Beta
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
Beta
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

রিজেন্ট কি আবার উড়বে

চট্টগ্রামভিত্তিক বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট। পুরোনো ছবি।
চট্টগ্রামভিত্তিক বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট। পুরোনো ছবি।
Picture of আসিফ সিদ্দিকী

আসিফ সিদ্দিকী

আকাশপথে একসময় বেশ ভালো ব্যবসা করে আসা দেশের অন্যতম বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কার্যক্রম এখন বন্ধ।

প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাত্রা শুরুর পরের আট বছর তাদের ব্যবসা ‘দুর্দান্ত’ চললেও কোভিড মহামারীতে আয় কমে যাওয়া এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দেনা মেটাতে না পারাও প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের অন্যতম কারণ।

তবে বর্তমানে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু করতে ঋণ পুনর্গঠনের জন্য ঋণদাতাদের সঙ্গে রিজেন্ট আলোচনা চালাচ্ছে। অন্তত দেনার মূল টাকা পরিশোধের মাধ্যমে ফেরা যায় কিনা- সেই চেষ্টা চলছে। আর অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার করেও সামাধানে আসা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।  

কোভিডের মধ্যে বন্ধ হয় কার্যক্রম 

২০১০ সালের নভেম্বরে যাত্রা শুরু করে প্রতিদ্বন্দ্বী বিমান সংস্থাগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল চট্টগ্রামভিত্তিক বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারতে জমজমাট ব্যবসা করছিল প্রতিষ্ঠানটি।

তবে ২০২০ সালের ২২ মার্চ কোভিড মহামারীর সময় আচমকা উড়াল বন্ধ করে দিলে অবাক হন এভিয়েশন সেক্টরের লোকজন। অবশ্য তারও দুবছর আগে থেকেই একাধিক রুট গুটানো দেখে কিছুটা আঁচ করা যাচ্ছিল।  

কোভিড মহামারীর সময় উড়াল বন্ধ করে পাইলটসহ সব কর্মীদের অবৈতনিক ছুটি দিয়ে নিজেদের গুটিয়ে নেয় রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। একবছর পর ২০২২ সালে নতুন করে উড়ালের আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি আকাশপথে আর ফেরেনি।

একে একে গুটানো হয় দেশের তাদের সব শাখা অফিস। আগেই বন্ধ করা হয় বিদেশে থাকা অফিস।

তাদের সব ফ্লাইট এখন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের একপাশে স্টোর করে রাখা আছে। আর বছরের পর বছর পড়ে থেকে সেগুলো নষ্ট হচ্ছে।

যে কারণে বন্ধ 

কোভিড মহামারীর কারণে দেশে লকডাউন শুরু হলে সড়কের মতো আকাশ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ২২ মার্চ রিজেন্ট এয়ার তিনমাসের জন্য সব ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়।

রিজেন্ট এয়ারওয়েজের তখনকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “করোনার প্রভাবে বিশ্বের বড় বড় এয়ারলাইন্সগুলো তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। আমারা আন্তর্জাতিক যেসব রুটে ফ্লাইট চালাতাম, তা একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। আর এসব রুট কবে চালু হবে তারও নিশ্চয়তা নেই।

“যাত্রীদের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। এ কারণে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৩ মাসের জন্য ফ্লাইট পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ সময়টা আরও কমতেও পারে, আবার বেড়ে যেতেও পারে।”

এয়ারওয়েজটির কর্মীদের বেতনের প্রসঙ্গ এলে তিনি বলেন, “কর্মীদেরও তিন মাসের লিভ উইথ আউট পে’র বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। প্রতি মাসে আমাদের কর্মীদের বেতন বাবদ ৫ কোটি টাকা খরচ হয়, উড়োজাহাজের লিজ বাবদ আরও ১০ কোটি টাকা খরচ হয়। অন্যান্য আরও খরচ তো আছে।

“এ পরিস্থিতিতে আয় না থাকলে আমাদের পক্ষে এসব খরচ চালানো সম্ভব না। এজন্য যে উড়োজাহাজগুলো লিজ নেওয়া হয়েছে সেগুলোও ফেরত দেওয়া হবে।”

রিজেন্ট এয়ার যখন বন্ধ হয়, তার আগ পর্যন্ত তাদের বহরে উড়োজাহাজ ছিল ৪টি। চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুটে কলকাতা, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, মাসকাট ও দোহায় ফ্লাইট পরিচালনা করছিল। আর অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে তাদের ফ্লাইট চলছিল।

কোভিড মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ‘এয়ার বাবল’ চুক্তির আওতায় বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করলেও রিজেন্ট এয়ার ফেরেনি। সেই যে বন্ধ হলো আর ফেরানোর কোনও উদ্যোগ নেয়নি বিমান সংস্থাটির মালিকপক্ষ চট্টগ্রামভিত্তিক হাবিব গ্রুপ।

এখানে বলে রাখা দরকার, এয়ার বাবল হচ্ছে, এক গন্তব্য থেকে আরেক গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট। এর মধ্যে কোনও ট্রানজিট থাকবে না।

বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চে কোভিডের প্রকোপ বাড়ার আগ থেকেই রিজেন্টের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছিল। বিশেষ করে সিভিল এভিয়েশন ও কর কর্তৃপক্ষের পাওনা নিয়ে বেশ জটিলতায় পড়ে বিমান সংস্থাটি। একদিকে ছিল বকেয়া পরিশোধের চাপ, অন্যদিকে উড়োজাহাজের কারিগরি ত্রুটি; সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক রুট কমানোয় আয় কমে যায় বিমান সংস্থাটির। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বিমান সংস্থাটির নিয়মিত পরিচালন কাজে।

২০১৯ সালের আগস্ট থেকেই সংস্থাটির কর্মীদের বেতন দেওয়া অনিয়মিত হয়ে যায়। এরপর বকেয়া বেতন পেতে সিভিল এভিয়েশনের দ্বারস্ত হয় এয়ারলাইনসটির ২৮ পাইলট। এরপর জটিলতা আরও বেড়ে যায়।

কোভিডের প্রকোপ বাড়ায় এক পর্যায়ে সরকার থেকে ঘোষণা আসে লকডাউনের। সেই সুযোগে মালিক পক্ষ বন্ধ করে দেয় এয়ারলাইনসটির কার্যক্রম।

তবে বিমান সংস্থাটিতে বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ পদে একাধিক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হয়েছে, সে কারণে সৃষ্ট অব্যবস্থাপনাও প্রতিষ্ঠানটির ভরাডুবির কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন।  

বিমান সংস্থাটির সাবেক সিনিয়র এক পাইলট বলেন, “এক এয়ারলাইনসে এতজনের খবরদারিত্বই ডুবিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। শেষদিকে এসে একজন দক্ষ সিনিয়রকে সামনে রেখেও আগাতে পারেনি রিজেন্ট এয়ার। বিভিন্নপক্ষের তদবির শুনতে গিয়ে একাধিক কর্মী বসানো হয়েছে চেয়ারে। ফলে তাদের মধ্যে মতের বেশ অমিল দেখা গেছে, যার প্রভাবে রিজেন্ট এয়ারই বন্ধ হয়ে গেছে।

“অথচ যাত্রা শুরুর আট বছর তাদের বিজনেস-সেবা-মুনাফা খুবই দুর্দান্ত ছিল। মুলত নিজেদের ভুল পরিচালনা নীতির কারণেই জনপ্রিয় বিমান সংস্থাটি চালুর ১০ বছর পর একেবারে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হলো।”

বেবিচকে রিজেন্ট এয়ারের বকেয়া ৪০৮ কোটি টাকা

বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এয়ারলাইনসগুলোর কাছে বকেয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় বেবিচক। সেখানে বলা হয়, অপারেশনে থাকা ও বন্ধ হওয়া মোট ৬টি বিমান সংস্থার কাছে সর্বমোট ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে।

এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাছেই বেবিচক পাবে ৬ হাজার ২০৬ কোটি টাকা, যা কর্তৃপক্ষের পাওনার সর্বোচ্চ। আর বর্তমানে ফ্লাইট অপারেশনে থাকা বেসরকারি এয়ারলাইনস নভোএয়ারের কাছে পাওনা ২৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

বন্ধ থাকা ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের বকেয়া ৩৮৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, রিজেন্ট এয়ারের বকেয়া ৪০৮ কোটি ৭ লাখ এবং জিএমজি এয়ারের কাছে ৩৯৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পাবে বেবিচক।

তবে কার্যক্রম চলা ইউএস বাংলার বকেয়ার কোনও হিসাব ওই প্রতিবেদনে ছিল না। 

সেখানে বলা হয়, ওই পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কাছে রিজেন্টের মূল বকেয়া ছিল ১৪১ কোটি টাকা। বছরের পর বছর সারচার্জ বা মাশুল যোগ হয়েছে, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৮ কোটি।  

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মুল বকেয়া ছিল ১ হাজার ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সারচার্জ ও ভ্যাট-ট্যাক্সসহ এই অঙ্ক দাঁড়ায় ৬ হাজার ২০৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

ফলে সারচার্জ কার্যক্রম পরিচালনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছে সংস্থাগুলো।

বকেয়া পরিশোধ করতে না পারা এবং চেক ডিজঅনারের কারণে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালেই মামলা করে বেবিচক।

রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বিভিন্ন বিমানবন্দরের পাওনাসহ সারচার্জ বাবদ ২৮৩ কোটি ৪৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা পায় সিভিল এভিয়েশন। প্রতি মাসে ১ কোটি টাকা করে বকেয়া পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রিজেন্ট।

২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর একটি চেক জমা দেয় এয়ারলাইনসটি। এরপর সেই চেক সোনালী ব্যাংকের কুর্মিটোলা শাখায় জমা দিলে চেকটি ডিজঅনার হয়। এরপর থেকেই মালিকপক্ষ পলাতক রয়েছে। ফলে টাকা পরিশোধের বিষয়টি আর আগায়নি।

হাবিব গ্রুপের মালিকদের সবাই পলাতক

আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড ৪২ কোটি টাকার ঋণখেলাপি মামলা করে। সেই মামলায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান হাবিব গ্রুপের কর্ণধার ও রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী এবং চার পরিচালক- ইয়াসিন আলী, সালমান হাবিব, তানভীর হাবিব ও মাশরুফ হাবিবের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এরপর থেকেই মূলত তারা বিদেশে পালিয়ে যান।

ফেরার গুঞ্জন

এরইমধ্যে গুঞ্জন চলছে রিজেন্ট এয়ারের ফেরা নিয়ে। কিন্তু কীভাবে ফিরবে?

বর্তমান পরিস্থিতিতে রিজেন্ট এয়ার কি আকাশপথে ফিরতে পারবে—এ প্রশ্নটি করা হয় রিজেন্ট এয়ারের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশীষ রায় চৌধুরীর কাছে। আশীষ রায় বর্তমানে বেক্সিমকো গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অবশ্যই ফিরতে পারবে। তবে সুদ-আসলে যত টাকা দেনা হয়েছে- সেগুলো পরিশোধ করে আসা অনেকটা কঠিন হবে। কিন্তু সরকারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে যদি মূল টাকা পরিশোধ করা যায়, তাহলে ফেরাটা সহজ হবে। শুনেছি এ নিয়ে কিছু প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হয়তো জয়েন্ট ভেঞ্চারে কিছু হতে পারে।”

বর্তমানে দেশে একচেটিয়া ব্যবসা করছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস। এই খাতে অন্য কেউ যেন না আসে, সেজন্য তারা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে।

এই বাস্তবতায় রিজেন্ট এয়ার আসলে টিকতে পারবে কি না—জানতে চাইলে আশীষ বলেন, “রিজেন্ট এয়ারের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। ভালো ব্যবসা করেছে। এখন টিকে থাকতে পারবে কি না, সেটি নির্ভর করছে তাদের বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং পরবর্তী নীতির ওপর। যদিও সেটি পরবর্তী ধাপের বিষয়।

“আর করোনার পর তো বিমান ভাড়া অনেক বেড়েছে, যাত্রী বেড়েছে। সামনে তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী পরিবহন আরও বাড়বে। ফলে যাত্রী চাহিদা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। দেশি বিমান সংস্থা সেটি আকৃষ্ট করতে পারছে না, সেটিই বিবেচ্য বিষয়।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচকের সদস্য (অর্থ) এস এম লাবলুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রিজেন্ট এয়ারের ফেরার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে ফিরতে হলে তাকে বকেয়া পরিশোধ করেই অপারেশনে আসতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই।”

মূল টাকা পরিশোধ করে ফেরার সুযোগ আছে কি না— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটি আসলে আমার একার বলার সুযোগ নেই। মূল টাকা নাকি সারচার্জসহ টাকা পরিশোধ করেই ফিরবে, সেটি বোর্ডই সিদ্ধান্ত জানাবে।”

ফেরা নিয়ে যা বললেন গ্রুপের ঘনিষ্ঠজন

রিজেন্ট এয়ারের ফেরার বিষয়ে জানতে এর পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত থাকা ইয়াসিন আলী, সালমান হাবিব ও মাশরুফ হাবিবকে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

তবে গ্রুপটির মালিকদের এক ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে সকাল সন্ধ্যার কথা হয়। তিনি নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, “রিজেন্ট এয়ারকে টেনে তুলতে গিয়েই মূলত বিপর্যয়ে পড়ে বনেদি এই গ্রুপটি। অন্যখাতের লাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছিল রিজেন্ট এয়ারকে। এরইমধ্যে করোনা মহামারীর বিপর্যয়ে পড়ে যায় সংস্থাটি।

“এই সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) অন্যখাতে ঋণ দিতে ঝামেলা করলে পুরো গ্রুপটিই বিপর্যয়ে পড়ে যায়।”

তার মতে, হাবিব গ্রুপের অধিকাংশ ব্যবসায় যুক্ত আছে সর্বাধুনিক স্থাপনা। ২০২০ সালের আগ পর্যন্ত বেশ সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছিল গ্রুপটি। আর গ্রুপের মোট সম্পদমূল্য গ্রুপের দেনার থেকে অনেক বেশি।

“বর্তমানে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু করতে ঋণ পুনর্গঠনের জন্য ঋণদাতাদের সাথে আলোচনা চালাচ্ছি,” যোগ করেন তিনি।

কার্যক্রমে ফিরতে বাধা কোথায়

রিজেন্টের সাবেক সিইও আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, “বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো অপারেশনে টিকে থাকার এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সিভিল এভিয়েশনের অতিরিক্ত মাশুল ও সারচার্জ। একইসঙ্গে দেশি বিমানসংস্থাগুলোর পরস্পরের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।

“আমাদের টার্গেট ঠিক করতে হবে- বিদেশি বিমানসংস্থার যাত্রীকে আমরা কীভাবে নিজেদের বিমানে চড়াব। তা না হলে নতুন বিমান সংস্থা আসলেও টিকতে পারবে না।”

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসছে; সেখানে অনেকগুলো নতুন বিদেশি এয়ারলাইনস আসবে, আর যাত্রীও অনেক বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমরাই যদি সেই যাত্রী টানতে পরিকল্পনা ঠিক না করি, তাহলে টাকাটা কিন্তু বিদেশি বিমান সংস্থাই নিয়ে যাবে। আমাদের সুযোগ হাতছাড়া হবে। এজন্য সিভিল এভিয়েশনকে বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে বসে একটি গাইডলাইন ঠিক করে দিতে হবে।”  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত