Beta
বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্বাবিদ্যালয়ের ৩ গবেষক

pshysics
[publishpress_authors_box]

পদার্থবিজ্ঞানে অবদানের জন্য এবার জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরে ও জন এম. মার্টিনিস মিলিতভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। মঙ্গলবার সুইডেনে এই তিন বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি।

তারা এমন এক বিস্ময়কর কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন যা দেখিয়েছে, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দুটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য, যা সাধারণত পরমাণু বা উপপরমাণু জগতের শাসনব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত, তা মানুষের খালি চোখে দেখা যায় এমন বড় এক ব্যবস্থাতেও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। তারা ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ১ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার) পুরস্কার ভাগাভাগি করবেন।

পুরস্কার ঘোষণার সময় নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ওলে এরিকসন বলেন, “আজকের কোনও আধুনিক প্রযুক্তিই কোয়ান্টাম মেকানিক্স ছাড়া কল্পনা করা যায় না। তাদের আবিষ্কার মোবাইল ফোন, ক্যামেরা ও ফাইবার অপটিক কেবলের মতো প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করেছে।”

তিন বিজ্ঞানীর কাজ বর্তমান যুগের কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণের ভিত্তি স্থাপনেও ভূমিকা রেখেছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম হবে, তা প্রমাণ হবে।

কেন তারা এই পুরস্কার পেলেন

এই তিন বিজ্ঞানী ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে পরিচালিত একাধিক পরীক্ষার জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন। তারা প্রথম দেখান যে, মানুষের চোখে দৃশ্যমান একটি ব্যবস্থাতেও দুটি গুরুত্বপূর্ণ কোয়ান্টাম ঘটনা বাস্তবভাবে বিদ্যমান।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতিগুলো একক বা অতি ক্ষুদ্র কণাসমষ্টির অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ও আচরণকে ব্যাখ্যা করে। এর একটি হলো কোয়ান্টাম টানেলিং, যেখানে একটি কণা পর্যাপ্ত শক্তি না থাকা সত্ত্বেও কোনও বাধা অতিক্রম করতে পারে। এতদিন এই প্রক্রিয়াটি কেবল অতি ক্ষুদ্র পরিসরে দেখা গিয়েছিল।

আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, উপপরমাণু কণাগুলো শক্তি নির্গমন ও শোষণ করে নির্দিষ্ট, স্থির পরিমাণে, যাকে বলে শক্তির কোয়ান্টাইজেশন।

তবে কণার সংখ্যা বেশি হলে এই ক্ষুদ্র কোয়ান্টাম প্রভাবগুলো সাধারণত বিলীন হয়ে যায়। (এই কারণেই মানুষ, যারা ট্রিলিয়ন সংখ্যক পরমাণু দিয়ে গঠিত, দেয়ালের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে পারে না।)

এই বছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল বিজয়ীরা প্রথম দেখান যে, কোয়ান্টাম টানেলিংকে একটি “ম্যাক্রোস্কোপিক” ব্যবস্থা, অর্থাৎ এমন একটি বড় সিস্টেমে, যা খালি হাতে স্পর্শ করা  যায় তাও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। তারা তাদের প্রবন্ধে এই ব্যবস্থাটিকে “বিগ এনাফ টু গেট ওয়ানস গ্রুব্বি ফিঙ্গারস” বলে উল্লেখ করেছিলেন। সেই সঙ্গে তারা দেখান, এই ব্যবস্থার শক্তিও কোয়ান্টাইজড বা ধাপে ধাপে নির্ধারিত।

কারা এই বিজয়ী বিজ্ঞানীরা

তিনজনই যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। জন ক্লার্ক ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৬৯ সাল থেকে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত আছেন। বর্তমানে তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুলের এমেরিটাস অধ্যাপক।

মিশেল এইচ. ডেভোরে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। সেখান থেকেই পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইয়েল কোয়ান্টাম ইনস্টিটিউটে অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সের এমেরিটাস অধ্যাপক।

জন এম. মার্টিনিস ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি সেখানে শিক্ষকতা করেন এবং সম্প্রতি গুগলের কোয়ান্টাম এ.আই. টিমের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারার এমেরিটাস অধ্যাপক।

পরীক্ষাগুলোর সময় ড. ক্লার্ক ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক, আর ড. মার্টিনিস তখন পোস্টডক্টরাল গবেষক ও ড. ডেভোরে ছিলেন তার স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।

পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া

পুরস্কার ঘোষণার সময় নোবেল কমিটি ফোনে ড. ক্লার্কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, “সোজা কথায় বলতে গেলে, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বিস্ময়।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের এই আবিষ্কার কোনও একদিন নোবেল পুরস্কারের ভিত্তি হতে পারে, এটা কখনও আমার মাথায় আসেনি।”

গত বছর পদার্থবিজ্ঞানে কে নোবেল পেয়েছিলেন

২০২৪ সালে জন জে. হপফিল্ড ও জিওফ্রি ই. হিন্টন যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তারা এমন কিছু আবিষ্কারের জন্য সম্মানিত হন যা কম্পিউটারকে মানুষের মস্তিষ্কের মতো শেখার ক্ষমতা দিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই বিকাশের মৌলিক ভিত্তি তৈরি করেছে।

এ বছর আর কারা নোবেল পেয়েছেন

সোমবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন মেরি ই. ব্রানকো, ফ্রেড র‌্যামসডেল এবং শিমন সাকাগুচি। তারা শরীরের পারিফেরাল ইমিউন টলারেন্স বা প্রতিরোধ ব্যবস্থার সহনশীলতা প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন, যা ব্যাখ্যা করে কীভাবে আমাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের অঙ্গ ও টিস্যুকে ভুলবশত আক্রমণ করা থেকে নিজেকে রক্ষা করে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত