Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

কেমন হতে পারে হামাস-ইসরায়েল চুক্তি

Gazaa
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে মার্চের ৪ তারিখে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আশা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চলছে এই চুক্তির আলোচনা।

বাইডেন সোমবার বলেছেন, আগামী সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে বলে তিনি আশাবাদী।

“আমার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আমাকে জানিয়েছেন যে আমরা যুদ্ধবিরতির খুব কাছাকাছি। আমরা অনেকটা এগিয়ে এসেছি, তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমি আশা করি, আগামী সোমবারের মধ্যেই আমরা যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে পারব।”

যুদ্ধবিরতি আলোচনা যেভাবে এগোচ্ছে

প্যারিসে গত শুক্রবার কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। তবে ওই আলোচনায় হামাসের কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

আল জাজিরা বলছে, আলোচনার ফলে বন্দি বিনিময়ের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান জানান, ইসরায়েল এবং মধ্যস্থতাকারীরা একটি চুক্তির মৌলিক শর্তাবলী নিয়ে ‘সমঝোতায় এসেছে’।

আরও নিবিড় আলোচনার জন্য কয়েকদিনের মধ্যেই ইসরায়েলের সামরিক প্রতিনিধিদল কাতারে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই মধ্যস্থতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে কাতার। দেশটি চায় অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হোক, সেখানে মানবিক সহায়তা পৌছাক ও দীর্ঘ বছরের অমীমাংসিত সমস্যার সমাপ্তি হোক।

কোন বিষয়গুলো ঝুঁকিতে

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফাতে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনার কথা বলেছেন। সেখানে এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে ১৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। রাফার ভেতরের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, সেখানে বসবাসরত মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।

রাফাতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিমান হামলা করে ইসরায়েল। হামলায় কয়েকজন বেসামরিক নিহত হয়। এরপর গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাফা শহরের আল-ফারুক মসজিদ ইসরায়েলি বিমান হামলায় গুড়িয়ে যায়।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত মাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৩ হাজার ৫২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আরও কয়েক হাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে এবং মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে রাফায় আক্রমণ বন্ধ করতে তেল আবিবকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে (আইসিজে) করা দুটি মামলার কারণে ইসরায়েল আরও চাপে আছে। এর মধ্যে একটি দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা। গাজায় ইসরায়েলকে গণহত্যার অভিযোগে বিদ্ধ করা হয়েছে মামলায়।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার গণহত্যার মামলার শুনানিতে আইসিজে গত মাসে একটি অস্থায়ী আদেশ জারি করে। এতে ইসরায়েলকে গাজায় সব ধরনের গণহত্যামূলক কাজ বন্ধ করতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত সোমবার একটি বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল আইসিজের নির্দেশ মানছে না।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রমজান শুরু হবে। আরব দেশগুলো আশঙ্কা করছে, রমজান মাসে যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে এই অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে।

বাইডেন বলেন, “রমজান আসছে। ইসরায়েল বলছে তারা রমজানের সময় কোনও হামলা চালাবে না। তবে তারা এসময় জিম্মিদের ফিরে পাওয়ার দাবি করছে।”

কোন পক্ষের কী দাবি

হামাস চায়, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা গাজায় তাদের ঘর-বাড়িতে যেন ফিরে যেতে পারে। সংগঠনটি ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো নির্মাণ বা মেরামতের পরিকল্পনার পাশাপাশি গাজায় আরও মানবিক সহায়তার অনুমতি চায়।

একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় বাস্তুচ্যুতদের পর্যায়ক্রমে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেবে। তবে যারা ‘সামরিক চাকরির বয়স’ রয়েছে তাদের ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে না। ইসরায়েলও হামাসের অনুরোধ মেনে নিয়েছে যে উপত্যকায় আরও সাহায্যের অনুমতি দেওয়া হোক।

ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের দাবি করছে। এর মানে হামাসকে নিজেকে নিরস্ত্র করতে হবে। এটি এমন একটি শর্ত যা ফিলিস্তিনি এই গোষ্ঠীর মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কী হবে

যুদ্ধবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তের বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাস মৌলিকভাবে একমত নয়।

হামাস একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায়, যার অধীনে ইসরায়েল গাজা থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করবে। আর নেতানিয়াহু চান হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে। তা না করা পর্যন্ত সামরিক অভিযান শেষ করতে চান না তিনি। এজন্যই রাফা আক্রমণের মূল লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলছেন, যুদ্ধের পর গাজার নিরাপত্তা ও বেসামরিক বিষয়ে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তিনি উপত্যকা শাসনের জন্য ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের বাছাই করতে চান।

তবে গাজা নিয়ে ‍নেতানিয়াহুর যুদ্ধ পরবর্তী পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।

এদিকে ইসরায়েলি গণমাধ্যম দেশটির কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, রমজানে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি হতে পারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত