি আকার ঠিক করতে গিয়ে নখের ধারে অতিরিক্ত ঘষা হয়, তারপর নিম্নমানের আঠা লাগিয়ে নকল নখ বসানো হয়, তাহলে আসল নখের ক্ষতি এড়ানোর সুযোগ নেই। এতে করে নখ ভেঙ্গে যেতে পারে বারবার।

আবার ওই নকল নখ তুলে ফেলার সময়ও আসল নখের ক্ষতি হতে পারে। আসল নখ এতে করে পাতলা হয়ে যায় এবং ক্ষয়ে যায়।

নেইল এক্সটেনশনের ফলে ওই নকল নখ অনেক দিন সেঁটে থাকে আসল নখের উপর। এতে করে ভেতরে ভেতরে সংক্রমণ হতে পারে।

এভাবে নকল নখ বসাতে আঠা, জেল, এক্রেলিক ব্যবহার করা যায়। এতে করে কেউ কেউ এলার্জিতেও ভুগতে পারেন।   

মুখ ও শরীরের মতো নখের যত্নে হেলাফেলা করা যাবে না এটাই হলো মূল কথা। নখ মলিন লাগছে? ভেঙ্গে যাচ্ছে অথবা আগের মতো আর বাড়ছে না? তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের কাছে যেয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখুন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত