Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সাদিক খানের টানা জয়ের নেপথ্যে কী

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

হারের শঙ্কাই বড় ছিল, তবে তা বাস্তবে ফলেনি; ভোটে জিতে টানা তৃতীয়বার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের মেয়র হলেন সাদিক খান।

তার জয়ের কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছিল লন্ডনের উপকণ্ঠে টোরি দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি। কিন্তু শনিবার ভোট শেষে দেখা গেল লেবার পার্টির প্রার্থীরই ঐতিহাসিক জয়।

পৌনে ৩ লাখ ভোটে সাদিক হারিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী টোরি দলের সুসান হলকে। প্রায় ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি, যা তার গতবারের সমানই।

বিজয় ভাষণে সাদিক খান লন্ডনবাসীকে ধন্যবাদ জানানোর সঙ্গে এটাও বলেছেন গত কয়েকমাস ধরে প্রতিপক্ষ শিবির থেকে কী মাত্রায় নেতিবাচক প্রচারের শিকার হয়েছেন তিনি।

সাদিক খানের ভাষায়, তিনি অসত্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন সত্য দিয়ে, ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়েছেন আশা দেখিয়ে, আর বিভাজনের বিরুদ্ধে লড়েছেন একতার জয়গান গেয়ে।

জনাকীর্ণ সমাবেশে লেবার নেতা আশ্বস্ত করেছেন, মেয়র হিসাবে তিনি গোটা লন্ডনবাসীর সেবায় নিয়োজিত থাকবেন, যারা তাকে ভোট দেয়নি, তাদের জন্যও।

টানা তৃতীয় বার মেয়র ভোটে জিতলেন সাদিক খান।

তৃতীয়বার মেয়র প্রার্থী হওয়া সাদিক খানের প্রচারকে আলস্যনির্ভর, শক্তিহীন বলেছিল লন্ডনের কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম। কিন্তু ভোট শেষে দেখা গেল, শেষ হাসি সাদিকই হাসছেন।

কোন কারণে সাদিক খানকেই মেয়র হিসাবে বেছে নিলেন লন্ডনবাসী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমে আসে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা।

‘আরও নিরাপদ, আরও ন্যায্য ও আরও সবুজ’ লন্ডন গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবার ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন সাদিক।

তবে তারা নিরাপদ নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতিতে বড় বাধা ছিল সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, গত এক বছরে লন্ডনে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ২০ শতাংশ বেড়েছে। গত আট বছর ধরেই তা বাড়ছে, আর এই সময়ে সাদিকই ছিলেন মেয়রের দায়িত্বে।

ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগেও ১৪ বছরের এক কিশোরের তলোয়ার হামলায় নিহত হয়, যা গোটা লন্ডনকেই শোকাচ্ছন্ন করেছিল।

ধারণা করা হচ্ছিল, এমন ঘটনা সাদিক খানের ভোটের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আদতে তা ঘটেনি।

সাদিক খানের আরেকটি প্রতিশ্রুতি ছিল ৪০ হাজার বাড়ি নির্মাণের। এই বাড়িগুলো নির্মাণ শেষ হবে আগামী এক দশকে। সাদিক খানের পরবর্তী চার বছরের মেয়াদে নয়।

তার আরেকটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের দুপুরের খাবারের আওতা বাড়ানো। এখন অধিকাংশ স্কুলে বিনা খরচে দুপুরে খাওয়ানো হচ্ছে। তবে সাত বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরাই তা পেয়ে থাকে। সাদিক খান ১১ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদেরও এর আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাতে আগামী ৪ বছরে খরচ ১০০ কোটি পাউন্ড বাড়বে।

প্রতিপক্ষ শিবির সাদিক খানের এই সব প্রতিশ্রুতিকে ভোটারদের মুলো দেখানোর সঙ্গে তুলনা করেছিল। তবে ভোটাররাই ঠিকই আস্থা রেখেছে তার কথায়।

এই সব ছাপিয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ছিল লন্ডনকে আরও পরিবেশবান্ধব নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে সাদিক খানের পরিকল্পনা।    

সাদিক খানের জয়ে তার দল লেবার পার্টিও হাঁফ ছাড়ল।

দেখা যাচ্ছে, আরও ‘গ্রিন’ নগরী গড়ার অভিপ্রায়ে শুধু দলের সমর্থকদেরই নয়, লিবারেল ডেমোক্রেট এবং গ্রিন পার্টির সমর্থকদের ভোটগুলোও নিজের বাক্সে পুরতে পেরেছেন সাদিক।

প্রমাণ হিসাবে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের কথা বলা যায়, যেখানে লিবারেল ডেমোক্রেটরা প্রথম তাদের পার্লামেন্ট আসন জিতেছে। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী সুসান হলের চেয়ে বহু গুণ বেশি ভোট পেয়েছেন লেবার প্রার্থী সাদিক।

তার জয় বুঝিয়ে দিচ্ছে, কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে সড়কে গাড়ির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপের পক্ষেই সাধারণ মানুষ।

এক বছর আগে সাদিক খান একটি বই প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি লন্ডনের বায়ু ্ও পরিবেশ আরও দূষণমুক্তির ওপর জোর দিয়েছেন।

গত বছর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে সাদিক খান বলেন, তার লক্ষ্য মানুষকে জলবায়ু বিষয়ে ‘শিক্ষিত’ করে তোলা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ‘নিট জিরো’তে নামিয়ে আনা।

তিনি এরই মধ্যে পরিকল্পনা সাজিেয়ছেন, লন্ডনে গাড়ি ভাড়া শুধু দূরত্বের ওপরই নির্ধারিত হবে না, এটা নির্ধারিত হবে সময় এবং কতটা কার্বন নির্গমন করছে, তার ওপরও।

এটা মনে হতেই পারে, যানজট নিরসন, বায়ু দূষণ রোধ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সাদিক খানের তৃতীয় মেয়াদের জন্য কঠিন একটি কাজ হবে।

তবে এক্ষেত্রে পরিবেশবাদীদেরও অকুণ্ঠ সমর্থন তিনি পাবেন। তারা এরই মধ্যে বলতে শুরু করেছে, সাদিক খানের এই বিজয় ‘মুক্ত বায়ু’র প্রতিশ্রুতিরই বিজয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত