Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের স্বজন

প্রার্থীদের গা নেই, নেতাদেরও রা নেই

বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সারিয়াকান্দি উপজেলার চেয়ারম্যান পদে ভোটে রয়েছেন।
বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সারিয়াকান্দি উপজেলার চেয়ারম্যান পদে ভোটে রয়েছেন।
Picture of খাইরুল বাশার

খাইরুল বাশার

মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলেই যাচ্ছে আওয়ামী লীগ, কিন্তু তাতে গা করছে না অনেকেই।

দলের নির্দেশ মেনে কেউ কেউ ভোটের মাঠ ছাড়লেও উপজেলায় প্রথম ধাপে এখনও আওয়ামী লীগের নয়জন সংসদ সদস্যের ১৩ জন স্বজন প্রার্থী রয়ে গেছেন বলে পরিসংখ্যান দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।

আওয়ামী লীগ নেতারাও এখন এনিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাইছে না। বারণ করা হয়েছে, একথা তারা বলছেন। কিন্তু না মানলে কী ব্যবস্থা, তানিয়ে কিছু বলছেন না।

স্থানীয় সরকারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কয়েক ধাপে করছে ইসি। প্রথম দফায় আগামী ৮ মে বুধবার ১৪১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে।

চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান এই তিনটি পদে এসব উপজেলায় ভোটের লড়াইয়ে আছেন ১ হাজার ৬৯৩ জন। ১৯৮ জন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

বিএনপি বর্জন করায় উপজেলা নির্বাচন জমিয়ে তোলার চেষ্টায় দলের প্রার্থী রাখেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে প্রতিটি উপজেলায় দলটির একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নেমেছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

তবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থী না হতে নির্দেশ দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

এরপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেল নানা সমালোচনার মুখে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় বলেন, তিনি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে সরে দাঁড়ালেন।

কিন্তু শাজহান খানের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের ছেলেও প্রার্থী রয়ে গেছেন। এমনকি যার মুখ দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্দেশনা আসে, সেই সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাইও মনোনয়নপত্র দাখিল করে বসেন। বাছাইয়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হলেও তিনি আপিল করে ভোটের মাঠে থেকে যাওয়ার আশা করছেন।

টিআইবির তথ্যে দেখা যায়, যে নয়জন সংসদ সদস্যের ১৩ জন স্বজন প্রথম ধাপের ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন, তাদের মধ্যে তিনজন সংসদ সদস্যের ছেলে। এছাড়া রয়েছেন ভাই, চাচাত ভাই, খালাত ভাই, চাচা, ভাতিজা, জামাতা।

ভোটে যাদের স্বজন

মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান ও চাচাত ভাই পাভেলুর রহমান শফিক খান মুখোমুখি ভোটের লড়াইয়ে। মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে দুজনই চেয়ারম্যান প্রার্থী। শফিক খান অভিযোগ করে যাচ্ছেন, ছেলেকে জেতাতে প্রভাব খাটাচ্ছেন শাজাহান খান।

পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আবদুল বাতেন বেড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। পাশাপাশি টুকুর আরেক ভাইয়ের ছেলে আবদুল কাদেরও ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন।

বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছেলে ও ছোট ভাই রয়েছেন প্রথম ধাপের ভোটযুদ্ধে। সারিয়াকান্দি উপজেলার চেয়ারম্যান পদে ছেলে সাখাওয়াত হোসেন এবং সোনাতলা উপজেলায় ছোট ভাই মিনহাদুজ্জামান রয়ে গেছেন ভোটযুদ্ধে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী সাহাদারা সংসদ সদস্য হন।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজনের চাচা সফিকুল ইসলাম বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন। সফিকুলের ভাই দবিরুল ইসলাম আগে সংসদ সদস্য ছিলেন। দবিরুলের পর তার ছেলে সুজন এমপি হন। সুজনের চাচাত ভাই আলী আফসারও রয়েছেন উপজেলা ভোটে।

স্বজন বলতে এমপিদের সন্তান বোঝাবে, একথা বলছেন ওবায়দুল কাদের। তবে তার জেলায় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন।

নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক চৌধুরী ভোট করছেন সুবর্ণচর উপজেলায়। সেখানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনাম সেলিমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।

পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই এস এম নূর ই আলম নাজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাত ভাই আতাউর রহমান ভোট করছেন কুষ্টিয়ার সদর উপজেলায়।

টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের ছোট ভাই হারুন অর রশীদ ভোট করছেন ধনবাড়ী উপজেলায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জামাতা বিশ্ব প্রদীপ অধিকারী ভোট করছেন খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায়।

যা বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না, দলের এমন নির্দেশ স্থানীয় পর্যায়ে উপেক্ষিত হওয়া দেখে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের একেকজন একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন।

ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম প্রথমে এনিয়ে কথা বলতে চাননি। পরে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সরে তো গেছে, বহুলোক সরে গেছে। পাঁচ থেকে ১৫ জন রয়ে গেছে।”

প্রথম ধাপের ভোটের আগে নির্দেশনা দিতে দেরি হয়ে গেছে বলে এমনটা হয়েছে বলে যুক্তি দেখান তিনি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি সকাল সন্ধ্যার প্রশ্নে বলেন, “অনেকবার বলেছি। এ ব্যাপারে আর কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”

দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যারা ভোটের মাঠে আছেন, তাদের সরে দাঁড়ানো উচিৎ ছিল বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কঠোর নির্দেশনা ছিল। তবে তারা এটা করেনি।”

তাদের বিষয়ে ‘সময়মতো’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বাহাউদ্দিন নাছিম। তবে তিনি একইসঙ্গে বলেন, “এটা আসলে কৌশলগত ব্যাপার। অনেকে সরে দাঁড়ানোর সময় পায় নাই। শেষ সময়েও বসে যেতে পারে। এগুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার।”

দল কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না- এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এ বিষয়ে আমরা বলব না। আমাদের দলের মুখপাত্র আছেন ওবায়দুল কাদের, তিনি বলবেন।”

ওবায়দুল কাদের আগেও বলে আসছিলেন, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের ভোটের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত।  

তবে দুদিন আগে তিনি নিজের ভাইয়ের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে বলেন, “সেখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, আমাদের সমর্থন আছে কি না? আমি তার পক্ষে প্রশাসন বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে কি না? সেটাই দেখার বিষয়।”

স্বজনের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এক্ষেত্রে স্বামী কিংবা স্ত্রী ও সন্তান বোঝাচ্ছেন তারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত