Beta
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
Beta
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের আগুন

যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওড়াচ্ছে ফিলিস্তিনের পতাকা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওড়াচ্ছে ফিলিস্তিনের পতাকা।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুই সপ্তাহ ধরে চলছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভ দমনে পুলিেশর তৎপরতা সহিংসতায়ও গড়িয়েেছ।

শুরুটা হয় নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে। তার পর একে একে দিকে দিকে ছড়িয়েেছ বিক্ষোভ। পূর্ব উপকূলের নিউ ইয়র্ক থেকে পশ্চিম উপকূলের লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত।

বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় প্রায় ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন জ্বলছে বিক্ষোভের আগুন। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছে।

গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধ, অস্ত্র তৈরি ও সরবরাহকারী এবং যুদ্ধ থেকে লাভবান কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে এই বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে শিক্ষকরাও যোগ দিয়েছে।

কিন্তু দাবি না মেনে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের পুলিশ দিয়ে ধরপাকড় শুরু করেছে। বুধবারও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এপর্যন্ত ১৩০০ জনের মতো গ্রেপ্তার হয়েছে বলে খবর এসেছে।

বুধবার রাতে লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় (ইউসিএলএ) অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরায়েল সমর্থকদের হামলা চালানোর ঘটনাও ঘটে। এসময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে।

যে যে রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চলছে।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, নিউ ইয়র্ক

গত ১৭ এপ্রিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের মাঝখানে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভের সূচনা করেন। এক দিন পরই পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় এবং শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। এতে ইয়েল ও নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এরপর রাজ্যের একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

এদিকে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরাও পুনরায় সংগঠিত হয়ে ফের ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বসে। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডেকে আনে। শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হ্যািমল্টন হল থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। ইসরায়েলি গোলায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ রজব এর নামে এই ঐতিহাসিক এই হলের নামও দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা।

ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে কলাম্বিয়া ও নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে ২৮২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিহত ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ রজবের নামে হ্যামিল্টন হলের নামকরণ করেছিল।

সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরেই সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস। মঙ্গলবার রাতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা ২৮২ জনের মধ্যে ১৭০ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয় সিটি ক্যাম্পাস থেকে।

সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, বিক্ষোভকারীদের সহিংস আচরণ এবং ভাঙচুরের কারণে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ডাকা হয়। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে তারা।

মঙ্গলবার রাতের কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ মঙ্গলবার গভীর রাতে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে মাটির সঙ্গে চেপে ধরেেছন।

মঙ্গলবার গভীর রাতের ওই গ্রেপ্তার অভিযানের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী বুধবার কর্মবিরতি পালন করেন।

ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটি, নিউ ইয়র্ক

দাঙ্গা দমনের মেজাজে থাকা পুলিশ সদস্যরা বুধবার সন্ধ্যায় ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটিতে গ্রেপ্তার অভিযান চালায়। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, এসময় বিক্ষোভকারীদের কোনও প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি।

স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন (এসজেপি) নামে শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ বুধবার সকালেই ফোর্ডহ্যামের ক্যাম্পাসে একটি ছোট তাঁবু স্থাপন করে বিক্ষোভ শুরু করেছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়টির সংবাদপত্র ফোর্ডহ্যাম র‌্যাম জানিয়েছে, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে গ্রেপ্তার এবং সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা পুলিশ ডাকতে বাধ্য হয়েছে। আর ২২ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

শহরটির বিক্ষোভকারীরা বুধবার সন্ধ্যায় চারটি ভিন্ন স্থানে পুনরায় একত্রিত হয়, যার মধ্যে একটি ছিল কলম্বিয়া ও সিটি ইউনিভার্সিটির যৌথ সমাবেশ।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস

বিক্ষোভের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ঘটেছে সবচেয়ে ন্যক্করজনক ঘটনা। বুধবার রাতে ইসরায়েল সমর্থকদের একটি দল ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের একটি ক্যাম্পে হামলা চালায়। তখন সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়, যার মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে নিরাপত্তারক্ষী ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা নিষ্ক্রিয় ছিল।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসম এই সহিংসতাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। লস অ্যাঞ্জেলসের মেয়র কারেন বাস এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সহিংসতার পর শতাধিক শিক্ষার্থী ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের জন্য জড়ো হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পটি উচ্ছেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কলাম্বিয়ায় পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তার হয় শতাধিক শিক্ষার্থী।

উইসকনসিন ইউনিভার্সিটি, ম্যাডিসন

ম্যাডিসনের বিশ্ববিদ্যালয়েও বুধবার সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে একটি বাদে বিক্ষোভকারীদের সমস্ত তাঁবু উচ্ছেদ করলে এবং বিক্ষোভকারীদের তাড়াতে গেলে সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে চারজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়, যার মধ্যে একজনের মাথায় স্কেটবোর্ড দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল।

পুলিশের উচ্ছেদ অভিযানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে নতুন করে তাঁবু গাঁড়ে বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে। তবে গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাত্র চারজনের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটি, টাকসন

টাকসনের অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটিতে মঙ্গলবার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর প্রাণঘাতী নয়, এমন গুলি চালায়। তাতে একজন আহত হন। বুধবার ভোরে চারজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট সি রবিনস বলেছেন, বিক্ষোভ ভাঙার জন্য মরিচের গুঁড়া ও রবার বুলেটের সীমিত ব্যবহার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল বলেও তিনি দাবি করেন।

তবে শিক্ষার্থীরা পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।

টেক্সাস ইউনিভার্সিটি, ডালাস

ডালাসের টেক্সাস ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও বুধবার পুলিশ ডেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যাম্পাস থেকে অন্তত ১৭ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পুলিশি অভিযানের সময় কয়েক ডজন পুলিশ দাঙ্গার মেজাজে ছিল। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের পুরো ক্যাম্প ভেঙে ফেলা হয় এবং পুলিশ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করে।

তবে প্রায় ১০০ জন বিক্ষোভকারী ক্যাম্পাসের অন্য অংশে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

টুলেইন ইউনিভার্সিটি, নিউ অরলিন্স

টুলেইন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে দুদিন আগে বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্প স্থাপন করে প্রতিবাদ শুরু করে। বুধবার বিক্ষোভকারীদের উচ্ছেদে পুলিশ ডাকে কর্তৃপক্ষ। টুলেইন হুল্লাবালু নিউজ সাইট জানিয়েছে, বুধবার ভোরে দুই শিক্ষার্থীসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বাকস্বাধীনতা এবং প্রতিবাদ করার স্বাধীনতা সমর্থন করেন, তবে তারা অনুপ্রবেশ, ঘৃণাসূচক বক্তব্য এবং ইহুদিবিদ্বেষের বিরোধী।

তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত