Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

অবৈধ সম্পদের প্রমাণ দিতে পারলে দান করে দেব : বেনজীর

বেনজীর আহমেদ।
বেনজীর আহমেদ।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

‘অবৈধ সম্পদের পাহাড়’ গড়ার সংবাদ দেখে নীরবতা ভাঙলেন সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ। দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করলেন তিনি। সেই সঙ্গে বললেন, তার সম্পদ অবৈধ বলে কেউ প্রমাণ করতে পারলে তা দান করে দেবেন তিনি।

শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় ‘আমার কিছু কথা’ শিরোনামে এক ভিডিও বার্তা নিয়ে হাজির হন বেনজীর। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জবাব দেন।

গোপালগঞ্জে সন্তান বেনজীর দুই বছর পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালে অবসর নেন। আইজিপির দায়িত্ব পালনের আগে তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। তারও আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ছিলেন।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় র‌্যাবের যে সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার নাম আসে, তার মধ্যে বেনজীরও ছিলেন।

সম্প্রতি বেনজীরের নামটি আবার আলোচনায় উঠে আসে বসুন্ধরা গ্রুপের সংবাদপত্রগুলোতে একযোগে প্রতিবেদন প্রকাশের পর।

গত ৩১ মার্চ কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয় বিশেষ প্রতিবেদন ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’। কয়েকটি প্রতিবেদনে বিভিন্ন স্থানে ‘অবৈধ সম্পদের’ বিবরণ তুলে ধরা হয়। গোপালগঞ্জে তার রিসোর্টের কথাও বলা হয়। গাজীপুরে বনভূমি দখলের অভিযোগও করা হয়। তার চাকরি জীবনের আয়ের সঙ্গে এই সম্পদের মালিক হওয়া অসঙ্গতিপূর্ণ বলেও দাবি করা হয়।

বসুন্ধরা গ্রুপের আরও দুটি সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিদিন ও বাংলানিউজেও একই শিরোনামে প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হয়।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদন।

তখন তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বেনজীর ফেইসবুকে লিখেছিলেন, “দু একজন অনেক ক্ষিপ্ত, খুবই উত্তেজিত হয়ে এক্ষুনি সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রবন্ধ লিখে ফেলছেন। দয়া করে সামান্য ধৈর্য্য ধরুন। ঘোষণাই তো আছে “কুৎসার কিসসা আভি ভি বাকি হ্যায়।”

কয়েক সপ্তাহ পর শুক্রবার রাতে তিনি ঘোষণা দেন শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি লাইভে আসছেন। তখনই ধারণা করা যাচ্ছিল, সমালোচনার জবাব দিতেই তিনি আসছেন।

আধাঘণ্টার লাইভে বেনজীর বলেন, চাকরিকালীন সময় গত ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি সোশাল মিডিয়ায় একটি গোষ্ঠী কর্তৃক অবিরত এবং ক্রমাগত ‘অপপ্রচার এবং ব্যক্তিগত চরিত্রহননের অপচেষ্টার’ শিকার হয়েছিলেন। অবসরকালে তিনি যখন নিরিবিলি জীবন কাটাচ্ছিলেন, তখন আবার একই রকম ‘অপপ্রচারের’ শিকার হলেন।

বেনজীর দাবি বলেন, তার এবং তার পরিবারের যে সম্পত্তি আছে, তার প্রত্যেকটির বিপরীতে অর্থের উৎসসহ সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স ফাইলে যথাযথভাবে উল্লেখ করা আছে। তিনি ও তার পরিবার নিয়মিতভাবে কর পরিশোধ করে সেরা করদাতার সম্মাননাও পেয়েছেন।

ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ‘প্রকৃত সত্য এবং তথ্য’ তুলে ধরার একটি নৈতিক তাগিদ থেকে লাইভে আসা বলে জানান তিনি।

বেনজীর বলেন, “আমি সরকারি চাকরিজীবী হলেও আমার স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের এই দেশে ব্যবসা বাণিজ্য করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। আমার সরকারি চাকরি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ এবং ভূসম্পত্তি অর্জনে কোনও বাধা নেই। এটি তাদের সাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকার।”

পৈত্রিক এলাকা গোপালগঞ্জে ২০১৪ সাল থেকে পারিবারিক কৃষি খামার ও কৃষিতে বিনিয়োগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিগত ১০ বছরব্যাপী ধীরে ধীরে কৃষিক্ষেত্রে আমাদের পারিবারিক বিনিয়োগ এবং ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে।

“প্রথমে সেখানে আমার পরিবারের সদস্যরা একটি ছোট মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই খামারের আয় থেকে আস্তে আস্তে ব্যবসা বৃদ্ধি করা হয়।”

প্রকাশিত প্রতিবেদনে যেসব সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে, তা কল্পনাপ্রসূত বলে দাবি করেন সরকারি চাকরিতে শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “বিগত ১০ বছর ধরে আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রকাশ্যে এবং সর্বসম্মুখে পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে গোপন বা আড়াল করার কোনও সুযোগ নেই। ঢাকার কাছে বিঘার পর বিঘা জমি নেই। পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির উপর ডুপ্লেক্স বাড়ি নেই। পূর্বাচলে সেই কথিত ডুপ্লেক্স বাড়ির পাশে একই জায়গায় আরও ১০ বিঘা জমিও নেই। মগবাজার কেন? রমনা, সিদ্ধেশ্বরী এর আশপাশে আমাদের ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কিছুই নেই।”

আনন্দ হাউজিংয়ে একটি প্লট কেনার কথা স্বীকার করে বেনজীর বলেন, “কিস্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই টাকা পরিশোধ করি। সেখানে টিনের ছাউনি দেওয়া ঘর আছে। 

“আইজিপি থাকা অবস্থায় পূর্বাচলে ফারুক মার্কেটের পেছনে ১০ কাঠার একটি প্লট কিনেছি, যার বাজার মূল্য ২২ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। বিষয়টি সত্য নয়। ২০০১ সালে রাজউক বরাবর আবেদন করে আমি একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছি। নিজের এবং পারিবারিক অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় আমি প্লটটি বিক্রি করেছি। পূর্বাচলে বর্তমানে আমাদের কোনও প্লট বা বাড়ি কিছুই নেই। রূপগঞ্জে আমাদের কোনও জমি নেই।”

ভাওয়াল রিসোর্ট, বনানীতে ইউনিক রিজেন্সি হোটেল, কক্সবাজারের বেস্ট ওয়েস্টার্ন এবং হোটেল রামাদায় বেনজীরের পরিবারের মালিকানা আছে বলে যে তথ্য প্রচার পেয়েছে, তার পুরোটাই মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

বেনজীর বলেন, “এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনও মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই। পদ্মা ব্যাংক এবং ক্যানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কোনও মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই। সিঙ্গাপুরে অর্ধশত কোটি টাকার সোনার ব্যবসা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জমি কিনেছি মর্মে যা বলা হয়, সেটাও অসত্য।”

ভিডিও বার্তায় নিজের বক্তব্য প্রকাশ নিয়ে তিনি বলেন, এই বক্তব্যের লক্ষ্য কাউকে পাল্টা আক্রমণ বা পাল্টা অভিযোগ কিংবা বিদ্বেষ সৃষ্টি করা নয়, শুধু নৈতিক এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার প্রেক্ষাপটে এই ব্যাখ্যা দেওয়া।

“যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তবে আমার ও আমার পরিবার হাসিমুখে সেই ব্যক্তি কিংবা গ্রুপকে সেই সম্পত্তি বিনা পয়সায় লিখে দেব।”

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে তার স্ত্রী-মেয়েসহ পরিবার সদস্যদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এই পুলিশ প্রধান।

দীর্ঘ চাকরি জীবনে ঘুষ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন দাবি করে বেনজীর বলেন, “আমার অবসরের পর আমাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণের অপচেষ্টা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং দুঃখজনক।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত