Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
ডিএসকের সংলাপে বক্তারা

চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবা আলাদা করার পরামর্শ

সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে ডিএসকের ৩৫ বছর পুর্তি উদযাপন উপলক্ষে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে ডিএসকের ৩৫ বছর পুর্তি উদযাপন উপলক্ষে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে চিকিৎসকদের সেবা কার্যক্রম এবং এ-সংক্রান্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে আলাদা করার পরামর্শ দিয়েছেন দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার।

সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে ডিএসকের ৩৫ বছর পুর্তি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার।

‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক ওই সংলাপে বারডেমের সাবেক মহাপরিচালক নাজমুন নাহার বলেন, “প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে স্বায়ত্বশাসন দিতে হবে। একইসঙ্গে চিকিৎসার সেবা ও শিক্ষা খাতকে আলাদা করতে হবে।

“যারা চিকিৎসার শিক্ষা ধারায় জীবিকা গড়তে আসবে, তাদের কেবল শিক্ষা নিয়ে থাকতে হবে। এখানে যে নিয়োগ হবে, তা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অধীনে হবে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এই নিয়োগ হবে। এখানে যারা সহকারী অধ্যাপক হয়ে ঢুকবে, তারা অধ্যাপক হয়ে বের হবে। যাতে তারা ওই হাসপাতালটাকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, সেজন্য কাজ করবে।”

তিনি বলেন, “এখন যেটা হয়, বদলির জন্য সারাদিন মন্ত্রণালয়ে তদবির করে বেড়াতে হয়। একারণে হাসপাতালের কোনও উন্নতি হয় না।

“বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তন হলে চিকিৎসকদের মন্ত্রণালয়ে দৌড়াদৌড়ি সয়ংক্রিয়ভাবে কমে আসবে। শিক্ষার ধারায় আসলে তাদের গবেষণা নিয়ে থাকতে হবে। এজন্য তারা প্রণোদনাও পাবেন, যেমনটা বাইরের দেশে দেওয়া হয়।”  

যারা শিক্ষার ধারায় আসবেন, তারা আর বাইরে প্র্যাকটিস করতে পারবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন “তাকে সারা জীবনের জন্য এই ধারায়ই থাকতে হবে জেনেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

নাজমুন নাহার আরও বলেন, “প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বাজেট তারা করবে, বছর শেষে অডিট করবে। যাতে তারা তাদের প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে পারে। বর্তমানে এই কাজের জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকে যে পরিমাণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়তে হয়, সেটা আর পড়তে হবে না।”  

কেবল পুঁথিগত শিক্ষার পরিবর্তে কল্যাণমুখী ও বাস্তবধর্মী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার সংকল্পের কথা বলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার। তিনি বলেন, “এর ফলে শিক্ষার প্রকৃত মানের উন্নয়ন হবে। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো।

“আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, ভাবলেই প্রথমত দেখতে চাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। একটা দেশ এবং জাতি গঠনে শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে সেই দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ আজ নতুন কিছু উদ্ভাবনের মাধ্যমে তার দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। আধুনিক সমাজে শিক্ষার গুরুত্ব দেশের প্রতিটা শ্রেণির মানুষ উপলব্ধি করতে পারছেন।”

ডিএসকের ৩৫ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় সেশনে এই সংলাপের সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পাট বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এ বি এম আব্দুল্লাহ। সংলাপ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ওয়াটারএইড দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক ডা. খায়রুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসকের নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ। এসময় তিনি ডিএসকের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংহতি আরও স্থীতিশীল হবে, পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে এবং বৈষম্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে বলে তাদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।

সংলাপে অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, “আমরা নিজেদের সন্তানের জন্য যে ধরনের উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার কথা ভাবি, সেই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধাদি সকল মানুষের সন্তানের জন্য চালু করতে পারলেই অর্থনৈতিক বৈষম্য কমে আসবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ দেশের সাম্প্রদায়িক সংহতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যালয় পর্যায়ে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করার ওপর জোর দেন। যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সব ধর্মের মৌলিক বিষয়ে পাঠদান করা হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “আমাদের সামনের দিকে এগোতে হলে কেবল অর্থনীতি নয়, রাজনৈতিক অর্থনীতির ওপর জোর দিতে হবে।

“কারণ, বৈষম্য দূর করতে যে সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে, সেগুলো একক কোনও গোষ্ঠির বিষয় নয়, গোটা সমাজকে অগ্রসর করতে হবে। এক্ষেত্রে যারা তৃণমূল পর্যায়ে যারা কাজ করছে, যেমন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে আরও কীভাবে সহায়তা করা যায়- সেদিকে নজর দিতে হবে।”

সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মামুন রশীদ বলেন, “ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে ভাবতে হবে। তা না হলে তারা এই খাত থেকে হারিয়ে যাবে। কারণ, প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।”

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) কীভাবে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্রঋণ সেবাকে সম্প্রসারণ করা যায়- তা নিয়েও ভাবার তাগিদ দেন মামুন রশীদ।

সংলাপে আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক ও প্রকৌশলী উত্তম কুমার রায়, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রাখী ম্রং, নগর দরিদ্র্য বস্তিবাসীর উন্নয়ন সংস্থার (এনডিবাস) সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আক্তার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত