Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সম্পদের দৌড়ে উপজেলা চেয়ারম্যানরা পেছনে ফেলছেন এমপিদের

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে টিআইবি।
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে টিআইবি।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

পাঁচ বছরে এক উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্পদ এতটাই বেড়েছে যে তিনি এই দৌড়ে সংসদ সদস্যকেও হারিয়ে দিয়েছেন।

তিনি হলেন গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ। এবারও তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন নোয়াখালী-৩ আসনের মামুনুর রশীদ কিরন। আগের পাঁচ বছরে তার অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ।

তাকে ছাড়িয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ পাঁচ বছরে সম্পদ বাড়িয়েছেন ৪ হাজার ২০০ শতাংশের বেশি।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি এই তথ্য পেয়েছে।

ঢাকার ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে প্রথম ধাপের ১৪৪ উপজেলার প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে।

তাতে দেখা যায়, আয় বৃদ্ধিতেও উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা পাল্লা দিয়ে লড়ছেন সংসদ সদস্যদের সঙ্গে।

গত ১৫ বছরে সংসদ সদস্যদের সর্বোচ্চ আয় বৃদ্ধির হার যেখানে ২০ হাজার ১৯২ শতাংশ; সেখানে ১০ বছরে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান রওশন আরা সরকারের সম্পদ বেড়েছে ১৮ হাজার ২৩৩ শতাংশ।

টিআইবির বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাঁচ বছরে উপজেলা চেয়ারম্যানদের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ। আর ৫ বছরে একজন চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ৩৩১৯ শতাংশ, ১০ বছরে এই বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ২৩৩ শতাংশ।

সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪০ শতাংশই আয় দেখিয়েছেন সাড়ে ৩ লাখ টাকার নিচে। অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ প্রার্থী।

২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রার্থীর ঋণ কিংবা দায় রয়েছে। এরমধ্যে সবচে বেশি ১৫২৮ কোটি টাকা ঋণ/দায় রয়েছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আকুদ্দুছ আলীর।

আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। ভোট স্থগিত, মামলা, প্রার্থীর মৃত্যু ও তিন পদে বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ায় আগামী বুধবার ভোট হবে ১৪১ উপজেলায়।

গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ। গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

শতাধিক কোটিপতি ভোটযুদ্ধে

টিআইবির বিশ্লেষণে দেখা যায়, উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৯৪ জন প্রার্থী রয়েছেন, যারা কোটি টাকার সম্পদের মালিক।

১৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৬ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যানসহ তিন পদে প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি ১১৭ জন। মোট প্রার্থীদের ৭ শতাংশ কোটিপতি।

অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে শীর্ষে রয়েছেন গোপালগঞ্জ সদরের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূইয়া। তার সম্পদের পরিমাণ ২৫ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।

১০০ বিঘা জমির মালিক ৮ জন

প্রথম ধাপে যারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্তত আটজনের আইনি সীমার বাইরে অর্থাৎ ১০০ বিঘা বা ৩৩ একরের বেশি জমি রয়েছে।

এক্ষেত্রে শীর্ষে আছেন বান্দরবান সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম জাহাঙ্গীর; তার সম্পত্তির পরিমাণ ৭৪ দশমিক ২৭ একর।

এরপর আছেন যথাক্রমে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫৮ দশমিক ৯৮ একর), লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ (৫১ দশমিক ৭২ একর), রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম (৫১ দশমিক ৬৭ একর), পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী আনিছুর রহমান (৫১ দশমিক ০৮ একর), লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী জামসেদা জাং চৌধুরী (৪০ দশমিক ০৬ একর), কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হাবিব উল্লাহ (৪০ দশমিক ৫ একর), চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আরিফুল আলম চৌধুরী (৪০ দশমিক ০১ একর)।

ব্যবসায়ীদের আধিক্য

চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৬৯ দশমিক ৮৬ শতাংশই নিজেদের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়েছেন। ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রার্থী নিজেদের পেশা হিসেবে কৃষিকাজ উল্লেখ করেছেন।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে আইনজীবী এবং চতুর্থ স্থানে শিক্ষক, যা যথাক্রমে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রায় ৭০ শতাংশই ব্যবসায়ী। কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন ১৬ শতাংশ।

জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে বলে টিআইবির পর্যবেক্ষণ।

গৃহিনী থেকে ভোটের মাঠে বেশি

উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটের মাঠে রয়েছেন ৪৪৭ জন। এর মধ্যে ৫২ দশমিক ২২ শতাংশ প্রার্থী পেশা হিসেবে গৃহিনী উল্লেখ করেছেন। ২৪ শতাংশের বেশি নারী ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।

মামলায় অভিযুক্ত ১৬%

প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটের মাঠে তিন পদে যে ১ হাজার ৬৯৩ জন প্রার্থী রয়েছেন, তার ১৬ দশমিক ৬৪ জন বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত। পাঁচ ভাগের এক ভাগ প্রার্থী আগে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন।

টিআইবির মূল্যায়ন

হলফনামা বিশ্লেষণ করে সম্পদ এবং আয়ের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলোই আসলে পর্যাপ্ত কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ আছে বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।  

তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের বাড়-বাড়ন্তের তথ্যটি জানা গেলেও এনিয়ে অনুসন্ধান হচ্ছে না।

“এই যে তথ্য প্রকাশের সুযোগটা আমরা আইনগতভাবে পেয়েছি বাংলাদেশে, সেটির যে মূল লক্ষ্য সেটা অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা শুধু জানতে পারছি; কিন্তু কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে না। যাদের উপর দায়িত্ব; নির্বাচন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু তাদের ভূমিকা স্বপ্রণোদিতভাবে কখনই পালন করে না।”

টিআইবি আরও বলেছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে; যদিও কমিশনের দেওয়া তথ্যে সংখ্যাটি ২৮ জন বলা হচ্ছে।

সংস্থাটি বলেছে, উপজেলা নির্বাচন দলীয় হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলগতভাবে কোনও প্রার্থী ঘোষণা না করলেও প্রার্থীদের অধিকাংশই ‘আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী’ এবং দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী।

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে তাদের হস্তক্ষেপের শঙ্কার কথাও বলেছে টিআইবি।

বিএনপি এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলটি স্থানীয় প্রার্থীদের আটকাতে পারেনি বলে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত