Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব নিয়ে লড়বে বাংলাদেশ, ভারতে আইনজীবী নিয়োগ

টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে তাঁতে বোনা শাড়ি। ছবি : তাঁতি আর তাঁতের সৌজন্যে
Picture of সিরাজুম মুনিরা

সিরাজুম মুনিরা

টাঙ্গাইল শাড়ির ভৌগোলিক শনাক্তকরণ (জিআই) স্বত্ব ফিরিয়ে আনতে আইনি লড়াই করবে বাংলাদেশ। এজন্য ভারতে আইনজীবী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

সোমবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে লিখিতভাবে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে শতাধিক পণ্যের তালিকা।

রিটকারী আইনজীবী শুক্লা সারওয়াত সিরাজ সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।

এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিবন্ধনের উপযোগী পণ্যের দুটি আলাদা তালিকা তৈরি করে তা ১৯ মার্চের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে তালিকা প্রণয়নে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল।

হাইকোর্টের এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জিআই পণ্যের তালিকা তৈরি করা হয়। যেটি সোমবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দিকীর সই করা আদালতে তালিকা উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ হাইকমিশন, নয়া দিল্লী কর্তৃক ভারতের সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালত/রেজিস্টার বরাবর বাতিল আবেদন দাখিল করার জন্য নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই একটি ল ফার্ম নিয়োগ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের জন্য জরুরি সভা আয়োজন করা হয়। সর্বশেষ সভায় মাসুন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটকে মামলা পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

জিআই পণ্যের তালিকায় ৬৪ জেলার ১৫০টি পণ্য সম্ভাব্য এবং ৩৪টি পণ্য নিবন্ধিত হয়েছে।

নিবন্ধিত ৩৪টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে ঢাকার জামদানি, ঢাকাই মসলিন, টাঙ্গাইলের শাড়ি, পোড়াবাড়ির চমচম, মধুপুরের আনারস, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা ও লটকন, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার মণ্ডা, নেত্রকোনার বিজয়পুরের সাদা মাটি, জামালপুরের নকশিকাঁথা, শেরপুরের তুলশিমালা ধান, কুমিল্লার রসমালাই, চাঁদপুরের ইলিশ, সিলেটের শীতলপাটি, মৌলভীবাজারের আগর ও আগর আতর, বগুড়ার দই, রাজশাহীর মিষ্টি পান, সিল্ক ও ফজলী আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম, ফজলী আম, ল্যাংড়া আম ও আশ্বিনা আম, রংপুরের শতরঞ্জি ও হাড়িভাঙ্গা আম, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বাগেরহাটের বাগদা চিংড়ি, যশোরের খেজুরের গুড়, চুয়াডাঙ্গার ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা ও ভোলা জেলার ইলিশ।

সম্প্রতি কয়েকশ বছরের পুরোনো টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজেদের দাবি করে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় প্রতিবেশী ভারত। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় দেশটির শিল্প মন্ত্রণালয়।

টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের জিআই পণ্য হিসেবে ভারতের স্বীকৃতির পর শুরু হয় বিতর্ক ও সমালোচনা। তখনই বাংলাদেশি জিআই পণ্যের তালিকা করার বিষয়টি সামনে আসে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সব জিআই পণ্যের তালিকা তৈরির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট করেন আইনজীবী সারোওয়াত সিরাজ শুক্লা।

একটি দেশের আবহাওয়া, সংস্কৃতি ও পরিবেশ যদি কোনও একটি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে এবং ভৌগোলিক ও ঐতিহ্যগতভাবে ওই পণ্যগুলোকে যদি দেশটির নিজস্ব হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায় তবে ওই পণ্যকে দেশটির ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যটি উৎপাদনের অধিকার ও আইনি সুরক্ষাও পাওয়া যায়। অন্য কেউ তখন সেই পণ্যের স্বত্ব দাবি করতে পারে না।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রকৃতি থেকে আহরিত সম্পদ, কৃষিপণ্য ও কুটির শিল্পকে এই সনদ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম ও গাইডলাইন অনুসরণ করে বাংলাদেশের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৌলিক পণ্যের জিআই স্বত্ব নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। এর দুই বছর পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি।

আবেদনের ভিত্তিতে প্রথম জিআই স্বীকৃতি মিলেছিল জামদানি শাড়ির।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত