নিয়ন্ত্রণে এসেছে সুন্দরবনের একাংশে লাগা আগুন। ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মিলিত চেষ্টায় ২০ ঘণ্টা পর আগুন নেভানো সম্ভব হয়।
রবিবার দুপুরে বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো সকাল সন্ধ্যাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শনিবার দুপুরে সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুল বুনিয়া এলাকার বনে আগুন লাগে। শুরুতে বনকর্মী ও স্থানীয়রা আগুন নেভানোর কাজে নামেন, পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মোংলা ও মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।
রাত হয়ে যাওয়ায় সেদিনের মতো কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরে রবিবার সকাল ৮টা থেকে আবার শুরু হয় আগুন নেভানোর কাজ।
মিহির কুমার দো বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য আমুল বুনিয়া এলাকার পাঁচ একর জায়গা ঘিরে ফেলা হয়। দুপুর ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
“তবে যেহেতু শিকড় থেকে আগুনের সূত্রপাত হচ্ছে, সেখানে শুকনো ডাল-পাতাও রয়েছে তাই পুরো এলাকা আগামী দুই-তিন দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। অবশ্য যদি এর মধ্যে বৃষ্টি হয়, তাহলে আগুন নতুন করে ছড়ানোর সুযোগ থাকবে না।”
আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে বন সংরক্ষক কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, “তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যেটা হয়েছে শুকনো লতাপাতা পুড়েছে। গাছের বা প্রাণির কোনও ক্ষয়ক্ষতি এখনও নজরে আসেনি।”
তিনি জানান, চাঁদপাই রেঞ্জসহ পাশ্ববর্তী শরণখোলা রেঞ্জের সব বনরক্ষী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। পাশাপাশি কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ, ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিম, ফায়ার সার্ভিস, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড সদস্যরাও আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন।
ভাটার সময় পানি সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, জোয়ারের পর পানি বাড়লে কাজে গতি আসে।
আগুনের ঘটনা তদন্তে চাঁদপাই রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
এছাড়া রবিবার রাকে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের কার্যালয়ে আগুনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরবেন প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেন চৌধুরী।
সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। ২০০২ সালে শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যে আগুন লাগে। এরপর ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭ সালেও বেশ কয়েকবার আগুনের মুখে পড়ে বনের বিভিন্ন অংশ।
২০১০ সালের মার্চে চাঁদপাই রেঞ্জের গুলিশাখালী ক্যাম্প সংলগ্ন পয়ষট্টি ছিলা এলাকায় আগুন লেগেছির। দুইদিন পর সেই আগুন নেভানো যায়। সেসময় প্রায় পাঁচ একর বনের গাছপালা পুড়ে গিয়েছিল।
এরপর ২০১১ সালে একই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্প এলাকায় প্রায় দুই একরজুড়ে বিচ্ছিন্নভাবে আগুন লাগে। প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
সবশেষ ২০২১ সালের ৩ মে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভাড়ানি টহল ফাঁড়ির ২৪ নম্বর কম্পার্টমেন্টে আগুন লাগে। সেসময় পুড়ে যায় প্রায় ২ একর বন।