Beta
সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

বলিউড সিনেমার গান কেন আবেদন হারাচ্ছে?

bollywood-songs
[publishpress_authors_box]

শেষ কবে কোনও বলিউড সিনেমার গান সারাদিন ধরে বারবার শোনার জন্য প্লে-লিস্টে রেখেছেন? সেই গানটি পরের কয়েক মাস জুড়ে আপনার মাথায় ঘুরেছে? অনেক ভেবেও যদি পাঁচটি গানের নামও মনে করতে না পারেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি একা নন।

পঁচিশ বছর বয়সী লেখক এবং সঙ্গীত উৎসাহী তৃষা ভট্টাচার্যকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিল ইন্ডিয়া টুডে। তিনি কারান জোহরের ‘কাভি খুশি কাভি ঘম’ সিনেমার একটি নাচের গান (‘ইউ আর মাই সোনিয়া’) ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারেননি।

তিনি এই গানটির কথা কেন মনে পড়লো সেটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইন্ডিয়া টুডে-কে বলেন, “যখন আপনি এই প্রশ্নটি করলেন, আমার মাথায় প্রথম যে গানটি এসেছিল তা হলো ‘কাভি খুশি কাভি ঘম’ থেকে ‘ইউ আর মাই সোনিয়া’। এমন নয় যে গত কয়েক বছরে বলিউড ভালো গান তৈরি করেনি; শুধু এটাই যে, তাৎক্ষণিকভাবে আমার কোনো গান মনে পড়ছে না।”

সঙ্গীত পরিচালক লালিত পাণ্ডিত এই বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে বলেন, “আজকাল গানগুলো সাধারণত একটি সিনেমার প্রচারের জন্য তৈরি করা হয়। সিনেমা শেষ হয়ে গেলে তাদের নিজস্ব কোনো ভিত্তি থাকে না, যা আগের দিনে ছিল না।”

ইন্ডিয়া টুডে-কে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় এই সংগীত পরিচালক আরও বলেন, “একটি সিনেমার বিপণনের জন্য গানগুলো এতে জুড়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় এমনও হয়েছে, সিনেমার শুটিং ও প্রযোজনা সব কিছু শেষ হওয়ার পর প্রযোজকরা আমার কাছে এসে একটি হিট গানের দাবি করেন। শেষে কিছু একটা রাখার জন্য। সমস্যাটি হলো যখন সন্দেহ (সিনেমার সাফল্য নিয়ে) বাসা বাঁধে। এবং যখন তা ঘটে, তখন আপনি এই পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন।”

পণ্ডিত নিজের সংগীতকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।

“আমার ‘মুন্নি বাদনাম হুয়ি’ (দাবাং থেকে) গানটাই ধরুন। সেই গানটি এভাবেই এসেছিল, পুরস্কারও জিতেছিল এবং এখন আর কেউ এটি নিয়ে কথা বলে না। এটি ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ বা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’- এর সংগীতের মতো নয়। এমনকি ভিকি কৌশলের সুপার হিট গান ‘তওবা তওবা’-ও দিনশেষে একটি মিউজিক ভিডিও। আপনি এটিকে সিনেমার প্রেক্ষাপটে রাখতে পারবেন না। বলিউডে এখন পুরো গানের অ্যালবাম তৈরির চল প্রায় উঠেই গেছে। ফলে সিনেমার কাহিনীর সঙ্গে মিলিয়ে গান তৈরির সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে।”

বলিউড বা হিন্দি চলচ্চিত্রের গল্প বলার বিশেষত্ব ছিল সিনেমার কাহিনীর সঙ্গে সংগীতের সুষ্ঠু ব্যবহার। গানগুলো এমনভাবে সিনেমার অংশে যোগ করা হতো যা গল্পের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি দর্শকদেরও মন জয় করতো। গান-নাচের দৃশ্যগুলোও গল্পের সাথে সুন্দরভাবে মিশে যেত। কিন্তু বর্তমানে, বলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে এই ধারার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। এখন গানগুলো মূলত সিনেমা বিপণনের জন্য ব্যবহার করা হয়, যা সংগীত পরিচালক লালিত পাণ্ডিতের কথারই প্রমাণ দেয়। সিনেমার গল্পে গানের সাবলীল ব্যবহার এখন আর তেমন দেখা যায় না।

বলিউডে অনেক নির্মাতাই মনে করেন, সিনেমার গল্পকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় গান বাদ দেওয়া উচিত। তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মানের সঙ্গেই নেওয়া যায়। তবে হয়তো আমরা বিশাল ভরদ্বাজের কাজ থেকে কিছু শিখতে পারি। তিনি নিজে একজন সুরকার এবং তার সিনেমাগুলোতে গানকে কেবল বিনোদনের উপাদান হিসেবে ব্যবহার না করে, গল্পের গতি বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করেছেন। যেমন, ‘ওমকারা’ (২০০৬) সিনেমার ‘বিড়ি’ গানটির কথাই বলা যেতে পারে। গুলজারের লেখা গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সুনিধি চৌহান ও সুখবিন্দর সিং। গানটি শেষ হওয়ার পরই ভিবেক ওবেরয় এবং অজয় দেবগনের মধ্যে সংঘর্ষের দৃশ্য দেখানো হয়, যা সিনেমার দুঃখজনক পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।

সংগীতকে একটি সিনেমার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে মেশানোর আরও উদাহরণ ভরদ্বাজেরই পরিচালিত ‘হায়দার’ সিনেমা থেকে দেওয়া যেতে পারে। শাহিদ কাপুরের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের ‘বিসমিল’ গানটি আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে। শেক্সপিয়ারের ‘হ্যামলেট’ নাটকের একটি দৃশ্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গানটি তৈরি করা হয়েছিল। গুলজারের লেখা গানের কথাগুলো ছিল প্রতীক ও আবেগপূর্ণ, যা সিনেমার মূল বিষয়বস্তুকে তুলে ধরে। গানের কোরিওগ্রাফি নায়কের রাগ, উদ্বেগ এবং যন্ত্রণা প্রকাশ করে।

প্রবীণ অভিনেত্রী শাবানা আজমিও এর আগে ইন্ডিয়া টুডে-র সঙ্গে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বর্তমান হিন্দি সিনেমার গানের মান নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, এখনকার সিনেমাগুলোর গল্প যেমন দুর্বল, তেমনি গানগুলোও মনে রাখার মতো নয়। “এখনকার গান কি আদৌ মনে থাকে?” তিনি প্রশ্ন তোলেন। “সবকিছু যেন খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। ক্ষণিকের ভালোলাগা থাকলেও, গভীর ভাবনার খোরাক যেন হারিয়ে যাচ্ছে।”

তবে আশার আলো সবটুকু ফুরায়নি। আজাদ- এর ‘আজব ও গরিব’, স্ত্রী টু-এর ‘আজ কি রাত’, অ্যানিমাল সিনেমার সাউন্ডট্র্যাক, কিংবা কালা-র পুরো অ্যালবাম, এই গানগুলো প্রমাণ করে এখনও ভালো গান তৈরি হচ্ছে। বলিউডে প্রতিভা এবং ভালো সংগীত উপাদান- দুটোই আছে। শুধু দরকার সাহসী এবং সৃজনশীল গল্পকারদের।  

(ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে)

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত