মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গসহ নানা অভিযোগের ‘সুরাহা না পেয়ে’ সংবাদ সম্মেলন করেছেন সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী পাভেলুর রহমান শফিক খান।
তিনি বলছেন, গত এক সপ্তাহে শাজাহান খানের বিরুদ্ধে রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে ১৫টি অভিযোগ করেছেন , তবে মেলেনি কোনও সমাধান।
সোমবার দুপুরে ১২টার দিকে জেলার নতুন শহর এলাকার নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন শফিক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “শাজাহান খানের ছেলে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আসিবুর রহমান খান তার পিতার কালো টাকা, অবৈধ সম্পদ এবং প্রভাবের জোরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পিতার অবৈধ কালো টাকা দিয়ে তিনি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন। ইতিমধ্যে টাকার প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, নির্বাচনী ব্যবস্থা, সন্ত্রাসী বাহিনী, মাদক ব্যবসায়ী, কিশোর গ্যাং, ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজদের নিয়ে নির্বাচনী ফল নিজের পক্ষে নিতে চেষ্টা করছেন।”
৭ দফা দাবি তুলে ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিক বলেন, তিনি (শাজাহান খান) নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না। স্বশরীরে অথবা মোবাইল ফোনে কাউকে তার ছেলের পক্ষে নির্বাচন করতে নির্দেশ বা অনুরোধ করতে পারবেন না। কাউকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। তার ক্ষমতার প্রভাবে তৈরি হওয়া সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, টেন্ডারবাজ, ভূমিদস্যু, কিশোর গ্যাং সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন কতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ইলেকট্রোরাল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে হবে। ইতিমধ্যে সংঘঠিত সন্ত্রাসী ঘটনা সঠিক তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শফিক আরও বলেন, “প্রতীক বরাদ্দের পরদিন থেকে গত এক সপ্তাহে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বিরুদ্ধে ১৫টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু আমার একটি অভিযোগও নির্বাচন কর্মকর্তা আমলে নেয়নি। কারণ, সেই অভিযোগগুলো সমাধানে দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখিনি।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল হাসান নিটুল খন্দকার।
এই বিষয়ে শাজাহান খানের বাড়িতে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাড়িতে আমি এসেছি। কিন্তু আমি নির্বাচনে কোনও কাজে অংশ নিচিছ না।” এই বলে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকায় জরুরি মিটিং আছে বলে চলে যান।
এই ব্যাপারে মাদারীপুর নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, “চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী পাভেলুর রহমান শফিক খান স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানকে নিয়ে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫টি অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তার অভিযোগ ঢাকায় নির্বাচন কমিশনারের কাছে পাঠিয়েছি। কমিশন থেকে নির্দেশনা পেলে পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
পাভেলুর রহমান শফিক খান সম্পর্কে শাজাহান খানের আপন চাচাতো ভাই। গত উপজেলা নির্বাচনে শাজাহান খানের আপন ভাই ওবায়দুর রহমান খান আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। তখন শফিক খান আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দের পক্ষে নির্বাচন করেন।
নির্বাচনে শাজাহান খানের আপন ভাইয়ের কাছে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম পন্থী নৌকা প্রতীকের কাজল কৃষ্ণ দে হেরে যান। ওই নির্বাচনে পাভেলুর রহমান শফিক খান আওয়ামী লীগের পক্ষে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনে কাজ করেন।
সেখান থেকেই শাজাহান খানের সঙ্গে শফিক খানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তখন থেকেই শফিক খান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে রাজনীতি করতে থাকেন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শাজাহান খান তার বড় ছেলে আসিবুর রহমান খানকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করেন। এরপর পাভেলুর রহনাম শফিক খানও নির্বাচনে লড়তে দাঁড়ান, পক্ষে আছেন বাহাউদ্দিন নাছিমের পক্ষের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।