Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

রাহুল গান্ধী কেন আমেথি ছেড়ে রায়বেরেলিতে

রাহুল গান্ধী
রাহুল গান্ধী
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

আমেথি, ভারতের উত্তর প্রদেশের এই আসন কংগ্রেসের জন্য বেশ পয়মন্ত। এই আসনে এমপি ছিলেন সঞ্জয় গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী। ২০০৪ সাল থেকে রাহুল গান্ধী এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন।

তবে ২০১৯ সালে ঘটে ছন্দপতন, রাহুল গান্ধীকে হারিয়ে দেন অভিনয় জগত থেকে রাজনীতির মঞ্চে আসা বিজেপির প্রার্থী স্মৃতি ইরানি।

বাবা-মা-চাচার আসনে এবার রাহুল গান্ধী প্রার্থী হবেন কি না, এবারের লোকসভা নির্বাচনের শুরু থেকেই সবার কৌতূহল ছিল বেশ। শেষে দেখা গেল, আমেথিতে প্রার্থী হচ্ছেন না রাহুল।

বিজেপির মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সঙ্গে লড়তে আমেথিতে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠজন কিশোরী লাল শর্মাকে।

বর্তমান লোকসভায় কেরালার একটি আসন থেকে প্রতিনিধিত্বকারী রাহুল গান্ধী এবার লড়বেন উত্তর প্রদেশেরই আরেকটি আসন রায়বেরেলি থেকে।

রায়বেরেলিও গান্ধীদের পারিবারিক আসন হিসাবে বিবেচিত। এই আসন থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী ফিরোজ গান্ধী। এরপর ইন্দিরা গান্ধী দুবার এমপি হন এই আসন থেকে। বর্তমানে আসনটির এমপি তার পুত্রবধূ ও রাহুলের মা সোনিয়া গান্ধী।

সোনিয়া গান্ধী।

লোকসভা নির্বাচনে যে কয়েকটি আসনের দিকে সবার মনোযোগ থাকে, রায়বেরেলি তার একটি।

আসনটি উত্তর প্রদেশের আওধ অঞ্চলের মধ্যে পড়েছে। এই অঞ্চলের ক্ষয়িষ্ণু সামন্তবাদ নিয়ে ১৯২৪ সালে ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ নামে একটি বিখ্যাত ছোটগল্প লিখেছিলেন মুন্সি প্রেমচাঁদ। সেখানে আওধের সামন্ত প্রভুরা কীভাবে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করেছিল, তা দেখানো হয়।

১৯৭৭ সালে রায়বেরেলিতে ইন্দিরা গান্ধীকে পরাজিত করেছিলেন জনতা দলের নেতা রাজ নারায়ণ। ওই বছরই প্রেমচাঁদের গল্পটি নিয়ে সিনেমা বানান সত্যজিৎ রায়।

মজার বিষয় হলো রাহুল গান্ধীর রায়বেরেলি থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। সেখানে তিনি রাহুলকে ‘শাতির শতরঞ্জ কি খিলাড়ি (সেয়ানা দাবাড়ু) অভিহিত করেন।

তার মতে, রাজনৈতিক কৌশল হিসাবেই আমেথি ছেড়ে রায়বেরেলি থেকে এবার নির্বাচন করবেন রাহুল।
রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবারের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে দলের হয়ে প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে প্রচারের আলোয় রাহুলই থাকছেন।

এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর প্রদেশ কংগ্রেস থেকে গান্ধী ভাই-বোনের ওপর দুটি আসন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বেশ চাপ ছিল। কারণ স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীদের শঙ্কা ছিল, আমেথি থেকে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা কেউ দাঁড়ালে সেখানে বিজেপির স্মৃতি ইরানি সহজেই জয় পাবেন।

সারা ভারতে বিজেপির কাছে কোনঠাসা কংগ্রেসের এই রাজ্যের কর্মীরা আশা করেছিল, দুই ভাই-বোন একত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কংগ্রেসের মিত্র সমাজবাদী পার্টির (এসপি) সঙ্গে জোটবদ্ধ ১৫ আসনে তাদের জেতার সম্ভাবনা বাড়বে।

কিন্তু রাহুল আমেথি ছেড়ে দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি গান্ধী পরিবারের ‘দুর্গ’ কি নিজের জন্য আর নিরাপদ মনে করছেন না তিনি?

আমেথি থেকে দাঁড়ানো কিশোরী লাল শর্মা জাতে হিন্দু ব্রাহ্মণ এবং তিনি সেখানকার অতি পরিচিত মুখ। অনেকেই মনে করছেন, তার পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে ওই আসনের উচ্চবর্ণ, আদিবাসী, দলিত ও মুসলিমদের ভোট টানতে চাইছে কংগ্রেস।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শর্মাকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়ার দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, গান্ধী পরিবার তাদের অনুগতদের পুরস্কৃত করতে চাইছে। দ্বিতীয়ত, আহমেদাবাদের পূর্বাঞ্চল, সুরাট ও ইন্দোরে কংগ্রেসের প্রার্থীরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। এমন অবস্থায় শর্মাই স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের জন্য নিরাপদ।

রাহুলকে হারিয়ে মোদী সরকারের মন্ত্রীও হন স্মৃতি ইরানি।

আমেথি নিয়ে কংগ্রেসের এমন সিদ্ধান্তকে বিজেপি রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, এমন শঙ্কাও করছেন অনেকে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এরই মধ্যে তার নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেসের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও রারবার রাহুল গান্ধীর নির্বাচনী আসন পরিবর্তন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।

এনডিটিভির তথ্য অনুযায়ী, কংগ্রেস আমেথিতে গত ১৮ বারের নির্বাচনে ১৫ বারই জিতেছে।

১৯৬৭ সালে আসনটি গঠনের পর প্রথম নির্বাচনে জয়ী হন কংগ্রেসের বিদ্যাধর বাজপাই। পরেরবারও জয়ের পতাকা ওড়ান তিনি।

তবে ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে জনতা দলের রবীন্দ্র প্রতাপ সিং আসনটি কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়।
১৯৮০ সালে ইন্দিরাপুত্র সঞ্জয় গান্ধী কংগ্রেসের আসনটি পুনরুদ্ধার করেন।

বিমান দুর্ঘটনায় সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর আসনটি নিজের করে নেন তার বড় ভাই রাজীব গান্ধী। ১৯৯১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন ওই আসনের এমপি।

রাজীবের মৃত্যুর পর সতীশ শর্মার মাধ্যমে আসনটি কংগ্রেস ধরে রাখলেও ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে বিজেপির সঞ্জয় সিনহা জিতে যান।

তবে এরপর সোনিয়া গান্ধী আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। পরে ২০০৪ সাল থেকে তিন বার রাহুল জেতেন এই আসনে। ২০১৯ সালে তার জয়রথ থামিয়ে দেন স্মৃতি ইরানি।

অন্যদিকে রায়বেরেলিতে ২০ বারের নির্বাচনে ১৭ বার জিতেছে কংগ্রেস। এর শুরুটা হয় ১৯৫২ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে ফিরোজ গান্ধীর জয়ের মধ্য দিয়ে। তিনি দুবার জিতেছিলেন। এরপরও আসনটি কংগ্রেসেরই ছিল।

১৯৬৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রথম এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। পরের বারও জেতেন তিনি। তবে ১৯৭৭ সালে তাকে হারতে হয়েছিল জনতা দলের রাজ নারায়নের কাছে।

দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হওয়ার আগে ১৯৮০ সালে পুনরায় আসনটি কব্জা করেন ইন্দিরা। তার মৃত্যুর পর কংগ্রেসেরই অরুণ নেহেরু নির্বাচিত হন ওই আসনে।

ভারতের সবচেয়ে পুরনো দল কংগ্রেস এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে।

অশোক সিংয়ের হাত ধরে ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে রায়বেরেলিতে জয় পেয়েছিল বিজেপি। তবে সেটাই শেষ। এরপর আর কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়নি আসনটি।

২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত টানা জিতে আসছেন সোনিয়া। এবার তিনি ছেলেকে ছেড়ে দিলেন পারিবারিক আসনটি।

এনডিটিভির বিশ্লেষণ বলছে, রায়বেরেলিতে কংগ্রেসের শক্তি আমেথির তুলনায় অনেক বেশি। সেখানে বিজেপির দিনেশ প্রতাপ সিংকে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে না। আর দীনেশ ২০১৮ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসেই ছিলেন।

নির্বাচনী ফলের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে আমেথিতে রাহুল গান্ধীর ভোটের হার ছিল ৪৬ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে কমে ৪৩ শতাংশ হয়।

অন্যদিকে, রায়বেরেলির নির্বাচনগুলোতে সোনিয়া গান্ধী ধারাবাহিকভাবে ৫৫-৫৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি ও এর মিত্ররা রায়বেরেলির পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতে জেতে। আর আমেথিতে বিজেপি তিনটি ও এসপি দুটি আসন জিতেছে।

এজন্যই ভারতের নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অনেকে রায়বেরেলিকে কংগ্রেসের জন্য আমেথির তুলনায় নিরাপদ আসন হিসেবে দেখছেন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, রাহুল আবারও আমেথি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেলে পার্টিতে তার অবস্থান দুর্বল হয়ে যাবে। এজন্যই কংগ্রেস তাকে নিরাপদ আসনে সরিয়ে নিয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত